গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার সকল কারণ সমূহ
গর্ভাবস্থা প্রত্যেক নারীর ক্ষেত্রে এক নতুন অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা বয়ে নিয়ে আসে। এর পাশাপাশি গর্ভধারণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। যেমন গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ, গর্ভাবস্থায় পেটে ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ, গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের তলপেট ব্যথা হয় কেন, গর্ভাবস্থায় তলপেট ভারী লাগে কেন, গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ।
এ সকল যাবতীয় প্রশ্নগুলো গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের মনে জাগ্রত হয়।আজকের এ আর্টিকেলটি যদি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনার গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথার যাবতীয় কারণ এবং এগুলো থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন। তাই আপনিও যদি প্রথমবার গর্ভধারণ করেন কিংবা আপনার পরিবারের কেউ যদি প্রথমবার গর্ভধারণ করে থাকে তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধু আপনাদের জন্য। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচীপত্রঃগর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যাথা হওয়ার সকল কারণ সমূহ
- ভূমিকা
- গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
- গর্ভাবস্থায় পেটের ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
- গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন
- গর্ভাবস্থায় তলপেট ভারী লাগে কেন
- গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ
- লেখকের মন্তব্যঃগর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যাথা হওয়ার সকল কারণ সমূহ
ভূমিকা
গর্ভধারণ বা গর্ভাবস্থা প্রত্যেক নারীর মনে গভীর আনন্দ ও প্রত্যাশায় ভরা একটি যাত্রা। অনাগত সন্তান যেন সুস্থতার সাথে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করতে পারে তার জন্য একজন মা সব ধরনের চেষ্টা করেন। একই সাথে তারা বিভিন্ন ধরনের নিয়ম কানুন মেনে চলেন।
গর্ভাবস্থায় সন্তানের সুস্থতার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক তারা সকল ধরনের নিয়ম অনুসরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারপরেও তাদের মনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক হয়। যার কারণে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা দুশ্চিন্তা করে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথার বিভিন্ন কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটির শুরুতে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় পেটের বাম দিকে ব্যথা হলে সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ গর্ভাবস্থায় পেটের বাম দিকে ব্যথা হওয়া অনেক বড় ধরনের রোগের লক্ষণ হতে পারে। পেট একটি স্বতন্ত্র অঙ্গ নয় প্লীহা বা লিভারের মতো নয়। পেটের সকল অঙ্গগুলি একসঙ্গে থাকে। এর কয়েকটি অঙ্গ যা প্রতিটি কার্যকলাপ ব্যর্থ হতে পারে এবং ব্যথা হতে পারে।
এজন্য পেটের কোথায় ব্যাথা হচ্ছে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা একটু কঠিন। কারণ এটি ডায়গনস্টিক স্টাডিজ বহন করে এবং নির্দিষ্ট পরীক্ষা ছাড়া পেটির ব্যথা বোঝা সম্ভব নয়। যদি গর্ভাবস্থায় বামদিকের চিত্রযুক্ত ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এই ব্যথা যদি আধ ঘন্টার মধ্যে না থামে তাহলে অবিলম্বে অ্যাম্বুলেন্স বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
চিকিৎসকরা সাধারণত পেটকে ৪টি ভাগে বা ৪ অংশে বিভক্ত করে থাকেন। যার প্রতিটি অংশে কিছু নির্দিষ্ট অঙ্গ রয়েছে। যেমন:
- ডান উপরে চতুর্ভুজ
- উপরের বাম ক্যাপাসার্ট
- নিম্নডান চতুর্ভুজ
- নিম্ন বাম চতুর্ভুজ
এই প্রতিটি অংশে নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ রয়েছে। গর্ভাবস্থায় এর মধ্যে যেকোনো এক জায়গায় ব্যাথা হলে বাম দিকে ব্যথা অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে গর্ভাবস্থায় পেটের বাম দিকে ব্যথা হওয়ার কারণ কি? চিকিৎসকদের মতে এর ৪ টি কারণ রয়েছে।
