OrdinaryITPostAd

কালোজিরা ও কালোজিরা তেলের সকল প্রকার ব্যবহার বিধি

আপনি যদি নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে কালোজিরা খেয়ে থাকেন কিংবা যদি কালোজিরা খাওয়ার চিন্তাভাবনা প্রতিদিন করে থাকেন। কিন্তু প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা গুলো কিংবা খাওয়ার নিয়ম বা এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানেন না তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য।

ছবি

আজকের এই পোস্টটিতে আমরা কালোজিরা খাওয়ার বিভিন্ন হাদিস সংক্রান্ত নিয়ম, কালোজিরা তেলের ব্যবহার বিধি, কালোজিরা তেল চুলের ক্ষেত্রে কতটা উপকারী এবং কালোজিরা খেলে কোন ক্ষতিকর দিক রয়েছে কিনা বা কোন ক্ষতি হয় কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। এছাড়াও আমরা জানতে পারবো কালোজিরা খেলে আদৌ কি আমাদের কোন গ্যাস হয়। আপনি যদি এ সকল বিষয়গুলো জানতে চান তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরুতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচীপত্রঃ কালোজিরা ও কালোজিরা তেলের সকল প্রকার ব্যবহার বিধি 

ভূমিকা

কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ক্ষেত্রে মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। কালোজিরাতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন যেগুলো আমাদের সকল ধরনের রোগ বালাই থেকে দূরে রাখতে এবং আমাদের শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কালোজিরা যে শুধু আমাদের খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে তাই নয় প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক ও কবিরাজি চিকিৎসার ক্ষেত্রে কালোজিরার ব্যবহার হয়ে আসছে।

প্রাচীনকালে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ও কবিরাজি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রধান উপাদান গুলোর মধ্যে কালোজিরা অন্যতম। প্রতি গ্রাম কালোজিরার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি,নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস,কপার ,জিংক ও ফোলাসিন। প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরার নামটি আমাদের কাছে খুব বেশি পরিচিত। বিভিন্ন খাবারে স্বাদ বৃদ্ধি করতে এবং খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়াতে খাবারে কালোজিরা ব্যবহার করা হয়।

প্রাচীনকালে চিকিৎসক্বন মানবদেহের বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কালোজিরা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকতেন। এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রশ্ন উপাদান আমাদের শরীরে সকল ধরনের ঘাটতি পূরণ করে আমাদের সকল প্রকার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি প্রদান করে এবং সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা সৃষ্টি করে এ কারণে কালোজিরা কে বলা হয় মহাঔষধ।

আজকের এয়ার্টেলটিতে আমরা কালোজিরার বিভিন্ন উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম হাদিস সম্পর্কে এবং এর তেলের ব্যবহার বিধিসহ অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয়ার ফলে যে সকল ক্ষতি হতে পারে সে সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। সুতরাং আপনি যদি সকল বিষয়গুলো জানতে চান তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি হয়

কালোজিরা খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে কিংবা সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা সকালবেলা খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি হয় বা কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা  করবো।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে এক চা চামচ পুদিনা পাতার রসের সাথে কমলা রস অথবা এক কাপ গরম চায়ের সাথে এক চামচ পরিমাণ কালোজিরা তেল মিশিয়ে প্রতিদিন দিনে তিনবার করে খেতে পারলে এতে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও কালোজিরার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিন চাম্রিত রক্ত চলাচলে সাহায্য করে আমাদের স্মরণ শক্তিকে আরো বৃদ্ধি করে এবং সকল প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি প্রদান করে।

মাথা ব্যাথা নিরাময়ে

আপনি যদি প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা তেলের সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে ৩ বার করে ২-৩ সপ্তাহ সেবন করতে পারেন তাহলে সকল ধরনের মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এমনকি প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ কালোজিরা তেল মাথায় লাগালে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।

সর্দি সারাতে

আপনি যদি প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা তেল তিন চামচ মধু ও এক দুই চামচ তুলসী পাতার রস একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে খেতে পারেন তাহলে সকল ধরনের জ্বর, ব্যাথা,সর্দি কাশি দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও মাথায় ও ঘাড়ে ব্যথা কিংবা রোগের ক্ষেত্রে কালোজিরার তেল ব্যবহার করে মালিশ করলেও ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।


