রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা-কলা খাওয়ার সঠিক সময়
আপনি কি প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে রাতের বেলা কলা খাওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করছেন? অথবা আপনি প্রতিদিন রাতে কলা খেয়ে থাকেন? আপনি কি সঠিকভাবে রাতে কলা খাওয়ার ফলে উপকারিতা গুলো পাচ্ছেন? রাতে কলা খাওয়ার ফলে আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছে না তো? এ সকল যাবতীয় প্রশ্ন নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে আপনি রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা, কলা খাওয়ার সঠিক সময় ও কলা খেলে কি ওজন বাড়ে এ সকল বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
পোস্টসূচীপত্রঃরাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা-কলা খাওয়ার সঠিক সময়
ভূমিকা
আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যাদের রাতে পেট খালি থাকলে ঘুম আসে না। আবার এমন অনেকেই আছে যারা শরীর ও মন শান্ত রাখতে রাতে কলা খেয়ে থাকেন। এছাড়া অনেকেই ক্যামমাইল চা,কফি খেয়ে থাকেন। এগুলো আমাদের রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য জরুরী। কিন্তু যারা রাতে ঘুমানোর আগে কলা খেয়ে থাকেন তাদের অবশ্যই রাতে কলা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানা উচিত।
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন,ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি-৬। যেগুলো আমাদের বিভিন্ন শারীরিক উপকারিতা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কলার তুলনা হয় না। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে একটি বড় সাইজের কলার মধ্যে ৪৮৭ গ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম পাওয়া যায়। যা আমাদের দৈহিক চাহিদার 10 শতাংশ পূরণ করে থাকে।
এছাড়াও তাদের ধারণা প্রতিদিন একটি থেকে দুটি কলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ১০৫ গ্রাম ক্যালোরি সরবরাহ করে। এছাড়াও কলার মধ্যে রয়েছে হাজারো পুষ্টিগুণ যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
আপনি যদি এই আর্টিকেলটি শুরুতে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের কলা খাওয়ার উপকারিতা, কলা খাওয়ার সঠিক সময় এবং কলা খেলে কি ওজন বাড়ে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
সকল পুষ্টিগুণে ভরপুর কলা রাতে খাওয়ার ফলে যে সকল উপকারিতা পাওয়া যাবে তা হলো।
পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে: কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি,কার্বোহাইড্রেট,ফাইবার,প্রোটিন ও চিনি। এছাড়াও কলায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। তাই যাদের শারীরিক পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে তারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলা খেতে পারেন এতে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কলাতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যা আমাদের হৃদরোগের অন্যতম একটি কারণ। তাই যারা উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যায় ভুগছেন তারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রাতে কলা খেতে পারেন এতে দারুন উপকারিতা মিলে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: কলার মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে খাবারকে সঠিকভাবে হজম হতে সাহায্য করে।
শক্তি বৃদ্ধি করে: কলাতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি ও কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করা মাত্র শক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। অনেকেই কলা কে প্রকৃতির এনার্জিবার বলে থাকেন। আপনি যদি নিয়মিত শরীর চর্চা করে থাকেন তাহলে শরীরচর্চা করার সময় আপনার তাৎক্ষণিকভাবে এনার্জি ফিরিয়ে আনতে কলা খেতে পারেন। এছাড়াও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলা খাওয়ার ফলে সারাদিন আপনি এনার্জিটিক অনুভব করবেন।
মেজাজ ভালো রাখে: কলার মধ্যে থাকা ট্রিপ্টোফ্যান নামক উপাদানটি আমাদের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা কে বাড়িয়ে তোলে যা আমাদের মস্তিষ্ক ভালো রাখতে এবং বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে একটি কলায় ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় যা আমাদের মন ভালো রাখতে এবং ঘুমের জন্য বেশ সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: কলাই প্রাকৃতিক চিনি থাকাই এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমিয়ে আনে। যার কারণে আমাদের খিদে কম পায় এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হওয়ার কারণে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হতে পারে না তাই ওজন নিয়ন্ত্রণেও রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।
ত্বকের যত্নে: কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং কোমল রাখতে সাহায্য করে। তাই ত্বকের যত্নেও রাতে কলা খাওয়া যায়।
কিডনি সুস্থ রাখে: আপনি যদি প্রতিদিন রাতে একটি থেকে দুটি কলা খেতে পারেন তাহলে কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আমাদের কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে কলা খেলে আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের স্বাভাবিক স্তর বজায় থাকে যা আমাদের কিডনি সুরক্ষার জন্য বেশ কার্যকরী।
রক্তস্বল্পতা দূর করে: যাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কম কিংবা যারা আয়রন এর ঘাটতিতে ভুগছেন তারা রক্তস্বল্পতা দূর করতে এবং আয়রনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রাতের বেলা কলা খেতে পারেন। এছাড়াও যারা অ্যানিমিয়ার মত সমস্যার কারণে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব এবং শ্বাসকষ্টে সমস্যায় ভুগছেন তারা চাইলে রাতে কলা খেতে পারেন।
রাতে কলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে কলার মধ্যে থাকা আয়রন লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি৬ রক্তের গ্লুকোজে মেটাবলিজমের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: কলাতে রয়েছে পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। পড়াশোনা ও কাজে মনোযোগী হওয়ার জন্য প্রতিদিন রাতে একটি থেকে দুইটি কলা খাওয়া উচিত।
মানসিক চাপ কমায়: কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি৬ যা আমাদের নার্ভের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিকভাবে প্রশান্তি এনে দিতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃমিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