১/গর্ভাবস্থায় পেটের বাম দিকে ব্যথায় নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন বমি বমি ভাব হতে পারে এছাড়াও ক্যান্সার কিংবা আলসারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২/গর্ভাবস্থায় বাম পাশে আমাদের ডায়াফ্রাম অবস্থিত। এই ডায়াফ্রামে যদি হর্নিয়ার উপস্থিতি থাকে তাহলে ডায়াফ্রাম মেটিক হর্নিয়তা তা হতে পারে। এ কারণেও গর্ভাবস্থায় পেটের বাম দিকে ব্যথা অনুভূত হয়।
৩/অগ্নাশয় আমাদের পেটের বাম দিকের ওপর অবস্থিত। এই অঙ্গের প্রবাহের কারণে একজন গর্ভবতী মহিলার মাঝখানে বা বামে বা ডানে দিকের পেটে ব্যথা অনুভব করতে পারে।
৪/আবার গর্ভস্থ ভ্রুনের ক্রমবর্ধমান আকারের কারণে পেটের বাম দিকের উপরের অংশে ব্যাথা অনুভব হয়। এবং ধীরে ধীরে এ ব্যথা কমেও আসে।
৫/এছাড়াও গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে যখন জরায়ুতে নিষিদ্ধ ডিম্বাণু রোপিত হয় তখন মহিলারা পেটের বাম পাশে ব্যাথা অনুভব করে। যদিও এন্ডোমেট্রিওসিস এবং ডিম্বাশয়ের সিস্টগুলি খুব সাধারণ পাবে এর কারনে গুরুতর রোগ বা গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
কি করবেন
গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হলে নিজে থেকে কোন ওষুধ খাবেন না। গরম সেঁক দিবেন না। গর্ভাবস্থায় ভুলেও পেটে সেঁক দেওয়া উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হলে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। যে পাশে ব্যথা সে পাশে বদলে অপর পাশে শুয়ে থাকতে পারেন। খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।নিজের প্রতি যত্ন নিন। ডাক্তারের পরামর্শ মত চলুন। সুস্থ থাকুন।
গর্ভাবস্থায় পেটে ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
গর্ভধারণের পর থেকে আপনি বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা ও শারীরিক পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারবেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেটের ডান পাশে ব্যথা। এ বিষয়টি নিয়ে আপনিও হয়তো ভাবছেন। এটি খারাপ কিছু না বা বাড়িতে গর্ভের শিশুর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা? আপনার এরকম সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় পেটে ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
জরায়ু চাপ
গর্ভবতীর জরায়ু এক প্রকার বেলুনের মত। বেলুনে যেমন বাতাস দিলে ক্রমশ বড় হতে থাকে এবং সাথে সাথে বেলুনের গায়ের স্তর পাতলা ও টানটান হতে থাকে। তেমনি গর্ভের শিশুর আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার জরায়ু পুরো নয় মাস জুড়ে ধীরে ধীরে বড় ও টানটান হওয়া শুরু করবে। এবং এই টানটান ভাবটা গর্ভাবস্থায় পেটের ডান দিকে সবচেয়ে বেশি হয়।
যার ফলে চিকিৎসকদের কাছে অনেক গর্ভবতী জানান তাদের পেটের ডানদিকে ব্যাথা অনুভব হওয়ার কথা। এ ব্যথা পুরো গর্ভকালীন সময় জুড়ে হতে পারে তবে সকলের ক্ষেত্রে এই ব্যথা অনুভব নাও হতে পারে। আবার গর্ভাবস্থায় এ ব্যাথা মাঝে মাঝে কম বেশি হওয়ার কথাও জানা গেছে।
রাউন্ড লিগামেন্ট
একটু আগে আমরা জরায়ুকে তুলনা করলাম একটি বেলুনের সাথে। এবার মনে করুন বেলুনের মাথায় একটি দড়ি বেঁধে রাখা আছে। বেলুন যত ফুলবে দড়িতে চাপ তত পড়বে। গর্ভবতীর জন্য জরায়ুর দড়ির মতো। শিশুর বৃদ্ধি লিগামেন্টের ডানপাশে বেশি চাপ দিলে আপনি পেটের ডান পাশে ব্যাথা অনুভব করবেন।
খাদ্য পরিপাক
গ্যাসের সমস্যা,কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি ভাব ইত্যাদি গর্ভবতীর জন্য সাধারণ সমস্যা। এছাড়াও শেষ দিকে শিশুর আকৃতির বৃদ্ধির কারণে পাকস্থলীতে একটি অতিরিক্ত চাপ থাকে যার ফলে গর্ভবতীর গর্ভাবস্থায় পেটে ডান পাশে ব্যথা হতে দেখা যায়।
ফলস লেবার পেইন
আপনার জড়াই ও পেটে ক্রমশ ব্যথা শুরু হলো এবং একসময় সন্তানটি আপনাকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে যোনিপথে নরমালে জন্মগ্রহণ করল। আপনি কষ্ট পেলেন কিন্তু সাথে ফলাফল হিসেবে শিশুটিকে দুনিয়ার মুখ দেখালেন। ধরুন আপনার ব্যাথা ঠিকই হলো কিন্তু শিশুটি হওয়ার পর্যায়ে না গিয়ে থেমে গেল। এ ধরনের ব্যাথাকে ফলস বা মিথ্যা লেবার পেইন বলা হয়। এ কারণে আপনার গর্ভবস্থায় পেটের ডান পাশে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
পেটে ডান পাশে ব্যথা হলে করণীয়
