মেছতা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি-মেছতা দূর করার ঔষধ
আপনি কি মুখের মেছতার সমস্যায় ভুগছেন? মুখের মেছতার কারণে অস্বস্তি বোধ হয়। নিজের কনফিডেন্স হারিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আপনি কি মুখের মেছতার জন্য চিন্তিত? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে কিভাবে খুব সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে মেছতা দূর করা যায় সে বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এলোভেরা দিয়ে কিভাবে মেছতা দূর করা যায় তার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন, মুখের মেছতা কেন হয় এবং মুখের মেছতা দূর করার বিভিন্ন ঔষধ সম্পর্কেও আলোচনা থাকছে আজকের এই আর্টিকেলটিতে। তাই আপনিও যদি মুখের মেছতার সমস্যায় অতিষ্ঠিত হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃমেছতা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি-মেছতা দূর করার ঔষধ
ভূমিকা
মুখের মেছতা একটি সাধারণ চামড়ার রোগ। ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যার কারণে চামড়া কুঁচকে যাওয়া থেকে শুরু করে চামড়াতে ভাঁজ করা, দাগ পড়া এবং ফেটে যাওয়ার মত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। এবং এসবের ধারাবাহিকতায় মুখে মেছতার দাগ পড়তে পারে।
চিকিৎসকদের মতে মুখের কোন অংশে কালচে কিংবা বাদামী দাগ ছোপকেই মেছতা বা মেসতা বলা হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে যাকে মেলাসমা বলা হয়। এটি সাধারণত প্রথম অবস্থায় ছোট আকারে থাকে এবং আস্তে আস্তে তা মুখের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষ করে গলার উপরিভাগে এবং অনেক সময় গালে এবং নাকের মধ্যভাগেও দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি কপালে ভ্রুর ওপর এবং চিবুকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। মেজদা সাধারণত ত্বকের উপর বাদামি ও কালো দাগ সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত মুখের তিনটি অংশে মেছতা বেশি দেখা যায়। যেমন: কপাল, নাক ও মুখ।
যদিও মাঝারি বয়সের (২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী)ছেলে ও মেয়ে দের বেশি মেছতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অল্প বয়সেও( 14 থেকে 15) বছর বয়সের ছেলে ও মেয়েদের মধ্যেও এটি হতে দেখা দেয়। যার কারনে আমাদের মুখে দীর্ঘমেয়াদী দাগ থেকে যায়। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা ম্যাচটা দূর করার বিভিন্ন উপায়,ঔষধ এবং মেছতা কেন হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরুতে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
মুখের মেছতা কেন হয়
চিকিৎসকদের মতে মুখের মেছতার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে জেনেটিক প্রিডিসপজিশন। এছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে মুখের মেছতা হতে পারে। যেমন: অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে থাকা, রান্নার সময় চুলার আগুনের কারণে, গর্ভাবস্থার সময়, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে এমনকি অনেক সময় বিভিন্ন কসমেটিকসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও মুখে মেছতার সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও চিকিৎসকদের মতে মেছতার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে থাইরয়েডের সমস্যা। তাদের ধারণা যদি কারো থাইরয়েডের সমস্যা থাকে তাহলেও মেছতা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে মেছতার সমস্যা ছেলেদের তুলনায় বিভিন্ন হরমোনাল প্রভাবের কারণে মেয়েদের বেশি দেখা দেয়। যদিও মেছতার মূল কারণ হিসেবে জেনেটিক প্রিডিসপজিশনকে ধরা হয় কিন্তু মুখের মেছতা কি কারনে সৃষ্টি হয় তার যুক্তিসম্মত প্রমাণ এখনো আবিষ্কার করা হয়নি।
তবে যদি আপনার পূর্বপুরুষ বা তারও আগের পূর্বপুরুষ দের মধ্যে মেছতার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনার মুখের মেছতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ত্বকের একটি সাধারণ রোগ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এবং কিছু ঔষধ সেবনের মাধ্যমে খুব সহজেই মেছতার দাগ ত্বক থেকে দূর করা যায়। তাই সকল বিষয়গুলো সম্পূর্ণ জানতে ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।
মেছতা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি
মেছতা ত্বকের সাধারণ একটি রোগ হলেও মেছতা কারণে যে দাগ ত্বকে পড়ে সে দাগ দীর্ঘমেয়াদী থেকে যায়। একবার মুখে মেছতার দাগ পড়লে তা সহজে দূর করা যায় না তবে আপনি যদি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এবং কিছু ঔষধ সেবন করেন তাহলে ধীরে ধীরে তা হালকা হয়ে যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মেছতা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে।
আলু: ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে মুখের মেছতা দূর করতে আলু বেশ কার্যকরী। আলুর মধ্যে থাকা ক্যাটেকোলেজ এনজাইম মেছতার দাগ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং রং আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে একটি ছোট আকারের আলু ভালোভাবে ব্লেন্ড করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
চন্দন: রূপচর্চায় চন্দনের ব্যবহার জানে না এমন অনেক কম মানুষ হয়ে আছে। চন্দনের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান মুখের ব্রণ,মেছতার দাগ ও কালো দাগ দূর করতে চন্দন খুবই ভালো কাজ করে। এর জন্য আপনাকে এক চামচ পরিমাণ চন্দন গুঁড়োর সাথে পরিমাণ মতো নারকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে এবং এই পেস্ট ১৫ থেকে ২০ মিনিট আপনার মুখে লাগিয়ে রাখার পর তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
তবে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন এই পেস্টটি যেন চোখে না যায়। ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পর মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। আপনি যদি এই পেজটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন তাহলে খুব দ্রুত ফলাফল পাবেন।
কমলার খোসা: কমলার খোসাতে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল উপাদান যা আমাদের মুখের কালো দাগ দূর করতে এবং ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে কমলার খোসা ভালোভাবে বেটে নিয়ে এর সঙ্গে হলুদ ও মধু একসাথে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে এরপর ১০ মিনিট মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে। এর সাথে যদি আপনি গোলাপজল ব্যবহার করেন তাহলে খুব দ্রুত ফলাফল পাবেন এবং মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই মশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
লেবুর রস: ঘরোয়া পদ্ধতিতে মেছতা দূর করার জন্য লেবুর রস খুবই ভালো। তাজা কাগচি লেবুর রস 15 থেকে 20 মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন মুখে কাগজিলেবুর রস দেওয়ার পর যেন আপনার মুখে সূর্যের আলো না পড়ে। কেননা লেবুর রস এ এসিড থাকার কারণে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
কাঁচা দুধ: ঘরোয়া পদ্ধতিতে মুখের মেছতা দূর করতে কাঁচা দুধ বেশি উপকারী। কাঁচা দুধ আমাদের ত্বককে এক্সফোলিয়েটর করতে সাহায্য করে। আপনাকে পরিমাণ মতো দুধের সাথে কিছুটা হলুদ গুঁড়া নিচে একটি পেস্ট বানাতে হবে এরপর 10 থেকে 15 মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেললে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
অ্যালোভেরা: মেছতার দাগ দূর করার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে এলোভেরা জেল। এর মধ্যে থাকা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য আমাদের মুখের মেছতার দাগ ধীরে ধীরে হালকা করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ঘা ও ফোঁড়া হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনে। এছাড়াও ত্বকের জন্য উপকারী করা কোলাজেন বৃদ্ধিতে এলোভেরা কাজ করে।
টমেটোর রস: টমেটোর মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন উপাদান যা মুখের দাগ দ্রুত দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের পোরসগুলো সংকুচিত করে।
পেঁপে: ঘরোয়া এই ফলটি ব্যবহার করে খুব সহজে এবং দ্রুত সময় আপনি আপনার মুখের মেছতার দাগ দূর করতে পারেন। পরিমাণ মতো পাকা পেঁপে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার বা ধুয়ে ফেলুন। আশা করি খুব দ্রুত আপনার মুখের মেছতার দাগ দূর হবে।
হলুদ: টেট্রাহাইড্রোকারকিউমিন নির্যাস সমৃদ্ধ হলুদ মুখের কালো দাগ দূর করতে এবং মেছতার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। আপনি যদি দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে 15 থেকে 20 মিনিট লাগিয়ে রাখার পর গরম পানি ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলেন তাহলে অল্পসময় ব্যবহারে আপনি দ্রুত ফলাফল পাবেন।