এছাড়া অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণে যাদের সর্দি বা কফ ভিতরে বসে গেছে তাদের ক্ষেত্রে কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায় এমনকি কালোজিরা বেটে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ভরে তা শুকলেও ভালো ফলাফল আসে।

বাতের ব্যথা দূর করে

যারা দীর্ঘমেয়াদী বাপের ব্যথায় ভুগছেন তারা যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা তেলের সাথে সমপরিমাণ হলুদ মধু এবং এক কাপ রং চায়ের সাথে প্রতিদিন তিনবার করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পান করতে পারেন তাহলে দীর্ঘমেয়াদি বাতে ব্যথা দূর হয়ে যাবে।

চর্মরোগ সারাতে

যাদের চর্মরোগ রয়েছে কিংবা এলার্জির মতো সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা ও এক চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে এ সকল চর্ম রোগ দূর হয়ে যাবে এবং আপনি একটি সুস্থ জীবন ফেরত পাবেন।

হার্টের বিভিন্ন সমস্যায়

যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে কিংবা যারা বিভিন্ন ধরনের হার্টের রোগে ভুগছেন তারা যদি প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে অথবা প্রতিদিন রাতের বেলা খাবার পর ঘুমানোর আগে এক চামচ কালোজিরার তেল এক কাপ গরম দুধের সাথে দৈনিক দুবার করে খেতে পারেন তাহলে হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন আপনি চাইলে কালোজিরার তেল বুকে মালিশ করতে পারেন এতেও ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে 

যাদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা নিম্ন রক্তচাপ এর সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা তেল এবং এক চামচ মধু একসাথে সেবন করে তাহলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের রক্তচাপ হ্রাস পাবে এবং যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও প্রতিদিন সকালে ২ কোয়া রসুন খাওয়ার পর সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করার পর সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধা ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

অর্শ রোগ নিরাময়

যাদের অর্শ রোগ রয়েছে কিংবা যারা এই রোগে অনেক দিন থেকে ভুগছেন তারা যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ তিলের তেল, এক চামচ মধু ও এক চামচ কালোজিরা তেল প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার দীর্ঘমেয়াদি অর্শ রোগ থেকে নিরাময় পাবেন।

শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগ সারাতে

যারা দীর্ঘদিন ধরে হাঁপানি কিংবা শ্বাসকষ্টের মত সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে কালোজিরা একটি মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কালোজিরা তেল এক চামচ এবং এক চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে খুব অল্পদিনের মধ্যেই আপনার শ্বাসকষ্ট হাঁপানি রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। এছাড়াও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালোজিরার গুঁড়ো দিয়ে ভর্তা করে ভাত মেখে খেলেও ভালো উপকার পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে 

ডায়াবেটিস বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সাধারণ একটি রোগ। ছোট বড় সব বয়সের মানুষের এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কিংবা এক চামচ কালোজিরা এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শতভাগ কাজ দেবে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে

যে সকল নারী ও পুরুষ বিভিন্ন ধরনের যৌন সমস্যাই ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে কালোজিরা কিংবা কালোজিরার তেল মহা ঔষধ স্বরূপ। কালোজিরার তেল প্রতিদিন খাওয়ার ফলে কিংবা কালোজিরা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়ার ফলে পুরুষদের স্পার্মের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং স্পার্ম এর গুনগতমান উন্নত হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল নারী ও পুরুষ প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে কালোজিরা কিংবা কালোজিরা তেল খেয়ে থাকে তাদের শরীরে যৌন হরমোন লিবিডো এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে এক চামচ মধু ও এক চামচ কালোজিরা তেল একসাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

অনিয়মিত মাসিক দূর করে

যে সকল মা ও বোনেরা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন কিংবা এখনো ভুগছেন তারা যদি প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে এক কাপ কাঁচা হলুদের রস এবং সম পরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানি সাথে এক কাপ কালোজিরা তেল মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার অনিয়মিত মাসিক এর সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে

যে সকল মায়েরা সন্তানদের বুকের দুধ পান করিয়ে থাকেন তাদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা খুবই ভালো কাজ করে। প্রতিদিন রাতের বেলা শোবার আগে এক কাপ গরম দুধের সাথে যদি ৫-১০ গ্রাম কালোজিরার গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার বুকের দুধের প্রভাব বেড়ে যাবে। এছাড়াও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভর্তা হিসেবে ভাতের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন এতেও খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে

কালোজিরার মধ্যে রয়েছে লিনোলেনিক ও লিনো‌লেইক ফ্যাটিয়াসিট যা আমাদের পরিবেশের প্রখরতা ও স্ট্রেস কমিয়ে আমাদের ত্বককে সুন্দর এবং ত্বকের তাড়ানো ধরে রাখার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত কালোজিরা খেয়ে থাকেন কিংবা কালোজিরার তেল ত্বকে ব্যবহার করে থাকেন তাদের ত্বকের জীবিত কোষগুলো আরো উজ্জ্বল এবং মসৃণ হয় এবং যে কোষগুলো মারা গেছে সে কোষগুলো পুনরায়ন জীবন ফিরে পাই।

১/মধু ও কালোজিরা বেটে পেস্ট করে একসঙ্গে মিশে ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘন্টা পর ধুয়ে ফেললে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

২/আপনার মুখ থেকে যদি অতিরিক্ত পরিমাণ তেল বের হয় কিংবা ব্রণের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে পেস্ট করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ সকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় এবং ব্রণ থেকে মুক্তি মেলে।

৩/আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত শুষ্ক কিংবা রুক্ষ শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে প্রতিদিন কালোজিরা কিংবা কালোজিরার তেলের সাথে তিলের তেল মিশিয়ে আপনার ত্বকে লাগালে অল্প সময়ের মধ্যে আপনার তক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।


গ্যাস্ট্রিক বা আমাশয় নিরাময়

যারা প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে কালোজিরা ও মধু একসাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকে তাদের গ্যাস্ট্রিক বা আমাশয়ের মত সমস্যাগুলো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। আপনারা যদি গ্যাস্ট্রিকের নাম আছে সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা তেল এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করবেন এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

জন্ডিস ও লিভারের সমস্যা দূরীকরণে

যাদের ঘন ঘন জন্ডিস কিং বার লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে এক চামচ কালোজিরার তেল এবং এক চামচ পরিমাণ মধু একসাথে মিশিয়ে খেতে পারে তাহলে জন্ডিস ও লিভারের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়।

রিউমেটিক বা পিঠে ব্যথা দূর করার জন্য

কালোজিরা কিংবা কালোজিরা তেল প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে কিংবা কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে যে যে পুষ্ট উপাদান গুলো প্রবেশ করে সেগুলো আমাদের দীর্ঘমেয়াদী রিউমেটিক কিংবা পিঠে ব্যথার মতো রোগগুলো দূর করতে বা কমাতে সাহায্য করে। তবে কালোজিরা চিবিয়ে খেলো বেশ উপকার পাওয়া যায়।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করতে

দুই বছরের উপর বয়সী সকল শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে কালোজিরার তেল কিংবা কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ দ্রুত হয়ে থাকে। এছাড়াও কালোজিরা খাওয়ার ফলে শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও কালোজিরা ভালো কাজ করে। তবে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে কালোজিরা কিংবা কালোজিরার তেল সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে তবে বাহ্যিক গঠনের জন্য কালোজিরার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

মাথা ব্যথা দূর করতে

যাদের মাইগ্রেন কিংবা দীর্ঘ দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন রাতে অথবা দিনের বেলায় কপালে উভয়েছি চিবুকে কিংবা কানের পার্শ্ববর্তী স্থানগুলোতে কালোজিরার তেল নিয়ে মালিশ করে তাহলে মাইগ্রেন ও বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা সকালবেলা খালি পেটে কালোজিরা ও মধু একসাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকেন তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম খুবই মজবুত হয় এবং সকল ধরনের মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কালোজিরা তেলের ব্যবহার বিধি

এতক্ষণ আমরা সকালে খালি পেটে কালোজিরার তেল খেলে কি হয় সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা কালোজিরা তেলের বিভিন্ন ব্যবহার বিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি কালোজিরা তেলের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