- যে অবস্থানে আছেন সে অবস্থান থেকে নড়াচড়া দিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করে
- দাঁড়িয়ে থাকলে শুয়ে পড়ুন শুয়ে থাকলে দাঁড়িয়ে পড়ুন
- হাটাহাটি ও নড়াচাড়া করুন
- হালকা উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করুন
- হালকা ভাবে ব্যথাতে মাসাজ করুন
কখন ডাক্তার দেখাতে হবে
- ব্যথা অসহনীয় পর্যায়ে হলে
- রাতে ব্যথা পারলে বা শুয়ে পড়লে ব্যথা বেশি হলে
- ব্যথার স্থানে চামড়ায় লালচে দাগ দেখা দিলে
- ব্যথা একটানা হলে
মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় পেটে ডান পাশে ব্যাথা হওয়া স্বাভাবিক। এতে গর্বের শিশুর কোন ধরনের ক্ষতি হয় না। নয় মাস পর্যন্ত শিশু থেকে পেটে ধারণ করতে হবে। এবং এই সময় আপনাকে এরকম হালকা ব্যথা সহ্য করার অভ্যাস করতে হবে। এই বাস্তবতা মেনে মনোবল শক্ত রাখুন। আশা করি আপনার উপকার হবে। আর কখন ডাক্তার এর পরামর্শ নেবেন সেটাও স্মরণে রাখবেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে অনেক মায়েরাই তলপেটে ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন। গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে বিভিন্ন কারণে তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে ইউটেরাস নিজেই সংকুচিত কিংবা প্রসারিত হতে থাকে যার কারণে ও গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়।
মাঝে মাঝে এই ব্যথা কারণে পেট টানটান ভাব অনুভব হয় এবং তা কিছুক্ষণের মধ্যে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোন অস্বাভাবিক কারণেও গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের তলপেটে ব্যথা হতে দেখা যায়। এ ভালো ব্যথা এবং খারাপ ব্যথার মধ্যে পার্থক্যটা আমাদের চিহ্নিত করার উপায়গুলো সম্পর্কে যানতে হবে।
আপনাদেরকে সে সকল বিষয় সম্পর্কেই আজকের এই পোস্টটিতে জানানো হবে। আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাস থেকে শুরু করে যতদিন যাবে ইউটেরাসের আকার তত বৃদ্ধি পাবে এবং এ সময় ইউটেরাস সংকুচিত হবে যার কারণে পেটে টানটান ভাব বা তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। যাকে ব্যাকস্টন হিট কনস্ট্রাকশন বলা হয়।
এই ব্যথায় পরবর্তীতে লেবার পেইন বা তলপেটে ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে অনেক সময় গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের তলপেটে ব্যথা হতে দেখা যায়। এই ব্যাথা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় না। দেখা যায় ইউটেরাস কিছুক্ষণের জন্য শক্ত হয়ে যায় এবং আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। যার কারণে তলপেটে হালকা ব্যথা অনুভব হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় এগুলো কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। তবে ব্যথা যদি প্রচন্ড হয় এবং তা যদি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কিংবা গর্ভবতী মা যদি কোন কাজ করতে না পারে বিছানায় গড়াগড়ি খায় সেক্ষেত্রে চিন্তার বিষয় রয়েছে। গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা একেক সময় একেক ভাবে হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে বা প্রথম তিন মাসে তলপেটে ব্যথার কারণ হিসেবে ডাক্তাররা ইউরিনের ইনফেকশনের সম্ভাবনাই বেশি দেখেন।
এবং এই ইউরিনের ইনফেকশনের কারণে দ্বিতীয় ক্রমাসিক সময়েও তলপেটে ব্যাথা অনুভব হয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে ইউরিনারি ইনফেকশন এর কারণে তলপেটে ঘন ঘন ব্যথা কিংবা চিনচিন অনুভব হয়। যার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসে। এবং প্রস্রাবের সাথে প্রচন্ড জ্বালাপোড়া অনুভব হয়। যার কারনে অনেক সময় জরায়ুতে ব্যথা কিংবা তলপেটে ব্যথার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরাই কন্সটিপেশনে ভুগে থাকেন।
এ কারণেও গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হতে দেখা যায়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি হলে তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়। সাধারণত এই ব্যথা তলপেটে ডান সাইডে বেশি অনুভব হয়। এই ব্যাটা বাম সাইডেও হতে পারে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডান সাইডে হতে দেখা যায়।
