শসা খেলে কি গ্যাস হয়-শসা খাওয়ার সঠিক সময়
আপনি কি নিয়মিত শসা খাচ্ছেন কিংবা নিয়মিত শসা খাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। শসা খাওয়া নিয়ে আপনার মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আপনি কি জানতে চান শসা খেলে গ্যাস হয় কিনা। ওজন কমাতে শসা খাওয়া উপকারিতা কতটুকু কিংবা ওজন কমাতে শসা খাওয়ার নিয়ম কি। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
আজকে এ আর্টিকেলটিতে আমরা শসা খাওয়ার যাবতীয় উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা শসা খেলে গ্যাস হয় কিনা, ওজন কমাতে শসা খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু কিংবা ওজন কমাতে শসা খাওয়ার নিয়ম কি এবং শসা খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই সকল বিষয়গুলো জানতে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃশসা খেলে কি গ্যাস হয়-শসা খাওয়ার সঠিক সময়
ভূমিকা
শসা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী কেননা এর মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এছাড়াও শসা আমাদের পেট ঠান্ডা রাখতে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। যারা ওজন কমাতে চান তারা চাইলে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় শসা যুক্ত করতে পারেন। এছাড়াও শসা আমাদের শরীরে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ডিহাইড্রেট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
শসা রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন মিনারেল ও ফাইবার যা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য জরুরী। সাধারণত একটি মাঝারি আকারে শসায় ৯০ শতাংশ পানি থাকে যা আমাদের শরীরে আমি চাহিদা পূরণ করে। বিশেষ করে গরমে আপনার ডিহাইড্রেশনের সমস্যা থেকে বাঁচতে চাইলে নিয়মিত শসা খেতে পারেন।
তবে শসা যেমন কিছু উপকারিতা রয়েছে তেমনি শসা অতিরিক্ত খাবার ফলে আমাদের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। আজকের আর্টিকেল দিতে আমরা শসা খাওয়ার যাবতীয় উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব।
এছাড়াও শসা খেলে গ্যাস হয় কিনা, ওজন কমাতে শসা খাওয়ার নিয়ম এবং শসা খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের এই আর্টিকেলটিতে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
শসা খেলে কি গ্যাস হয়
দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের কারণে আমাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের পেটকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করে। শশা তাদের মধ্যে অন্যতম একটি। শসার মধ্যে থাকা ফ্লেভানয়েড ও আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আমাদের পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমাতে সাহায্য করে এবং পেটকে ঠান্ডা রাখে।
শসা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে আপনার গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে শসার মধ্যে থাকা কুকুরবিটেসিনের কারণে আমাদের পেট ফুলে যাওয়া কিংবা গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।কুকুরবিটেসিনের কারণে শসা তিক্ততা স্বাদ অনুভব হয়।
তবে আপনি যদি শাসাবে পরিমাণ মতো এবং নিয়মিত খান তাহলে এটি আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর করবে এবং আপনার পেটকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। শসার মধ্যে থাকা সিলিকা ও ভিটামিন সি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং গ্যাসের সমস্যা সমাধান করে।
এছাড়াও উচ্চমাত্রায় পানি এবং নিম্ন ক্যালরিযুক্ত হওয়ার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও এটি খাওয়া যায়। তাই গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে এবং স্বাস্থ্য উপকারিত জন্য নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন তবে অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার চেষ্টা করবেন না এতে গ্যাস বেড়ে যেতে পারে এবং স্বাস্থ্য হানি হতে পারে।
ওজন কমাতে শসা খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে শসা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আমরা সকলেই হয়তো জানি শসাতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পানি এবং নিম্ন ক্যালরি। যার কারণে আমাদের দেহে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায় না এবং স্বাস্থ্যের জন্য এটা উপকারী। যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান তারা দৈনন্দিন ডায়েটের সঙ্গে শসা যুক্ত করতে পারেন।
সাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম যা আমাদের ওজন কমানোর পাশাপাশি শারীরিক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং ছোট বড় যেকোনো রোগ ওই সহজে আপনার পাশে ঘেষতে পারবে না। তবে ওজন কমানোর জন্য ইচ্ছা মতো খেলেই চলবে না তার জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
শশা পুষ্টিকর ফল হলেও খালি পেটে শসা খাওয়া যাবে না সকালের নাস্তা করার পর আপনি চাইলে সসা খেতে পারেন। ওজন কমাতে শসা বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। আপনি চাইলে শসার সালাত বানিয়ে খেতে পারেন অথবা সুপ বানিয়েও খাওয়া যায়। এছাড়াও সকাল ও বিকেলের হালকা নাস্তা হিসেবে আপনি সসার সঙ্গে দুই একসঙ্গে মিশে খেতে পারেন।
দ্রুত ওজন কমানোর জন্য আপনি চাইলে বিকেলে হালকা নাস্তা হিসেবে ভাজাপোড়া খাবার পরিবর্তে শসা ও ধনেপাতার স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য এই পানি এটি বানানোর নিয়ম সম্পর্কে আপনার জানা জরুরি।
এই পানিটি বানানোর জন্য একটি শশা কে কয়েক টুকরো করে এর সঙ্গে পরিমাণ মতো ধনেপাতা একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিয়ে হালকা পরিমাণ জল দিয়ে সাধ বাড়ানোর জন্য আপনি চাইলে বিট লবণ ব্যবহার করতে পারেন নিয়মিত খেলে দ্রুত আপনার ওজন কমে আসবে এবং পেটকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
আপনারা চাইলে শসার সালাদ করেও খেতে পারেন। শসার সালাদ খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে দুপুরে এবং রাতে। শসার সালাদ আপনার পেট কে ঠান্ডা রাখতে এবং দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন গবেষণা এটি প্রমাণিত হয়েছে।
