প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার সকল উপকারিতা
আপনি কি সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। যেকোনো খাবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার আগে কিন্তু যে কোন খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের এর উপকারিতা কিংবা এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। যার ফলে আমরা ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
তেমনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা খেজুর খাওয়ার সকল উপকারিতা গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে কিংবা রাতে খেজুর খেয়ে থাকেন তাহলে এর সকল উপকারিতা গুলো আপনার অবশ্যই জানতে হবে। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য খেজুরের কোন উপকারিতা রয়েছে কিনা আবার অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে কি কি ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে এই আর্টিকেলটিতে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
পোস্ট সূচীপত্রঃপ্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার সকল উপকারিতা
ভূমিকা
আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সকল ধরনের রোগ থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে আমাদের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি প্রদান করে থাকে। এর জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণ সবুজ শাকসবজি এবং ফল খাওয়া আবশ্যক। এরকম একটি ফল হচ্ছে খেজুর।
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খেজুরের তুলনা হয় না। খেজুরের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের চুল থেকে শুরু করে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার কাজে সাহায্য করে। বহু যুগ আগে থেকেই মানুষ শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য খেজুর খেয়ে থাকেন এবং খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেয়ে থাকে তাদের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা শরীরের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। আজকের এ আর্টিকেলটিতে আমরা খেজুর খাওয়ার সকল উপকারিতা এবং অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেল বিশেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর খাওয়ার হাজারো গুনাগুন ও পুষ্টি উপকারিতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভিজিয়ে রাখা খেজুর খেয়ে থাকে তাদের বিভিন্ন উপকার ও পরিবর্তন শরীরের লক্ষ্য করা যায়। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা সে সকল পরিবর্তন বা উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে
খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কে দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও খেজুরের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো মুখের লালা কে খাবারের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে সেটাকে হজম করতে এবং পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এমনকি বদহজমের সমস্যা অনেকটা দূর করে।
মস্তিষ্ক সতেজ রাখে
খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য কর। তাই যারা মনে করেন তাদের স্মরণশক্তি কিছুটা কম তারা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন। এছাড়াও যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেয়ে থাকে তাদের অ্যালঝাইমা রোগের সম্ভাবনা কমে যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা আমাদের রক্ত চাপের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রোক, কোলেস্টেরল, হার্টের সমস্যা থেকে দূরে রাখে। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আপনার অন্তত দুটি করে খেজুর খাওয়া উচিত।
হাড় মজবুত করে
খেজুরের মধ্যে থাকা ফসফরাস,ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড়ের সুরক্ষায় ভালো কাজ করে। যাদের হাড়ের সমস্যা রয়েছে কিংবা হাড় দুর্বল তারা চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এছাড়াও যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেয়ে থাকে তাদের অস্টিওপোরোসিস রোগের ঝুঁকি কমে আসে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে প্রতিদিন সকালে খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
হাঁটুর ব্যথা দূর করতে
যারা হাঁটু ব্যথা কিংবা বাতে ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন তারা চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভিজিয়ে রাখা খেজুর খেতে পারেন। খেজুরের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ যেমন আপনার শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবে তেমনি আপনার হাড়ের ক্ষয় হওয়াকে রক্ষা করবে এবং হারকে ভেতর থেকে মজবুত করবে।
চোখের সমস্যা দূর করে
আমাদের চোখের সুরক্ষায় কাজ করে ভিটামিন এ। যেটি খেজুরের মধ্যে ভরপুর রয়েছে। তাই যারা চোখের সমস্যায় রয়েছেন তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন এতে ভালো উপকারিতা পাওয়া যাবে। এছাড়াও খেজুরের মধ্যে থাকা লুটেনিন ও জেক্সানথিন উপাদানগুলো আপনার চোখের কর্নিয়াকে সতেজে রাখতে এবং চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।
পুষ্টির ঘাটতি পূরণে
খেজুরের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি থাকার সত্বেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ না। এর মধ্যে থাকা প্রোটিন ও ভিটামিন আমাদের শরীরে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি গুলো পূরণে সহায়তা করে এছাড়াও বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। তাই আপনার যদি পুষ্টি অভিটামিনের ঘাটতি থেকে থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন।