হজমের সমস্যা দূর করে

যারা নিয়মিত কালোজিরা খেয়ে থাকেন কিংবা কালোজিরার তেল খেয়ে থাকেন তাদের হজম এর সকল ধরনের সমস্যা দূর হয়। প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি পেট ফাঁপার মতো সমস্যাগুলো দূর করবে।

লিভারের সুরক্ষা প্রদান করে

যারা নিয়মিত কালোজিরার তেল কিংবা কালোজিরা খেয়ে থাকেন তাদের লিভারের যাবতীয় সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। লিভারের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কালোজিরা কিংবা কালোজিরার তেল ভেষজ হিসেবে কাজ করে। লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন বিষকে ধ্বংস করে লিভারের সুরক্ষায় কালোজিরা কিংবা কালোজিরার তেল খুবই ভালো কাজ করে।

চুল পড়া বন্ধ করতে

যারা নিয়মিত কালোজিরার তেল ব্যবহার করেন কিংবা কালোজিরার তেল খেয়ে থাকেন বা কালোজিরাই চিবিয়ে খেয়ে থাকেন তাদের চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পায় এবং মাথায় কালোজিরা তেল ব্যবহার করার ফলে মাথার ফলি কলগুলো শক্ত হয় এবং চুলের গোড়া মজবুত ও লম্বা হতে সাহায্য করে।

দাঁত ব্যথা দূরীকরণে

যাদের দীর্ঘমেয়াদি ধরে দাঁতের ব্যথা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন কালোজিরা কুসুম গরম পানিতে দিয়ে কুলকুচি করে তাহলে দাঁতের ব্যথা কমে যায় এমনকি দাঁত, মাড়ি, জিব্বা ও তালু বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

শান্তিপূর্ণ ঘুমের সহায়তা করে

যারা রাতের বেলা কিংবা দিনের বেলা কালোজিরা তেল মাথায় ব্যবহার করেন কিংবা মাথায় মালিশ করেন তাদের রাতের বেলা প্রশান্তিময় ঘুম আসে এবং ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পারকিনসন্স রোগের প্রতিকারে

কালোজিরার মধ্যে রয়েছে থাইমোকুইনিন যা পারকিনসন্স ও ডিমনেসিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে উৎপন্ন টক্সিন দূর করে নিউরনের সুরক্ষা প্রদান করে।

চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

যারা মাথায় নিয়মিত কালোজিরার তেল ব্যবহার করেন তাদের মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলো জীবিত করতে এবং মাথার ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী করে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রতিদিন মাথায় কালোজিরা তেল ব্যবহার করার ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া রোধ করে।

কিডনির পাথর ও ব্লাডার

যারা প্রতিদিন কালোজিরার গুঁড়ো সমপরিমাণ মধুর সাথে মিশিয়ে আধা কাপ গরম পানিতে হালকা কুসুম গরম করে খেয়ে থাকেন তাদের কিডনিতে পাথর কিংবা ব্লাডার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

চোখের ব্যাথা দূর করতে

যারা চোখে ব্যথার সমস্যায় রয়েছেন তারা প্রতিদিন রাতের বেলা চোখের উভয় পাশে ও ভ্রুতে কালোজিরার তেল মালিশ করলে চোখে ব্যথা দূর হয়। এছাড়া আপনি যদি প্রতিদিন গাজরের রসের সাথে কালোজিরার তেল সেবন করতে পারেন তাহলে আপনার দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং চোখের সমস্যা দূর হবে।

উচ্চ রক্তচাপ

প্রতিদিন গরম পানিও দুধ কিংবা চায়ের সাথে কালোজিরা গুঁড়ো ব্যবহার করে খেলে উচ্চ রক্তচাপ এর মাত্রা কমে এবং শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও কালোজিরা তেলের সাথে কয়েক কুয়া রসুন মিশিয়ে হালকা গরম করে শরীরে মালিশ করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনারা কালোজিরা নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে শরীরের মালিশ করতে পারেন এতে শরীর ও মন উভয় ভালো থাকবে এবং রক্তচাপের মাত্রা কমে আসবে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে

যাদের ডায়রিয়া সমস্যা হয় কিংবা হয়ে থাকে তারা যদি প্রতিদিন এক কাপ দই ও এক চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে একসাথে খেতে পারেন তাহলে আপনার ডায়রিয়ার সমস্যা তৎক্ষণাৎ দূর হতে বাধ্য।

জ্বর

জ্বরের ক্ষেত্রে কালোজিরা তেল ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

স্নায়বিক উত্তেজনা কমাতে

প্রতিদিন গরম পানীয় চা কফি কিংবা গরম দুধের সাথে যদি কালোজিরা সেবন করতে পারেন তাহলে আপনার মানসিক উত্তেজনা বা স্নায়ু উত্তেজনা কম হবে।

উরুসদ্ধি প্রদাহ

স্থানটি সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় কালোজিরার তেল লাগিয়ে পরদিন সকালবেলা ধুয়ে নিলে খুব ভালো উপকারিতা পাওয়া যায় এবং উরুসদ্ধি প্রদাহ কমে যায়।


আঁচিল

হেলেঞ্চা দিয়ে ভালোভাবে ঘোষের কালোজিরা তেল ব্যবহার করলে কিংবা হেলেঞ্চা মূল আরোক মিশিয়ে নিলেও সব ধরনের আঁচিল থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং সাথে আপনি হোমিও ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

ফোঁড়া সারাতে

কালোজিরার মধ্যে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান যা আমাদের শরীরের মধ্যে পেরে ওঠা অবাঞ্ছিত ফোঁড়া গুলো শরীর থেকে নির্মূল করতে সাহায্য করে। তিলের তেলের সাথে কালোজিরা তেল মিশিয়ে ফোঁড়াতে লাগিয়ে দিলে খুব তাড়াতাড়ি ফোড়া নির্মূল হয়।

ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে

যারা নিয়মিত কালোজিরা কিংবা কালোজিরার তেল ব্যবহার করে কিংবা খেয়ে থাকেন তাদের ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমে আছে যা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং আমাদের ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভালো কাজ করে।

ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে

কালোজিরার মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কোন স্থান কেটে বা ক্ষত হলে সেগুলো দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে

কালোজিরার মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিসেপটিক, আন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোচগুলোকে বাসা বাঁধতে বাধা দেয় এবং ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

কালোজিরার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং শরীরে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ চর্বি জমতে পারে না এবং আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কালোজিরা খেলে কি গ্যাস হয়

আপনারা যারা প্রতিদিন কালোজিরা খেয়ে থাকেন তাদের মনে একটা সাধারণ প্রশ্ন হচ্ছে কালোজিরা খেলে কি গ্যাস হয়। এই প্রশ্নের উত্তর যদি আপনারা জানতে চান তাহলে আমি বলব। না কালোজিরা খেলে গ্যাস হয় না। তবে আপনি যদি গ্যাস্ট্রিক কিংবা বদহজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে কালোজিরা খাওয়ার ফলে আপনার এ সকল সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।

খাবারে একটু এদিক সেদিক হলে আমরা বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যায় ভুগে থাকে যার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পেটে গ্যাস হওয়া কিংবা বদহজমের সমস্যা দেখা দেওয়া। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা বদহজমের সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। আপনি যদি নিয়মিত সকালবেলা খালি পেটে কালোজিরা খেয়ে থাকেন কিংবা খেতে পারেন তাহলে আপনি পেটে গ্যাস হওয়া কিংবা বদহজমের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কালোজিরা খেলে গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ঠিক আছে কিন্তু গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কালোজিরা খাওয়ার কি কোন নিয়ম আছে। জি হ্যাঁ অবশ্যই আছে। তাহলে চলুন গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নি।

যেভাবে খাবেন: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক থেকে দুই চামচ পরিমাণ কালোজিরা পরিষ্কারভাবে ধুয়ে সুন্দরভাবে বেটে সেগুলো হালকা কুসুম গরম পানির সাথে অথবা সমপরিমাণ মধুর সাথে খেলে খুব অল্প দিনের মধ্যেই আপনি পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে শুরু করে পেটে গ্যাস হওয়া কিংবা বদহজমের মতো সমস্যা গুলো থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