এছাড়াও জরায়ুতে যদি প্রথম থেকে টিউমার থাকে কিংবা ওভারিতে যদি সিস্ট দেখা দেয় তাহলেও গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়। এক্ষেত্রে ব্যথা অনেকটা তীব্র হয় নড়াচড়ার ক্ষেত্রে ব্যথা আরো বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক তখনই যখনই ব্যথা অল্প সময়ের জন্য হতে দেখা যায় আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
কিন্তু এই ব্যথা যদি তীব্র হতে থাকে এবং ব্যথা যদি কমতে দেখা না যায় তাহলে সেটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। অস্বাভাবিক ব্যাথার সাথে যদি রক্তক্ষরণ হয় সেক্ষেত্রেও তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে তলপেটে ব্যথার সাথে যদি রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকরা সেটি গর্ভপাতের লক্ষণ হিসেবে ধারণা করেন।
এছাড়াও এ ব্যথাগুলো যখন গর্ভাবস্থার অনেকটা সময় বা শেষের দিকে প্রকাশ পায় তখন সেটা আরলি লেবার পেইন হিসেবে ধরা হয়। স্বাভাবিক ব্যথা স্বাভাবিক নিয়মেই সেরে যাবে কিন্তু এ ব্যথা যদি ক্রমান্বয়ে বার্থডে থাকে এবং সে সাথে রক্তক্ষরণ কিংবা পানি ভাঙ্গার মত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক তবে অবশ্যই আপনাকে অস্বাভাবিক কারণগুলো চিহ্নিত করতে জানতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় তলপেট ভারী লাগে কেন
গর্ভাবস্থায় তলপেট ভারী লাগার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এ সকল কারণগুলো সম্পর্কে আর্টিকেলটির এই অংশে আলোচনা করা হবে। গর্ভাবস্থায় আপনিও যদি তলপেটে ভারী লাগার সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাহলে আর্টিকেলটির এই অংশটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
১/গর্ভাবস্থায় তলপেটে ভারি লাগার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বাচ্চার বড় হওয়া। গর্ভাবস্থায় যতদিন যাবে আপনার গর্ভের সন্তান তত বৃদ্ধি পাবে যার কারণে আপনার তলপেটে ভারী লাগতে পারে কিংবা ব্যাথা অনুভব হতে পারে।
২/বাচ্চার নড়াচড়া কিংবা লাথি মারার কারণে তলপেটে ভারী লাগতে পারে কিংবা এর সাথে হালকা ব্যাথা অনুভব হতে পারে।
৩/গর্ভাবস্থায় সময় যত পার হবে তত বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবে যার কারণে আপনার পেটের পিসি জয়েন ও শিরার ওপর চাপ পড়ে একারণে তলপেটে ভারী অনুভব হয়।
৪/গ্যাস্ট্রিক কিনবা অ্যাসিডিটির কারণে হতে পারে। গর্ভাবস্থায় খাবারের অনিয়মের কারণে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে পাকস্থলীর বৃহদান্ত্রে খাবার জমে থাকার কারণে তলপেট ভারী অনুভব হয়।
৫/সাধারণত বাচ্চা জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত না হলে কিংবা জরাইয়ের বাইরে কোথাও অবস্থান করলে সে ক্ষেত্রে পেটে ভারী অনুভূত হতে পারে। যাকে এক্টোপিক প্রেগনেন্সি বলে। এর কারণে তলপেটে ভারী অনুভব হয় এবং ব্যথাও থাকে।
৬/যদি বাচ্চা মিশক্যারেজ হতে দেখা যায় বা মিশক্যারেজ হওয়া সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে অনেক সময় তলপেটে ব্যথা অনুভব হয় এবং ব্লিডিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৭/প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল যদি সঠিক স্থানে না থাকে বা যদি ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় তাহলেও গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়।
৮/কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও পাকস্থলীতে অতিরিক্ত খাবার জমে থাকে যার কারণে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ভারী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৯/ইউরিনারি ইনফেকশন কিংবা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণে এমনকি যদি আপনি দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখেন সেক্ষেত্রেও গর্ভাবস্থায় তলপেট ভারী কিংবা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
১০/এছাড়াও যদি পিত্ত খেলতে পাথর,ফাইব্রয়েড(জরায়ুতে টিউমার), ওভারিয়ান সিস্ট ও কিডনিতে পাথর এর লক্ষণ প্রকাশ পায় সে ক্ষেত্রেও গর্ভাবস্থায় তলপেটে ভারী অনুভব হয় এবং সাথে ব্যথা থাকে।
গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগলে কি হয়