মুলতানি মাটি: মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে এবং মুখের কালো দাগ যোগ দূর করতে মুলতানি মাটি খুবই উপকারী। পরিমাণ মতো মুলতানি মাটির সঙ্গে পানি মিশে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান এবং তা শুকিয়ে এলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এতে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
ডিমের সাদা অংশ: ডিমের সাদা অংশ ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে মেছতা দূর করার মধ্যে আরও একটি। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডিমের সাদা অংশটি আলাদা করে যদি মুখে মেখে কিছুক্ষণ মাসাজ করতে পারেন তাহলে খুব দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই একটি বিষয় মাথায় রাখবেন যাদের মেচ তার সমস্যা রয়েছে তারা কখনোই মুখে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, পেঁয়াজ কিংবা পেঁয়াজের রস ব্যবহার করবেন না।
টক দই: নিয়মিত মুখে টক দই ব্যবহার করলে মুখের মেছতা দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এটি সাহায্য করে। পরিমাণ মতো টক দই ভালোভাবে ফেটিয়ে তা ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘরোয়া এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার মুখের মেছতা দূর হবে।
আমন্ড অয়েল: আমন্ড ওয়েল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আমন্ড অয়েল যেমন আমাদের চুলের সুরক্ষায় এবং চুলের যত্নে ব্যবহার করা যায়। তেমনি দুই থেকে তিন ফোঁটা আমন্ড অয়েল ব্যবহার করে আপনার মেছতা স্থানে ভালোভাবে মেসেজ করুন এবং ঘন্টাখানেক রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে খুব দ্রুত আপনার মেছতার দাগ দূর হবে।
আর্গান অয়েল: organ oil এর মধ্যে রয়েছে ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও ক্যারোটিনয়েডস যা মিস্টার দাগ ধীরে ধীরে দূর করতে এবং সূর্যের ক্ষতিকারকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পর দুই থেকে তিন ফোঁটা অর্গান অয়েল ব্যবহার করে মেছতার উপর হালকা মাসাজ করতে হবে এবং সারা রাত রেখে দিয়ে পরদিন সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে বেশ ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল যেমন আমাদের চুলের জন্য উপকারী তেমনি আমাদের ত্বকের জন্য বেশ কার্যকারী। ঘরোয়াভাবে মেছতার দাগ দূর করতে আপনাকে হাতের আঙুলে কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করে নিয়মিত মেছতার দাগের উপর মাসাজ করতে হবে। এরপর ঘন্টাখানেক রাখা হয়ে গেলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে দ্রুত ফলাফলের জন্য দিনে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার মেছতার দাগ ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকবে।
টি ট্রি অয়েল: এই এলটির মধ্যে রয়েছে হিলিং প্রপার্টিজ যা মেছতার দাগ দূর করতে এবং ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এক থেকে দুই ফোঁটা তেল হাতের আঙুলের ডগায় নিয়ে মেছতার দাগের উপর কয়েক মিনিট ধরে মাসাজ করে ঘন্টাখানেক রেখে দিন এবং নির্দিষ্ট সময় পর ধুয়ে ফেললে খুব দ্রুত মেছতার দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ব্রণের সমস্যার কারণে যে সকল কালো দাগ ত্বকের উপর সৃষ্টি হয় সেগুলো নিমেষেই উধাও হয়ে যায়।
হালকা গরম তেল: ঘর প্রতি ব্যবহার করে মেজদা দূর করার জন্য আপনি যেকোনো ধরনের তেল হালকা গরম করে মেছতার স্থানে মাসাজ করতে পারেন। এবং ততক্ষণ পর্যন্ত মেসেজ করুন যতক্ষণ না ত্বক তেল টুকু শুষে নিচ্ছে। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ঘণ্টা খানিক পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
সানস্ক্রিন ব্যবহার: মেছতার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে সূর্যের আলো। তাই সূর্যের আলো থেকে এবং সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে এবং মেছতার সমস্যা থেকে দূরে রাখতে বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। যখন আপনি বাইরে বের হবেন তার অন্তত 20 মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন প্রয়োজনে সূর্যের ক্ষতিকারক প্রস্তুতি থেকে ত্বককে বাঁচাতে ছাতা,সানগ্লাস ও মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
