OrdinaryITPostAd

মেয়েদের হার্টের সমস্যার সকল লক্ষণ সমূহ

আপনার কি হাতে ও ঘাড়ে ব্যথা কিংবা বুকের মাঝ বরাবর ব্যথার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এগুলো আবার হার্টের সমস্যার লক্ষণ নয় তো। আজকের এ পোস্টটিতে আমরা মেয়েদের হার্টের সমস্যার যাবতীয় লক্ষণ এবং হার্টের সমস্যার লক্ষণগুলো প্রতিকারের উপায় সহ হাট ব্লক হওয়ার কারণ হার্টের ব্লক দূর করার উপায় এবং হার্টের ব্লক হওয়ার লক্ষণ সহ সার্জারি ছাড়া কিভাবে আপনি হাটের ব্লক থেকে বাঁচতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

ছবি

এছাড়াও আপনার হার্টের ব্লক দূর করার জন্য কি ধরনের ব্যায়াম প্রয়োজন সে সম্পর্কেও আলোচনা থাকছে আজকের এই আর্টিকেলটিতে। আপনার যদি হার্টের সমস্যা থেকে থাকে কিংবা বুকে ব্যথার মত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনার হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার লক্ষণগুলো বুঝে আপনি সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনার কাছে অনুরোধ রইল।

পোস্ট সূচীপত্রঃমেয়েদের হার্টের সমস্যার সকল লক্ষণ সমূহ

ভূমিকা

আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য হার্টের কার্যক্রম সঠিকভাবে চলা খুবই জরুরী। এর জন্য আমাদের হার্টে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে হওয়া উচিত। আমাদের হার্টে যদি সঠিক পরিমাণ রক্ত চলাচল না করে তাহলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত আমাদের মাংস পেশীতে পৌঁছাতে পারেনা। যার কারণে আমাদের হার্টের সাথে সংযুক্ত রক্ত নালিগুলো ব্লক হয়ে যায় এবং হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এমনকি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

সাধারণ ক্ষেত্রে মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা খুব কম থাকলেও কিছু কিছু অসুখের কারণে মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। যেমন ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ইত্যাদি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় হাতের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা এবং হার্ট অ্যাটাক মৃত্যুবরণ করা সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

তাই এই সকল সমস্যায় স্বীকার হওয়া মেয়েদের হাটের যাবতীয় সমস্যা থেকে দূরে থাকার ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের বা হার্টের সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণ ও এর প্রতিকার গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা উচিত। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি মেয়েদের হার্টের সমস্যার যাবতীয় লক্ষণ ও প্রতিকার সহ হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ দূর করার উপায় এবং হার্ট ব্লক খোলার জন্য আপনি কি কি ব্যায়াম করতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ

আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা মেয়েদের হার্টের সমস্যার যাবতীয় লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

বুকের মাঝ বরাবর ব্যাথা

মেয়েদের এবং ছেলেদের সকলের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে বুকের মাঝ বরাবর ব্যাথা। এই ব্যাথা বুকের বাম বা ডান পাশে হয় না সাধারণত বুকের মাঝ বরাবর হয়ে থাকে। যাকে ডাক্তারি ভাষায় সেন্ট্রাল চেইন পেইন বলে। এবং এই ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে দেখা যায়।

এর তীব্রতা অনেকটা বুকে ছুরি চালানোর মত কিংবা হাড়ভাঙ্গা বা হাতি পাড়া দেওয়ার মতো ব্যথা হতে পারে। এটা সাধারণত ছেলে ছেলেদের এবং মেয়েদের উভয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে বুকের মাঝ বরাবর ব্যথার সাথে যদি আপনার বুকে ধড়ফড় এবং প্যালপিটিশন এর মত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনার দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

হাত ও ঘাড় ব্যথা

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণগুলোর মধ্যে আরও একটি লক্ষণ হচ্ছে হাত ও ঘাড় ব্যথা। বুকের মাঝ বরাবর ব্যথার পাশাপাশি এই ব্যথা বামহাত এমনকি ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যাকে ব্যথাটা রেডিয়েট করা বলে। বিশেষ করে যে সকল মেয়েদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যথা বোঝার ক্ষমতা অনেকটা কম। যার কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগলেও কিংবা বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হলেও খুব একটা টের পায় না।