গর্ভধারণের পর গর্ভবতী মায়েদের মনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন কিংবা গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। যার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগলে গর্ভের সন্তানের কি কোন ক্ষতি হয়। এই প্রশ্ন সাধারণত দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময়ের পর বেশি শোনা যায়।
গর্ভাবস্থায় রাতে শোবার সময় পেটে চাপ লাগতে পারে এতে তেমন খুব একটা ক্ষতি হয় না। তবে যদি পেটে চাপ লাগার পাশাপাশি আপনার রক্তক্ষরণ কিংবা স্রাব বের হওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসা করা রাতে ঘুমানোর সময় গর্ভবতী মায়েদের বাম কাঁধে ভর করে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এতে বাচ্চার শরীরে কম চাপ সৃষ্টি হয় এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত মায়ের মাধ্যমে বাচ্চার দেহে প্রবেশ করে। তবে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন গর্ভাবস্থায় পেটে যেন চাপ না লাগে সেক্ষেত্রে বেশি সতর্ক হওয়ার জন্য। এতে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে টয়লেটে যাওয়ার সময় টয়লেটে যাতে পানি জমে না থাকে সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা পালন করতে বলেছেন।
এছাড়াও চিকিৎসকরা বলেছেন গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত যাতায়াত কিংবা যানবাহনে চড়ার ক্ষেত্রে সাবধানে থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ জার্নি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং গর্ভবতী মায়ের আশেপাশে পানি যেন পড়ে না থাকে সেক্ষেত্রেও বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলেছেন। কারণ এগুলো থেকে গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
তাই গর্ভাবস্থায় পেটে যাতে চাপ না লাগে সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন। পাশাপাশি যদি পেটে চাপ লাগার পর আপনার রক্তক্ষরণ কিংবা স্রাব বের হওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অতিসত্বর ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
গর্ভাবস্থায় জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ
গর্ভধারণ প্রত্যেক মায়ের ক্ষেত্রে আনন্দের এক মুহূর্ত। এবং দীর্ঘ নয় মাস গর্ভধারণের যন্ত্রণা ও নানা সমস্যার মোকাবিলার পর যখন গর্ভের সন্তান চোখের সামনে থাকে তখন আরো বেশি আনন্দ অনুভব হয়। পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় যখন ডেলিভারির সময় কাছে চলে আসে তখন জরায়ুর বিভিন্ন পরিবর্তন দেখে চিকিৎসকরা ডেলিভারির সঠিক সময় নির্ধারণ করে থাকেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কিভাবে বুঝবেন জ্বরে মুখ খোলার সময় কখন। তাহলে আর্টিকেলটির এই অংশটি আপনাদের জন্য। এই অংশে গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার বিভিন্ন লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব।
- জরায়ুর মুখ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকা
- স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণ স্রাব নিঃসরণ হওয়া
- শ্রাবের সাথে রক্তপাত বা রক্তক্ষরণ হওয়া
- পেটের বাচ্চা নিচের দিকে নামতে শুরু করা
- পেশীতে টানটান অনুভব হওয়া এবং পিঠের ব্যাথা বৃদ্ধি পাওয়া
- হাড়ের জয়েন্ট প্রসারিত হতে থাকা
- ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়া
- ওজন বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া
- ক্লান্তি অনুভব করা এবং আগত শিশু কে স্বাগতম জানানোর তীব্র ইচ্ছা
- শরীরে অস্বস্তিকর অনুভূতি প্রকাশ পাওয়া
- বারবার প্রস্রাবের বেগ তৈরি হওয়া
- সারভিক্স ধীরে ধীরে পাতলা হতে শুরু করা
- জরায়ুর পেশিগুলোতে ব্যাথা অনুভব হওয়া
এ সকল লক্ষণ গুলো যদি আপনার অনুভূত হতে শুরু করে তাহলে বুঝবেন জরায়ুর মুখ খোলা সময় খুব কাছাকাছি। এবং খুব দ্রুত আপনি আপনার সন্তানের মুখ দেখতে চলেছেন।
লেখক এর মন্তব্য
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করে তাদের জানানোর চেষ্টা করবেন। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মন্তব্য বা মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। সবশেষে আপনার গর্ভাবস্থা সুস্থতার সাথে শেষ হোক এটাই আশা করি। সকলে ভালো থাকবেন নিজের যত্ন নিবেন আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url