কলার খোসা: মেছতা দূর করতে এবং মেছতার দাগ হালকা করতে কলার খোসা বেশ কার্যকর। এর জন্য প্রতিদিন একটি কলার খোঁজার ভেতরের অংশ তিন থেকে চার মিনিট তার ওপর ঘোষণা এবং 5 মিনিট রেখে দেওয়ার পর যখন আপনার ত্বক কলার রস শুষে নেবে তখন পানি ব্যবহার করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে যেমন আপনার মেছতার দাগ দূর হবে পাশাপাশি কলার মধ্যে থাকা গ্লুকোল্যাক্টোন আপনার ত্বককে ফর্সা করতে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করবে।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার: যাদের মেছতার সমস্যা রয়েছে তারা সরাসরি অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ত্বকে লাগাবেন না। এতে ক্ষতি হতে পারে।আপনারা চাইলে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের সাথে পরিমাণ মতো মধু একসাথে মিশে পেস্ট তৈরি করে সে পেস্ট মুখে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের মধ্যে থাকা ম্যালিক এসিড ডার্ক সেল গুলোকে দূর করতে সাহায্য করে এবং মেছতার দাগ ধীরে ধীরে হালকা করে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও মধুর পেস্ট ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন এতে দ্রুত মেছতার দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পেঁয়াজের রস: ম্যাচটার সমস্যায় অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের মতোই পেঁয়াজের রসও সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। পেঁয়াজের রসের সাথে পরিমাণ মতো অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করে ম্যাচটার দাগের উপর ৩-৪ মিনিট মাসাজ করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন আশা করি এতে আপনার মেছতার দাগ এবং ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
উপরোক্ত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ব্যবহারের পাশাপাশি আপনাকে কিছু বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে বা লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন:
১/যতটা সম্ভব সূর্যের আলো এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে আপনি সানস্ক্রিন কিংবা ত্বককে রক্ষার জন্য মাস্ক, সানগ্লাস এবং ছাতা ব্যবহার করতে পারেন।
২/বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই আপনাকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
৩/যতটা সম্ভব ত্বককে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন। উষ্ণ পানিতে মুখধর পরিবর্তে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে পারেন।
৪/ত্বকের মৃত কোষ গুলোকে দূর করে এমন সকল খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন এতে মেছতার দাগ ধীরে ধীরে কমে আসবে।
৫/মেছতার দাগ অনেক সময় ঠোঁটেও দেখা দেয়। তাই ত্বকের যত্ন নিতে গিয়ে ঠোঁটের অবহেলা করবেন না।
৬/মেছতার দাগ ত্বকে অল্প দিনের মধ্যেই দেখা দিলেও এই দাগ সহজে দূর হতে চায় না। তাই ধৈর্য ধরুন যত্ন নিন এবং পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে থাকুন আশা করি আপনি দ্রুত ফল পাবেন।
এলোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়
আমাদের ত্বকের যত্নে এবং চুলের যত্নে এলোভেরা দারুন কাজ করে। মুখের মেছতার দাগ দূর করতে আপনাকে এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে হবে। অ্যালোভেরা সংগ্রহ করার পর অ্যালোভেরার মধ্যে থাকার জেল ব্যবহার করে আপনি মুখে ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনার দ্রুত দূর হবে।
এছাড়াও আপনি চাইলে এলোভেরার সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে পারেন এবং সে পেস্ট মুখের মেছতার স্থানে আঙুলের সাহায্যে ভালোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষণ মাসাজ করার পর 10 থেকে 15 মিনিট রেখে দিন। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এলোভেরার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আপনার ত্বকের খসখসে ও শুষ্কতা ভাব দূর করে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং মেছতার সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি দিতেও ভালো কাজ করে। তাই মেছতার সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তির জন্য কয়েক মাস এলোভেরা জেল ব্যবহার করে দেখুন এতে আশা করি খুব ভালো ফলাফল পাবেন।
মেছতা দূর করার ঔষধ