চুলের যত্নে: কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ও আমাদের চুলের ফলিকল গুলোকে শক্তিশালী করে চুলের গোড়া মজবুত রাখতে এবং চুলের গ্রোথ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: কলায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন যা আমাদের ত্বকের ফ্রিরেডিকেল গুলো দূর করতে এবং ক্ষতিকারক পদার্থগুলো দূর করে ক্যান্সারের কোর্সগুলোকে শরীরে ভাষা বাদ দে বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান লিউকোমিয়ার মত ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হাড়ের শক্তি বাড়ায়: আমাদের হাড়ের সুরক্ষায় কলার উপকারিতা অনেক। হাড়ের সুস্থ গঠন এবং হারকে শক্তিশালী করতে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণে কলা ধারণ কার্যকারী। প্রতিদিন রাতে কলা খাওয়ার ফলে আমাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে আসে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কলার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো প্রাকৃতিকভাবে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যার কারনে আমাদের রক্তে অতিরিক্ত শর্করা জমতে পারে না এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
পেশীর সঠিক গঠনে: কলার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান যেমন পটাশিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট আমাদের পেশীর টানটান ভাব দূর করতে সাহায্য করে এবং পেশীর গঠন সঠিকভাবে ধরে রাখতেও এর উপকারিতার তুলনা হয় না।
আরো পড়ুনঃছোলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে: কলার মধ্যে থাকা ডায়রিয়া প্রতিরোধ স্টার্চ আমাদের পাকস্থলীর মধ্যে অপক্ষয়িত খনিজ পদার্থ পূরণ করে বৃহদন্তের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া গুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিলে একটি কলা খেতে পারেন এতে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
ভালো ঘুমের সহায়তা করে: প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলা খাওয়ার ফলে কলার মধ্যে থাকা সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণ হওয়ার ফলে আমাদের ঘুমের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে যার কারণে ভালো ঘুম হয়।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
হাজারো পুষ্টিগুণে ভরপুর কলা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও বেশ উপকারী। আর্টিকেলদের এই অংশে আমরা গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
মর্নিং সিকনেস দূর করে: গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েরা অতিরিক্ত মাথাব্যথা ও এসিডিটির সমস্যায় ভুগে থাকেন। যার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব ও ক্লান্তি অনুভব হয়। চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার ফলে মর্নিং সিকনেস এর কারণে বমি বমি ভাব ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে কলাভেস কার্যকরী। কলা ভিটামিন বি সমৃদ্ধ হয় মর্নিং সিকনেস দূর করতে এর উপকারিতা অনেক।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখ: গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে গর্ভবতী মায়ের ও শিশুর মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে এমনকি প্রাণহানিও ঘটতে পারে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে মা ও শিশুর শারীরিক ও মানসিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা উন্নত করে: গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায় যার কারণে শরীরের রক্তের পরিমাণ কমে যায়, যা গর্ভাবস্থার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এবং কলার মধ্যে থাকা আয়রন হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বাড়িয়ে তুলে রক্তস্বল্পতা সমস্যা কমায়।
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে: কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং ফলিক এসিড যা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় কলা রাখা জরুরি।
বুক জ্বালা কমায়: গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালা সমস্যা দূর করতে কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালা সমস্যা দেখা দিতে পারে যদি এই সমস্যার সম্পূর্ণ রূপে সমাধান হয় না তবে প্রতিদিন কলা খাওয়ার ফলে খাদ্যনালী ও পাকস্থলীতে অম্ল তার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই আপনিও যদি গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালার সমস্যায় থেকে থাকেন তাহলে নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে: কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্য ক্যালরি ও পুষ্টি উপাদান যা শিশুর শারীরিক ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এবং এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ব্রুনের মস্তিষ্কের গঠন উন্নত করে। তাই গর্ভাবস্থার জন্য কলা হতে পারে দারুন স্বাস্থ্যকর একটি ফল।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখলে গর্ভবতী মায়ের নানা রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কলার মধ্যে থাকা উচ্চ ফাইবার গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
এডেনা কমাতে সাহায্য করে: গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকের এটি মা-বাবা জলপূর্ণ হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। যার কারণে পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেই। গর্ভাবস্থায় আপনিও যদি এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকা থেকে নোনতা খাবার বাদ দিয়ে কলা যুক্ত করতে পারেন। এটি আপনার পায়ের গোড়া ফুলে যাওয়া ভাব কমাতে এবং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
শিশুর জন্মগত ত্রুটি দূর করতে: কলার মধ্যে থাকা ফোলেট শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের বিকাশে সাহায্য করে এছাড়াও প্রতিদিন কলা খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় শিশুর শরীরে ফোলেটের মাত্রা উন্নত হয়। যদি শিশুর শরীরে এই ফোলেটের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে। তাই শিশুর জন্মগত ত্রুটি দূর করতে গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখা জরুরী।
ক্ষুদা জাগাতে: গর্ভাবস্থায় যে সকল গর্ভবতী মায়ের ক্ষুধা হ্রাস পায় তাদের ক্ষুধার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে এই কলা। তাই মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে এবং ক্ষুধার প্রবণতা বাড়াতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখা যেতে পারে।