গর্ভবতী মা ও সন্তানের জন্য উপকারী
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে পুষ্টি চাহিদা এবং ভিটামিনের ঘাটতি থাকে। সেই ঘাটতি পূরণের জন্য চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও নারীদের শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। এমনকি গর্ভাবস্থায় শিশুদের সকল ধরনের জন্মগত রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে খেজুর ভালো উপকারী।
ব্রণ দূর করতে
খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বি৫। যা ব্রণের সমস্যা দূর করতে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে আমাদের ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে।
বার্ধকের ছাপ কমাতে
যাদের অল্প বয়সে মুখে বার্ধককে ছাপ মেছতা কিংবা ব্রণের মতো সমস্যা দেখালে তারা যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন তাদের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং ত্বককে টানটান করে বার্ধক কে ছাপ কমাতে খেজুর খুবই পুষ্টিকর একটি উপাদান।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
শরীর অতিরিক্ত ওজন ও মেদ কমাতে খেজুরের জুড়ি মেলা ভার। খেজুর গাছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে যার কারণে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ মেদ জমা হতে পারে না যার ফলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমে আসে।
রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায়
আমাদের শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এর
মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্ত সরবরাহকে সচল রাখতে সাহায্য করে। তাই যারা রক্তশূন্যতার সমস্যায় ভুগছেন বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে তারা চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
হার্টের সমস্যা দূর করে
যাদের হার্ট দুর্বল কিংবা যার অল্পতেই ভয় খায় তারা হাটের দুর্বলতা দূর করতে এবং হাটের বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন। এতে আপনার হৃদপিন্ডে রক্ত চলাচলের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং হার্টকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
খুসখুসে কাশি দূর করতে
যাদের দীর্ঘদিন ধরে খুসখুসে কাশি হয় তারা যদি প্রতিদিনের রাতের বেলা এক থেকে দুইটি খেজুর পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা খালি পেটে সে খেজুর ও ভেজানো পানি খেয়ে নেন তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে আপনার খুসখুসে কাশি দূর হয়ে যাবে।
চুলের গোড়া মজবুত করতে
সারাদিনের ব্যস্ততা ও কাজের চাপে আমরা চুলের যত্ন নিতে খুব একটা পারিনা। যার কারণে অনেক সময় আমাদের চুলের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায় এবং চুল রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যায় হয়ে যায়। আপনি চাইলে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন শরীরের জন্য এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
খেজুরের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলো আমাদের শরীরে ক্যান্সার কোচ কে সৃষ্টি হওয়া থেকে বাধা সৃষ্টি করে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেয়ে থাকেন তাদের ক্যান্সারে ঝুঁকি অনেক কম হয়। এমনকি মুগ গব্বরের ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রেও খেজুর ভালো কাজ করে।
রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খাওয়ার পাশাপাশি আমরা খেজুর রাতেও ঘুমানোর আগে খেতে পারি। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা রাতে খেজুর খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা গুলো সম্পর্কে আরো জানবো। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়
খেজুরের মধ্যে শতকরা ৯৮ শতাংশই শর্করা পাওয়া যায় এবং প্রতিটি খেজুর থেকে ৬৬ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। আমরা সারাদিনের বিভিন্ন ক্লান্তি এবং কাজের চাপে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দুর্বল কিংবা ক্লান্ত অনুভব করি বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিংবা রাতের বেলা ঘুমানোর আগে খেজুর খেয়ে থাকে তাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাতে খেজুর ভালো কাজ করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে
খেজুর আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং এতে ফ্যাট সামান্য পরিমাণ থাকার কারণে তা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে এবং হার্টের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে।
হজমের সমস্যা দূর করে
খেজুরে মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং খাদ্য আঁশ। যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ করে সারা শরীরে সঠিকভাবে পরিবহন করে এবং বদহজম কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে দূরে রাখে কখনো কখনো ডায়রিয়ার ক্ষেত্রেও খেজুর ভালো উপকারীতা পাওয়া যায়। তাই আপনি চাইলে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করুন।
দেহের মাংসপেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে
বিশেষজ্ঞদের মতে একজন সুস্থ সবল মানুষের প্রতিদিন 48 গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন(৬০ কেজি) আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সেটা 60-90 গ্রাম (৭০ কেজি) প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। যার কারণে আমাদের দেহের মাংসপেশিগুলো শক্তিশালী হয় এবং মাংসপেশির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যারা প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সাথে খেজুর মিশিয়ে খায় তাদের এই প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয় এবং তা আমাদের হাড়ের সুরক্ষার পাশাপাশি মাংসপেশি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
খেজুরের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি হিসেবে থাকে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ৪২ যা অন্যান্য মিষ্টি খাবারের তুলনায় কম মিষ্টি। যার কারণে আমাদের শরীরে খেজুর খাওয়ার ফলে শর্করার মাত্রা খুব একটা বৃদ্ধি পায় না এবং পাশাপাশি খেজুরের মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং শর্করা শোষণের হার কমিয়ে দেয় যার কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসে।
এছাড়াও খেজুরের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি ডায়াবেটিস থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চান কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চান তাহলে প্রতিদিন রাতে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের প্রোটেস্ট গ্রন্থির কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এমনকি এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলোকে পুরুষের বীর্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে এবং এর গুণগতমান বাড়াতে সাহায্য করে। খেজুরের মধ্যে থাকা জিংক পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভালো কাজ করে।
এছাড়াও স্ট্যামিনা, ইস্ট্রোজেন ও স্টেরল হরমোনের মাত্রা বাড়াতে যে অ্যামিনের সিট কাজ করে তার একটি ভালো উৎস হচ্ছে খেজুর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিংবা রাতের বেলা খেজুর খেয়ে থাকে তাদের পেটের ক্যান্সার কেন আলসারের সমস্যা অনেকটা কম হয়।
অনিদ্রা সমস্যা কমায়
সারাদিনের ক্লান্তি এবং কাজের চাপে অনেকেই রাতের বেলা ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না আবার বর্তমান জেনারেশনের একটি সাধারন সমস্যা হয়েছে রাত জাগা। যার কারণে আমরা দিনের বেলায় ক্লান্তি অনুভব করি এবং কাজের ঠিকমতো মন বসে না।
আপনি যদি প্রতিদিন রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম দুধের সাথে ১-২ টি খেজুর মিশিয়ে খেতে পারেন এতে আপনার ভালো উপকার পাবেন। দুধের মধ্যে থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিডটি আমাদের সেরোটনিন হরমোনের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এই সেরেটোনিন হরমোন আমাদের স্নায়ুবিক উত্তেজনা কমাতে এবং খেজুরের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম সহজে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।
এলার্জি সমস্যা দূর করে
আমাদের শরীরে কিংবা ত্বকে যদি কোন ভাইরাসজনিত কিংবা ব্যাকটের জনিত রোগ সংক্রমণ বাদে তার হাত থেকে মুক্তি পেতে খেজুরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আন্টি ব্যাকটেরিয়েল উপাদান কাজ করে এবং এলার্জিজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। তাই আমাদের প্রতিদিন রাতে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিত।
যৌন শক্তি বাড়াতে
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি খেজুর আমাদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যৌন শক্তি বাড়াতে প্রতিদিন রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সাথে কয়েকটি ভিজে রাখা খেজুর একসাথে খেলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে
যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে প্রতিদিন রাতের বেলা খেজুর খেতে পারেন এর মধ্যে থাকা পোস্ট উপাদান গুলো আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমিয়ে আপনাকে সুস্থ ও সবল এবং সুন্দর জীবন উপহার দিতে ভালো কাজ করবে।
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা
পুরুষদের জন্য খেজুর খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। আর্টিকেলটি এই অংশে আমরা পুরুষদের জন্য খেজুরের সকল উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানব।
- পুরুষদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে
- পুরুষদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে
- পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করে
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে
- পুরুষদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়
- পুরুষদের বার্ধক্য জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
- যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- রক্তনালী ও ধমনী পরিষ্কার রাখে
- যকৃত ভালো থাকতে এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করে
- খেজুরের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম পুরুষদের পোলা ও ব্যথা সারিয়ে তুলে সাহায্য করে।
- অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করে
- হাড় কে মজবুত করতে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- বয়সজোনিত সকল ধরনের সমস্যার প্রতিরোধ করে
- পুরুষের পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি সাধন করে
- হাড়ের ও দাঁতের গঠন মজবুত করে
- লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম
শুকনো খেজুর খাওয়ার সঠিকভাবে তেমন কোন নিয়ম নেই। তবে শুকনো খেজুর অনেকে চিবিয়ে খেতে পছন্দ করেন না সে ক্ষেত্রে আপনারা শুকনো খেজুর খাওয়ার এক থেকে দুই ঘন্টা আগে পানিতে ভিজে রাখতে পারেন এতে করে আপনার শুকনো খেজুর খাওয়া প্রয়োজন হবে না এবং খেজুরের মধ্যে যদি কোন ক্ষতিকারক পদার্থ মেশানো থাকে শুকনো খেজুর পানিতে ভেজানোর ফলে সেই ক্ষতিকারক পদার্থগুলো বের হয়ে যাবে। পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুর যে কোন সময় খাওয়া যেতে পারে তবে খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় নিচে উল্লেখ করা হলো।
workout এর আগে
খেজুর প্রাকৃতিক চীনের একটি ভালো উৎস হলেও তা আমাদের শরীরে রক্তের শতকরা তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ায় না এবং শরীরকে দীর্ঘক্ষন ধরে এনার্জিটিক রাখার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি ওয়ার্কআউট এ যাওয়ার ৩০ থেকে ৬০ মিনিট আগে শুকনো খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন তাহলে এর মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে নিঃসৃত হবে এবং ওয়ার্কআউটের সময় আপনার এনার্জি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
ঘুমানোর আগে
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেজুর খেলে এর ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়। এর মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের হজম তন্ত্র কে ভালো রাখতে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি শুকনো কিংবা ভেজা খেজুর খেতে পারেন।
রোজ সকালে
শরীরে যাবতীয় সমস্যা দূর করতে এবং দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন। এতে অন্ত্রের সকল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে এবং হার্ট লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
কখন খেজুর খাওয়া যাবেনা
১/আপনার যদি বদ্ধ জমে সমস্যা থেকে থাকে তাহলে খেজুর খাওয়াতে বিরত থাকতে হবে। খেজুরের মধ্যে সরবিটল নামক সুগার অ্যালকোহল বাওয়েল মুভমেন্ট এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
২/ডায়রিয়ার সময় খেজুর খাওয়াতে বিরত থাকতে হবে এতে উপকারের বদলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি দেখা দেয়। এছাড়াও আপনার যদি এলার্জি, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম ও সেনসিটিভিটির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনার খেজুর খাওয়া উচিত নয়। কেননা খেজুর ফ্রুক্টোসে সমৃদ্ধ তাই এ সময় খেজুর খেলে আপনার ক্ষতি হতে পারে।
অতিরিক্ত খেজুর খেলে কি হয়
খেজুর যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনি এর অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ক্ষতি হতে পারে। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে যে সকল স্বাস্থ্য হানি হতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি যদি অতিরিক্ত খেজুর খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করবেন তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে কি কি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
পেটের সমস্যা
খেজুর খাওয়ার ফলে যেমন আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্য হানির কারণ হতে পারে। খেজুরে থাকে অতিরিক্ত পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ খেজুর খান সেক্ষেত্রে পাকস্থলীতে ফাইবারের পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাবে যা আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়ার সমস্যার কারণ হতে পারে।
ত্বকের সমস্যা
খেজুর সাধারণত ড্রাই ফুড হিসেবে বেশি পরিচিত। এবং এই খেজুর কে সংরক্ষণের জন্য সালফাইট নামক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের ত্বকের ভেতরে এবং বাইরে বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করে। যেমন র্্যাশ, চুলকানি বা লাল হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।
ওজন বেড়ে যাওয়া
খেজুর যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণ খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালরি জমা হয় এবং এই ক্যালরি যদি আপনার শরীরের শোষণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে তা মেধ হিসেবে আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। তাই প্রতিদিন ২ টির বেশি খেজুর খাওয়া উচিত না।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা
যাদের অ্যালার্জি কিংবা হাঁপানিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের খেজুর না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের খেজুর খেলে এ সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে তাই শ্বাসকষ্টের রোগীদের খেজুর খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিত।
ডায়াবেটিস কমে যাওয়া
পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর খাওয়ার ফলে যেমন আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তেমনি আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেজুর খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার শরীরে ডায়াবেটিসের মাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেকটা কমে যাবে যেটা আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা অতিরিক্ত পরিমাণ খেজুর খেয়ে থাকে তাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
লেখক এর মন্তব্যঃপ্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার সকল উপকারিতা
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটা আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। এরকম আরো শিক্ষণীয় ও মজার মজার বিষয় সম্পর্কে জানতে ও পড়তে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন। আসসালামুআলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url