তাই যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের হার্টের সুরক্ষায় বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। ঘাড়ে ও হাতে ব্যথা সাধারণ বিভিন্ন কারণেও হয়ে থাকে তবে এই ব্যথা যদি কিছুদিনের মধ্যে ছেড়ে না যায় তাহলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। চিকিৎসকদের মতে যদি আপনার বাম হাতে ব্যথা নিজ দিক বরাবর নামতে থাকে এবং গলায় চাপ ধরার মতো ভাব অনুভব হয় তাহলে এটা হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

এছাড়াও আপনার চোয়াল কিংবা পিঠে ব্যাথা যদি অনুভব হয় সেটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। এই লক্ষণগুলো বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি প্রকাশ পায়।

তীব্র পেটে ব্যথা

অনেকেই পেটের তীব্র ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ভেবে ভুল করেন। পেটের তীব্র ব্যাথা আপনার হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। বুকের ব্যথা যদি পেটে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পেটে গ্যাস্টিকের চেয়ে তীব্র ব্যাথা অনুভব হবে এবং তার সাথে জ্বালাপোড়া সমস্যা থেকে থাকবে। তাই এ সকল ব্যথা মোটেও অবহেলা করবেন না বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার পাশাপাশি পেটে জ্বালাপোড়া সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কাশি ও শ্বাসকষ্ট

আপনার হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা গুলো দ্রুত চিকিৎসা না করলে সেটা হার্ট ফেল বা হার্ট অকেজো হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। হার্টফেল ভার্ট অকেজ হয়ে পড়তে লাগলে সাধারণত আমাদের সারা শরীরে পানি এসে পড়ে এবং এর প্রথম সূত্রপাত ঘটে ফুসফুসে। যার কারণে আমাদের শ্বাস কষ্ট কিংবা কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়। তাই মেয়েদের ক্ষেত্রে হার্ট এর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা কিংবা লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অতিরিক্ত ঘাম

বুকে ব্যথার পাশাপাশি আপনার যদি অতিরিক্ত পরিমাণ ঘাম হয় সেটা মোটেও অবহেলা করবেন না। অতিরিক্ত গরম কিংবা ব্যায়াম করার সময় ঘাম হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু আপনার যদি প্রচন্ড বুকে ব্যথা হয় এবং সেই সাথে অতিরিক্ত ঘাম হয় তাহলে সেটা হার্টের সমস্যা কিংবা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে হাটের সমস্যা কিংবা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ প্রকাশ পেলে তখন দেহ খুব রেস্টলেস বা অস্থির হয়ে পড়ে যার কারণে বুকে ব্যথার পাশাপাশি প্রচন্ড ঘাম এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই উপসর্গগুলো যদি মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রকাশ পায় তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা তথ্য অনুযায়ী হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হিসেবে কিংবা হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা কারণ হিসেবে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া কিংবা মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের মতে বুকে ব্যথা যখন তীব্র হয়ে ওঠে তখন রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা মাথা ঘোরার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে এটা হার্টের সমস্যার একটি অন্যতম লক্ষণ। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ বেশি প্রকাশ পায় তাই মোটেও এটি অবহেলা করবেন না।

বমি বমি ভাব ও বমি

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ নয় তবে যদি আপনার বুকে তীব্র ব্যথা এবং সেই সাথে অস্বস্তি বোধ অনুভূত হয় এবং সেই সাথে বমি বমি ভাব কিংবা বমি হয় সেটা হার্টের সমস্যার উপসর্গ হতে পারে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়।

ক্লান্তি অনুভব

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম এবং বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি আপনার ক্লান্তি ভাব না কাটে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর তথ্য অনুসারে যদি বুকে ব্যথার এবং বমি বমি ভাব এর পাশাপাশি আপনার ক্লান্তি ভাব অনুভব হয় সেটা হার্ট এর সমস্যার অন্যতম একটি লক্ষণ। এই লক্ষণগুলো মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি প্রকাশ পায়।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি

মেয়েদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যার অন্যতম একটি লক্ষণ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া। বিশেষজ্ঞদের দাবি যে সকল মেয়েরা দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খেয়ে থাকেন তাদের হৃৎপিণ্ডের বা হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। বিশেষ করে যে সকল মেয়েদের ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে এবং সাথে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেয়ে থাকেন তাদের হার্টের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