কালোজিরা বাটা ও মধু কিংবা পানি একসাথে মিশিয়ে আপনাকে দিনে ২-৩ বার খেতে হবে। এভাবে একটানা ১ মাস খেতে পারলে আপনি খুব দ্রুত ফল পাবেন। এতে করে আপনার পেটের যদি কোন ব্যাকটেরিয়ায় আক্রমণ কিংবা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রেও ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস রোধ করতে কালোজিরা ভালো কাজ করবে। এমনকি আপনার পেটে যে অতিরিক্ত কৃমি হয়ে থাকে সেগুলো দূর করতে সাহায্য করবে।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হাদিস

হাদিস নিয়ম অনুসারে কালোজিরা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা বা উপায় রয়েছে। আজ থেকে আরো কয়েক হাজার বছর পূর্বে ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রে কালোজিরা ও মধুর ঔষধি উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় মেডিকেল সাইন্স এর জনক ইবনে সিনা বলেছেন সকালে খালি পেটে মাত্র ৭ দিন কালোজিরা ও মধু খেলে শরীরে আশ্চর্য কিছু উপকার পাওয়া যায়।

প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা আমরা জানি কালোজিরা ও মধু অত্যন্ত উপকারী কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জানে না। যে কিভাবে এই দুটি খাবার একসাথে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। আজকের এই পোস্টটিতে আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব এমনকি কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হাদিস সম্পর্কে এই পোস্টটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।কালোজিরা রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান অর্থাৎ শরীরের রোগ জীবাণু সরাসরি ধ্বংস করার উপাদান। এই উপাদানটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ রোগ বা ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ করে।

কালোজিরাতে রয়েছে এন্টিবায়োটিক ও এন্টিসেপটিক উপাদান এবং মধুতে রয়েছে ৪৫ টিরও বেশি খাদ্যগুণ তবে মধুতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। মধুর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান দেহকে যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক গুণ পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মধুতে রয়েছে আরো গুনাগুন। মধু হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট কমাতে খুব দ্রুত কাজ করে এবং কালোজিরার মধ্যেও এই একই গুণ রয়েছে।

হাদিস অনুসারে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন সকালে কালোজিরার ২১টি বীজ ও এক চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে সেবন করতে হবে। অনেকে কিন্তু কালোজিরা তেল খান যারা কালোজিরা তেল খান তাদেরকেও বলে রাখি সকালবেলা খালি পেটে পানি পান করার ৩০ মিনিট পরে কালোজিরা ও মধুর মিশ্রণ সেবন করতে হবে। এই নিয়মে আপনি প্রতিদিন কালোজিরা খেতে পারেন তবে যদি শরীরে কোন ব্যাথা থাকে তবে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি রাতের বেলা ব্যথা গ্রস্ত স্থানে কালোজিরার তেল দিয়ে মালিশ করতে পারেন।

এছাড়াও যারা কালোজিরা চিবিয়ে খেতে পারেন না তারা এক চামচ পরিমাণ কালোজিরা তেল খেতে পারেন। যাদের ডায়বেটিস নেই তারা এক গ্লাস গরম দুধের সাথে হাফ চামচ কালোজিরা গুড়া এবং এক চামচ মধু এক সাথে মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত ও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা মধু নামিছি শুধু গরম দুধ এর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খেতে পারেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন তোমরা নিয়মিত কালোজিরা খাও কারণ কালোজিরাতে রয়েছে সকল রোগ থেকে বাঁচার জন্য কার্যকারী উপাদান। কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের জন্য মহা ঔষধ স্বরূপ।

চুলে কালোজিরা তেলের উপকারিতা

কালোজিরার তেল চুলের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চুলের মেলানিন নামক উপাদানটি কম হতে থাকে যার ফলে চুল সাদা হতে থাকে। যারা নিয়মিত কালোজিরার তেল ব্যবহার করেন তাদের চুল দীর্ঘদিন ধরে পাকা থাকে চুলের খুশকি দূর হয়, চুলের গোড়া মজবুত রাখতে এবং মাথার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কালোজিরা তেল খুব ভালো কাজ করে।

এছাড়াও অল্প বয়সে যাদের চুল পাকা সমস্যা দেখা দিয়েছে তারা যদি প্রতিদিন কালোজিরার তেল ব্যবহার করেন তাহলে খুব অল্পদিনের মধ্যে আপনার পাকা চুল লম্বা সুন্দর উজ্জ্বল ও কালো রঙের হবে।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