বর্তমান বাজারে মেছতা দূর করার বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত ক্রিম পাওয়া যায় যেগুলো আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবহার করতে পারেন। এই ওষুধগুলো আপনার মেছতার দাগ দূর করতে ভালো কাজ করবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মেছতা দূর করার বিভিন্ন ঔষধ সম্পর্কে।
হাইড্রোকুইনোন
মেছতার দাগ দূর করতে হাইড্রোকুইনোন এর রাসায়নিক পদার্থটি বেশ কার্যকরী। এটি ত্বকের ডিপিগমেন্টিংয়ের জন্য দারুন কাজ করে। এছাড়াও চিকিৎসকরা মেছতার দাগ দূর করতে হাইড্রোকুইনোন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে এই ওষুধটি মেছতার নির্মূলের জন্য জেল লোশন বা ক্রিম ফর্মুলায় বর্তমানে বাজারে অ্যাভেলেবেল। এর রাসায়নিক পদার্থটি টারসিনোজেন এনজাইমকে বাধা দিই যা আমাদের মেলানিনের মাত্রা কে বাড়িয়ে মুখে মেছতার সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
কোজিক অ্যাসিড
হাইড্রোকুইনোন একটি ভারী উপাদান হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যায় না। এর কারণে আপনি হাইড্রোকুইনোন বিকল্প হিসেবে কোজিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারেন। এই রাসায়নিক উপাদানটিও মেচ তার দাগ নির্মূলে দারুন কার্যকরী। এটিও হাইড্রোকুইনোন মত মেলেনো সাইটের বৃদ্ধিকে কমিয়ে ত্বকের মেছতার দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
এজিলিক অ্যাসিড
মুখের মেছতার দাগ সৃষ্টিকারী মেলেনোসাইটকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং মেছতা ও মেছতার দাগ চিরতরে নির্মূল করতে এজেলিক এসিড ব্যবহার করা যেতে পারে।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
এই অ্যাসিটি মূলত ফেসিয়াল পিলিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিডের পানীয় উপাদান হিসেবে গ্লাইকোলিক এসিড ব্যবহার করা হয়। এই এসিড মূলত জেদি মেছতার দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
মেডিকেল ট্রিটমেন্ট
বর্তমানে মেছতার দাগ দূর করার জন্য অনেক মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেওয়া যায়। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে একজন দক্ষ ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিতে হবে এবং তার কাছ থেকে মেছতার মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেওয়ার ফলে কি কি ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে সে বিষয়গুলো আগে জেনে নেওয়া ভালো। বর্তমানে মেছতার দাগ দূর করার জন্য যে সকল ট্রিটমেন্ট গুলো সচরাচর করা হয় তা হচ্ছে।
- মাইক্রোডার্মাব্রেশন করা যায়
- কেমিক্যাল পিলস খাওয়া যায়
- লেজার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে
- লাইট থেরাপি ব্যবহার করতে পারেন
- ডার্মাব্রেশন পদ্ধতি করা হয়ে থাকে
এছাড়াও বর্তমান বাজারে মুখের মেছতা দূর করার একটি ঔষধ হল মেছতা কেয়ার ক্রিম। যার মধ্যে আপনি একই সাথে ফ্লুসিনোলোন অ্যাসিটনাইড, হাইড্রোকুইনোন এবং ট্রিটিনয়িন। যা আপনার দীর্ঘমেয়াদী মেছতার দাগ দূর করতে ভালো কাজ করবে। তবে এই ক্রিমটি মুখে মাখার পর অবশ্যই আপনাকে সূর্যের আলো এড়িয়ে চলতে হবে।
এবং সূর্যের আলোতে বের হওয়ার সময় আপনাকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরী। এই ঔষধ আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার ব্যবহার করবেন এবং ঘুমানোর ৩০ মিনিট পূর্বে মেছতার দাগে ভালোভাবে লাগিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এরপর পরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহার করে ভালোভাবে মুখ শুকিয়ে নিতে হবে এবং অবশ্যই এই ঔষুধটি ব্যবহারের পর আপনার সূর্যের রশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে এবং আপনি যদি এই ঔষুধটি দিনে ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই ঔষুধটি ব্যবহারের পর মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
লেখকের মন্তব্যঃমেছতা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি-মেছতা দূর করার ঔষধ
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধব দের মাঝে শেয়ার করবেন। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা পরামর্শ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। সকলে ভালো থাকবেন।আসসালামু আলাইকুম।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই পোস্টটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। ধন্যবাদ।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url