অবসন্নতা

চিকিৎসকদের মতে যে সকল মেয়েদের হার্ট অ্যাটাক এর হার্টের সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অবসন্নতার লক্ষণ অন্যতম। তাদের দাবি যে মাসে তাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে সে মাসে তাদের অন্য মাসের তুলনায় অবসন্নতা বেশি অনুভব হয়েছে।


ঘুমের অসুবিধা

অবসন্নতা এবং ক্লান্তির পাশাপাশি যদি আপনার ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি হয় তাহলে আপনার হার্টের সমস্যার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা বেশ কয়েকজন মেয়েদের লক্ষণগুলো একত্রিত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে সকল মেয়েদের হার্টের সমস্যা কিংবা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তাদের কিছুদিন আগে থেকেই অবসন্নতা ও ক্লান্তি অনুভব হওয়ার পাশাপাশি ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তাই আপনার যদি এ সকল সমস্যা প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

শ্বাস ছোট হয়ে আসা

সাধারণত হার্ট অ্যাটাক এর পর যদি দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ না করা হয় তাহলে হার্ট ফেল কিংবা হার্ট অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে ফুসফুসে পানি জমতে শুরু করে এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত চলাচল করতে পারে না। তাই এ সময় আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয় কিংবা অল্প পরিশ্রম বা সিডি দিয়ে ওঠানামা করলে প্রচন্ড ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে সেই সাথে শ্বাস ছোট হয়ে আছে যেটি হার্ট অ্যাটাক এবং হার্টের সমস্যার অন্যতম একটি লক্ষণ।

ঠান্ডা বা ফ্লু হওয়া

মেয়েদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা শুরুর পূর্বে থেকে ঠান্ডা এবং ফ্লু হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং এগুলো সহজে সারতে চায় না। এর পাশাপাশি যদি মাথা ঘোরা কিনব অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায় তাহলে এটা হার্টের সমস্যা কিংবা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।

মাথা ব্যাথা

আমাদের মাথা ব্যথার সময় আমরা অনেকেই ব্যথা নাশক বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা হয়তো জানি না হার্টের সমস্যার অন্যতম একটি লক্ষণ হচ্ছে প্রচন্ড মাথা ব্যথা। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে প্রচন্ড মাথা ব্যথা সমস্যা দেখা দেয় সেটাকে মাইগ্রেন কিংবা সাধারণ সমস্যা ভেবে অবহেলা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অনিয়মিত পালস রেট

অতিরিক্ত দৌড়ঝাপ কিংবা মানসিক চাপের কারণে আমাদের পালস রেট উঠানামা করাটা স্বাভাবিক কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই পর্যাপ্ত বিশ্রাম এ থাকার সত্ত্বেও যদি আপনার পালস রেট হঠাৎ করে কমে বা বেড়ে যায় তাহলে তা ভালো লক্ষণ নয়। হার্টের সমস্যা আট লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার আগে কিংবা হার্টের অ্যাটাক এর কিছু আগে থেকে এ ধরনের সমস্যা বেশি প্রকাশ পায়।

হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার

বন্ধুরা এর আগের অংশে আমরা হার্ট অ্যাটাকের কিংবা হার্টের সমস্যার যাবতীয় লক্ষণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা মেয়েদের হার্টের সমস্যার যাবতীয় কারণ সম্পর্কে জানতে পারবো। মেয়েদের হার্টের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার গুলো জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।

মেয়েদের হার্টের সমস্যার কারণ

ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি

আমাদের শরীরের যাবতীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু ভাইটাল হরমোন রয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে যৌন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি হার্টের যাবতীয় কাজ অব্যাহত রাখার জন্য ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত মেয়েদের ৪৫ বছর বয়সের পর বা মেনোপজ শুরু হওয়ার পর থেকে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমতে থাকে এবং যার ফলে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা।

ডায়াবেটিস

যে সকল মেয়েদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে কিংবা যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন। তাদের ক্ষেত্রে কোন রকম লক্ষণ প্রকাশ না পেয়েই হার্টের সমস্যা সৃষ্টি হয়। কেননা এ সময় রক্তের শর্করার মাত্রা বেঁচে থাকার কারণে হার্টের সমস্যাগুলো সহজে প্রকাশ পায় না কিংবা বুঝতে পারা যায় না। যার কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মেয়েদের হঠাৎ করে বড় ধরনের হাটের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপের কারণেও মেয়েদের হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের হাই পেশার রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কোন রকম লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ করে হার্টের সমস্যা কিংবা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