১/স্বাস্থ্যকর চুল ও কালো চুলের জন্য প্রতিদিন কালোজিরার তেল সামান্য পরিমাণ গরম করে চুলের গোড়ায় কিংবা মাথার ত্বকে ব্যবহার করে মাসাজ করুন এবং ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

২/কালোজিরার তেলের সাথে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করতে পারেন এই দুই মিসটেল একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে মাসাজ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

৩/আপনি চাইলে ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে পারেন এতে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল কুচকুচে কালো হয়।

৪/এছাড়াও যাদের মাথায় খুশকির সমস্যা রয়েছে তারা যদি একটি লেবুর রসের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ পরিমাণ কালোজিরা তেল একসঙ্গে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করে এবং কয়েক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলে এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে মাথার খুশকি ও চামড়ার বিভিন্ন ধরনের রোগ দূর হবে।

৫/এছাড়াও চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করতে আধা কাপ নারকেল তেলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ কালোজিরা তেল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় কিংবা মাথার ত্বকে ব্যবহার করে এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললে রেগুলার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

কেন ব্যবহার করবেন
  1. অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করতে
  2. চুলের ভাঙ্গা বা আগা ভাঙ্গা রোগ রোধ করতে
  3. চুলে রুক্ষতা দূর করে চুলকে উজ্জ্বল ও ঝলমলে রাখতে
  4. অকালপক্ক চুল এর সমস্যা থেকে বাঁচতে
  5. চুলের গোড়ায় সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে
  6. চুল লম্বা করতে
  7. চুলকে স্বাস্থ্যকর ও দীর্ঘদিন ধরে সুরক্ষিত রাখতে

প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়

প্রতিটি খাবারে যেমন কিছু উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। প্রতিটি খাবার আমাদের পরিমাণ মতো নিয়মমাফিক মেনে সঠিক পরিমাণ খাওয়া উচিত। আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ খেয়ে ফেলেন কিংবা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তাহলে সেটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারি।

কালো জিরার খাওয়ার হাজারো উপকারী গুনাগুন থাকলেও অতিরিক্ত পরিমাণ কালোজিরা আপনার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণ কালোজিরা খাওয়ার ফলে আপনার যে সকল ক্ষতি হয় সেগুলো এক নজরে দেখে নিন।
  1. অতিরিক্ত ত্বক জ্বালাপোড়া
  2. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় বুক জ্বালাপোড়া করা
  3. কিডনির বিভিন্ন ধরনের রোগ
  4. ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া
  5. গর্ভবতীদের গর্ভপাতের সম্ভাবনা
  6. পেটে ব্যথা কিংবা টানটান হওয়া
  7. রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটা
  8. রক্তে শর্করার পরিমাণ অতিরিক্ত কমে যাওয়া
  9. অতিরিক্ত কালোজিরা তেল ব্যবহারে ত্বকে এলার্জি সৃষ্টি হওয়া
বিশেষ করে যারা তিন মাসের অধিক সময় ধরে প্রতিদিন কালোজিরা খেয়ে আসছেন তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি কালোজিরার উপকারিতা পেতে চান তাহলে আপনাকে প্রতিদিন নিয়মমাফিক খাওয়া প্রয়োজন এবং মাঝে মাঝে কিছুটা গ্যাপ রেখে খাওয়ার চেষ্টা করবেন এতে আপনি কালোজিরার সকল ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাবেন।

লেখক এর মন্তব্যঃ কালোজিরা ও কালোজিরা তেলের সকল প্রকার ব্যবহার বিধি 

আপনার স্বাস্থ্য কে ভালো রাখতে এবং সুস্থ ও সবল থাকে প্রতিদিন নিয়মমাফিক পরিমাণ মত কালোজিরা খেতে পারেন। তবে যারা বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে থাকেন বিভিন্ন রোগের কারণে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক কালোজিরা খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এই পোস্টটি সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। 

পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুবান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন।আপনার যদি কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই জানাতে পারেন। এরকম আরো শিক্ষনীয় বিষয় জানতে অবশ্যই আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করবেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