হাড়ের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সাধন করতে: কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন যা গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড়ের গঠন স্বাভাবিক রাখতে এবং গর্ভবতী মায়ের হাড় ক্ষয় হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ: গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার রোগ সৃষ্টি হতে পারে। যার কারণে ত্বক ফ্যাক আছে ও শারীরিক দুর্বলতা অনুভব হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটটির কারণে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় এবং রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগ সৃষ্টি হতে দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে কলা বেস কার্যকারী।
দ্রুত এনার্জি বুস্ট করে: কলা গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ এর ভালো উৎস। যা গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসে যদি গর্ভবতী মা খেতে পারেন তাহলে সন্তান প্রসবের সময় গর্ভবতী মায়ের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে এবং প্রস্রাবের সময় ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় কলা থাকা খুবই জরুরী।
স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য: কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি যাকে অ্যাসকরবিক এসিড ও বলা হয়ে থাকে। এটি আয়রন শোষণের কাজ করে। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি হাড়ের বৃদ্ধি পশু গুলোর মেরামত এবং গর্ভবতী মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যকর ত্বকের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য গর্ভবতী মায়ের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কলা খাওয়ার সঠিক সময়
হাজারো পুষ্টিগুণে ভরপুর কলা আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কার্যকরী। কিন্তু কলার সকল উপকারিতা গুলো পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কলা খাওয়ার সঠিক সময় এবং সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে। কলা আপনি সকালে বিকালে কিংবা রাতে যে কোন সময় খেতে পারেন।
তবে অবশ্যই সকালে খালি পেটে কলা খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা পালন করবেন। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম যা সকালে খাওয়ার ফলে আমাদের পেটের এবং কিডনির বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণ হতে পারে। এছাড়াও কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যার কারণে আমাদের হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
তাই চিকিৎসকের মতে সকালে হালকা নাস্তা করার পর আপনি একটি থেকে দুইটি কলা খেতে পারেন। কলাতে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে যা সকালে খালি পেটে খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসের মত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সকালে খালি পেটে ব্যতীত আপনি দিনের যেকোনো সময় কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলা খেতে পারেন।
এতে আপনি ভাল স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন। চিকিৎসকদের মতে একজন সুস্থ ব্যক্তির প্রতিদিন বড় সাইজের কলা হলে একটি এবং মাঝারি সাইজের কলা হলে দুইটি খাওয়া উচিত। এর বেশি খেতে যাবেন না এতে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকির সমস্যা বাড়তে পারে। আশা করছি কলা খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে আপনি সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
কলা খেলে কি ওজন বাড়ে
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও ক্যালরি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতানুসারে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি কলার মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ ক্যালরি পাওয়া যায়। এছাড়াও .৩ থেকে .৪ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে। আশা করি এই পরিসংখ্যান দেখেই বুঝতে পারছেন কলা খেলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে কি পাবে না । যদিও কলা উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং এই ফাইবার আমাদের অতিরিক্ত ক্যালোরি জমতে বাধা সৃষ্টি করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে যার কারণে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কিন্তু যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খেয়ে ফেলেন বা খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ফাইবার আপনার পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে। অনেকেই মনে করেন কলা খেলে ওজন বাড়ে। যদিও এখনো এর কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমাণ নেই। তবে আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা আপনাকে বেছে নিতে হবে। যে কোন খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তেমনি অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলেও আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হতে পারে যা আপনার ওজন বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই যদি আপনার ওজন অতিরিক্ত না বাড়াতে চান তাহলে প্রতিদিন অন্তত একটা থেকে দুইটা বেশি কলা খাবেন না। এতে আপনার স্বাস্থ্য উপকারিতা হবে পাশাপাশি আপনি বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাবেন।
লেখকের মন্তব্যঃ রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা-কলা খাওয়ার সঠিক সময়
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করছি কলা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা এবং কলা খেলে ওজন বাড়ে কিনা সেই প্রশ্নগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। এই আর্টিকালি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে শেয়ার করবেন।
এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত ভাব পরামর্শ থেকে থাকা তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। আপনাদের প্রতিটি কমেন্ট আমরা গুরুত্বের সহকারে বিবেচনা করে থাকি। সকলে ভালো থাকবেন।আসসালামু আলাইকুম।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ আর্টিকেলটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিতে পারেন অথবা আপনি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। ধন্যবাদ।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url