উচ্চ কোলেস্টেরল

আমরা হয়তো শুনে থাকবো কিংবা কোন না কোন জায়গায় পড়ে থাকব হার্টের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী। যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় বিশেষ করে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা যাদের বেশি তাদের হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে আমাদের হৃৎপিণ্ডে সঠিক পরিমাণে রক্ত চলাচল হতে পারে না যা আমাদের হার্টের সমস্যা এমনকি হার্ট অ্যাটাকে কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ধূমপান ও মধ্যপান

বিশেষজ্ঞদের মতে যে সকল মেয়েদের ধূমপান কিংবা মদ্যপানের বদ অভ্যাস রয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাকের কিংবা হার্টের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল মেয়েরা ধূমপান করে থাকে তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং মধ্যখানের ক্ষেত্রেও একই তথ্য পাওয়া গেছে।

অধিক কর্মব্যস্ততা ও মানসিক চাপ

যে সকল মেয়েরা কাজের পাশাপাশি সংসার জীবনে রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ কর্মব্যস্ততা এবং মানসিক চাপের কারণে মস্তিষ্কে স্ট্রেস হরমোন বা করটিসল অধিক পরিমাণ ক্ষরিত হয় যা হার্ট অ্যাটাকের কিংবা হার্টের সমস্যার অন্যতম একটি কারণ।

হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার

বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খান

যে সকল খাবার বা ফলমূল থেকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও আঁশ পাওয়া যায় সে সকল খাবার খেলে আমাদের শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হয়। যা আমাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। বেশি আঁশযুক্ত সবজির মধ্যে আপনারা সিম এবং মটরশুঁটি খেতে পারেন। এবং শস্য দানা হিসেবে কলায় কিংবা ডাল খেতে পারেন এছাড়াও যে সকল ফলমূলের প্রচুর পরিমাণ আজ পাওয়া যায় সেগুলো খাওয়া উচিত।


চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলু কিংবা শেকড় জাতীয় সবজিগুলো যদি খোসাসহ রান্না করা যায় সেগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আপনি খেতে পারেন হোলগ্ৰেইন আটার রুটি কিংবা বাদামি চাল।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট বাধা চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট বাধা চর্বি থাকে সে সকল খাবারগুলো আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তাই এ সকল খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন চিজ,দই, লাল মাংস,মাখন,কেক, বিস্কিট কিনবা নারকেলের তেল।

লবণকে বিদায় জানান

কাঁচা লবণ আমাদের রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগ কিংবা স্টোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে হার্টের এবং শরীরে সুরক্ষার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির দিনে 6 গ্রাম কিংবা এক চামচ পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিত।

তাই আপনার যদি খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকে কিংবা খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে আজ থেকে তা ত্যাগ করার চেষ্টা করুন তাহলে আপনার হার্ট সুরক্ষিত থাকবে। লবণের পরিবর্তে মসলা দিয়ে খাবার প্রস্তুত করলেও তা হার্টের সুরক্ষায় ভালো কাজ করে।

ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খান

যেসব ফলমূল ও শাক সবজিতে মিনারেল এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে সে সকল খাবার গুলো আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন। এটা আপনার হার্টের ঝুঁকি কমে আসবে। ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও পারটাসিয়াম এর মত খনিজ উপাদান গুলো আপনার উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং আপনার হার্টের সুরক্ষায় ভালো কাজ করবে।

অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলুন

বিশেষজ্ঞদের মতে যাদের শরীরের অতিরিক্ত পরিমাণ চর্বি রয়েছে কিংবা যার অতিরিক্ত মোটা তাদের হার্টের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তাদের গবেষণা অনুসারে আপনার শরীরে বিশেষ করে যদি কোমরে অতিরিক্ত পরিমাণ চর্বি জমা থাকে তাহলে তা হার্টের সমস্যা কিংবা হার্টের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে কাজ করে।

তাই নির্দিষ্ট রুটিন বানিয়ে ডায়েট অনুসরণ করে লবণ ও ফ্যাট যুক্ত খাবার গুলো বাদ দিয়ে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন। এবং যত দ্রুত সম্ভব আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলেন এতে আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকবে। এছাড়াও আরো যে সকল উপায়ের মাধ্যমে আপনি হার্টের সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে পারেন তা হল।
  1. দিনে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন
  2. প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ ঘন্টা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন
  3. মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন
  4. ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন
  5. ব্লাড প্রেসার,ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  6. দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন

হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ

হার্টের যাবতীয় সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে হার্টে সঠিক পরিমাণ রক্ত চলাচল না করা। আপনার যদি নিচের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে আপনি বুঝবেন আপনার হার্টের সঠিক পরিমাণ রক্ত চলাচল এ বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
  1. প্রচন্ড বুকে ব্যথা ও অস্বস্তি বোধ হওয়া হার্ট ব্লকের অন্যতম লক্ষণ
  2. হার্ট ব্লক হলে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে
  3. হার্ট ব্লকের কারণে আপনার ক্লান্তি অনুভব হবে
  4. যাদের হার্ট ব্লকের সম্ভাবনা রয়েছে তাদের অনিয়মিত হার্টবিট সৃষ্টি হবে
  5. হার্ট ব্লকের কারণে মাথা ঘোরা কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সম্ভাবনা দেখা দেয়।
  6. হার্ট ব্লকের কারণে অতিরিক্ত ঘাম বিশেষ করে ঠান্ডা ঘাম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  7. হার্ট ব্লক হলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং ঘুমের সমস্যা দেখাবে।
  8. বদ হজম এবং অম্বল এর সমস্যা ও দেখা দিতে পারে হার্ট ব্লকের কারণে।
  9. ঘাড়, চোয়াল এবং পিঠে ব্যাথা অনুভব হয়।
  10. হার্ট ব্লকের কারণে বুক জ্বালাপোড়া করে।
  11. হার্ট ব্লকের কারণে বুকে ধড়ফড় বেড়ে যায়।
  12. শ্বাস নিতে এবং ছাড়তে কষ্ট হয়
  13. খাবার হজমের সমস্যা দেখা দেয়
  14. হার্ট ব্লকের কারণে পেটে উপরের দিকে ব্যাথা হতে পারে
  15. অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত বোধ অনুভব হয়
এই সকল লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে আপনার হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এই সকল লক্ষণ তখনই প্রকাশ পায় যখন আপনার হৃদপিন্ড অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। কিংবা হৃদপিন্ডের সঠিকভাবে রক্ত চলাচল হয় না। তাই এ সকল লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ এবং চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

হার্ট ব্লক দূর করার উপায়

হার্ট ব্লক দূর করার উপায় কিংবা হার্টের যাবতীয় সমস্যার সমাধান পেতে অবশ্যই আপনাকে কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করে চলতে হবে। নিচে এ নিয়ম কানুন গুলো জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আপনার কিংবা আপনার পরিবারের যদি কারো হার্টের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
  1. নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করুন
  2. ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ খান
  3. রক্তনালীতে অতিরিক্ত পরিমাণ চর্বি জমা হলে স্টেন্টিং বা রক্তনালীতে রিং স্থাপন করতে পারেন।
  4. ব্লকের পরিমাণ কিংবা সংখ্যা অনেক বেশি হলে ওপেন হার্ট সার্জারি কিংবা বাইপাস সার্জারির মাধ্যমে রক্ত চলাচল সঠিক করা যায়।
  5. ফ্যাট ও চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন
  6. লিফট ব্যবহার না করে হাঁটার চেষ্টা করুন
  7. ধূমপান ও মধ্য পানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন
  8. খাদ্যাভ্যাসে ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন
  9. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বাদ দিন
  10. অতিরিক্ত কোমল পানীয় কিংবা ভাজা তেল পরিহার করুন
  11. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি ও ফল রাখুন।
এ সকল নিয়মকানুন গুলো যদি আপনি মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনার হার্টে ব্লক কিংবা হার্টের যাবত সমস্যা থেকে আপনি অনেকটা মুক্তি পেয়ে যাবেন। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে সকল ধরনের নিয়মকানুন অনুসরণ করুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

লেখক এর মন্তব্যঃমেয়েদের হার্টের সমস্যার সকল লক্ষণ সমূহ

সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি এই পোস্টটি পড়ার পর আপনি হার্টের সমস্যার যাবতীয়র লক্ষণ ও প্রতিকারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করুন। এরকম আরো শিক্ষনীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটির ফলো করুন। সকলে ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