কিন্তু দ্রুত ওজন কমানোর জন্য সচার সালাত বানানোর নিয়ম আপনাকে জানতে হবে সেই সঙ্গে সালাতটি যেন মুখরোচক হয় এবং আপনার উপকারে আসে সে সম্পর্কেও বিস্তারিত জানা দরকার। শসার সালাদ বানানোর জন্য আপনাকে পরিমাণ মতো শসার সঙ্গে লেবুর রস,হালকা চিনি এবং কয়েকটি জলপাই এবং আপনি চাইলে জলপাইয়ের তেল (অলিভ অয়েল) ব্যবহার করতে পারেন।
এভাবে খুব সহজেই আপনি দ্রুত ওজন কমানোর জন্য সালাদ বানিয়ে নিতে পারেন। পাশাপাশি এর সাথে আপনি চেরি,টমেটো,গোলমরিচ ও পুদিনা পাতা দিয়ে অন্যদেরও পরিবেশন করতে পারেন। এতে আপনার ওজন দ্রুত কমে আসবে পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য এটি অনেক উপকারী। সালাতের সুপ ওজন কমাতে এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ভালো কাজ করে।
আরো পড়ুনঃকাঁচা আমলকি খাওয়ার সকল উপকারিতা সমূহ
সালাতের এই সুখ আপনি খুব সহজে ঘরে বসে বানিয়ে নিতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন হবে আপনার ৪টি শসা, এক কাপ দই,দুই থেকে তিন চা চামচ পরিমাণ মেথি পাতা,এক কাপ জল ও ভেজিটেবল স্টকের সাথে পরিমাণ মতো লেবুর রস। সকল জিনিসগুলো একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে বানিয়ে ফেলুন ওজন কমানোর কার্যকারী শসার সুপ।
নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনার ওজন দ্রুত কমে আসবে এবং বিকালের হালকা নাস্তা হিসেবে এটি খুবই উপকারী। এছাড়াও আপনারা চাইলে শসার কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা খেলো এটি ওজন কমাতে দারুন উপকার দেয়।
শসা খাওয়ার সঠিক সময়
সসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল যা আমাদের শরীরে জলের চাহিদা পূরণ করে এবং পুষ্টি ঘাটতি পূরণেও বেশ কার্যকরী। এছাড়াও নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে আমাদের সার্বিক অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু আপনাকে শসা খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে হবে। চিকিৎসকদের মতে শসা দিনের বেলাতে খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়।
বিশেষ করে সকালবেলা। আপনি যদি প্রতিদিন সকালবেলা শসা খেতে পারেন তাহলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে এবং গ্যাস ও ওজন কমাতে সাহায্য করবে। তবে শসা সকালে খালি পেটে খাবেন না। সকালে খাবারের পর আপনি চাইলে শসা খেতে পারেন।
যদি সকালে খেতে না পারেন তাহলে দুপুরে খেলেও দারুণ উপকার পাওয়া যায়। তবে শসা রাতে খাওয়া থেকে কিছুটা সাবধান থাকবেন কেননা এতে উপকারের তুলনায় অপকারিতা বেশি প্রকাশ পায়। তাই যতটা সম্ভব রাতের বেলা শসা খাওয়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।
রাতের বেলা শসা খাওয়ার ফলে আপনার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে যেমন হজমের সমস্যা,ঘুমের ব্যাঘাত এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যার স্বীকার আপনি হতে পারেন। তাই যতটা সম্ভব দিনের বেলাতে শসা খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
এতে আপনার শরীরের দারুন উপকারে আসবে। তাই দিনের বেলা নিয়মিত শসা খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং রাতে শসা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
শসা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই শসা খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। আজকে এয়ারটেলে দিতে আমরা শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি।
উপকারিতা
বিষাক্ততা দূর করে
শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি যা আমাদের দেহের বর্জ্য পদার্থ বা ক্ষতিকারক টক্সিক পদার্থগুলোকে দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও যাদের কিডনিতে পাথরের সংসারে যে তারা নিয়মিত শসা খেতে পারেন এতে দ্রুত পাথর গলে যায়।
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে
সসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ,বি ও সি। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং তাৎক্ষণিক শক্তি জগতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য যে সকল ভিটামিনের প্রয়োজন তার বেশিরভাগই শসার মধ্যে পাওয়া যায়। আপনি যদি প্রতিদিন সবুজ শাক ও গাজরের সঙ্গে শসার রস করে খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের যাবতীয় ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ এটি সহায়তা করবে।
ত্বকবান্ধব খনিজের সরবরাহকারী
শসার মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও সিলিকন আমাদের ত্বকের সুরক্ষায় দারুন কাজ করে। তাই ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গোসলের সময় সসা ব্যবহার করতে পারে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
শসার মধ্যে রয়েছে ফাইবার। যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ও বধহজমের সমস্যা গুলো থেকে দূরে রাখে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
শসার মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্ন ক্যালরি আমাদের পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা হওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। যার কারণে নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায় না এবং সার্বিক সুস্থতা বজায় থাকে।
চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে
শসার মধ্যে থাকা প্রদাহ বিরোধী উপাদানগুলো আমাদের চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে এবং তোকে ছানি পড়া দূর করতেও এটি বেশ কার্যকারী।
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে
স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে আপনি চাইলে শসা ব্যবহার করতে পারেন। শসার মধ্যে থাকা উপাদান গুলো চোখের নিচে জমে থাকা ময়লা প্রচারিত করে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটি বেশ কার্যকারী।
চুল ও নখ সতেজ করে
শসার মধ্যে থাকা সিলিকা উপাদান আমাদের চুল ও নখকে সতেজ রাখতে এবং শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও শসার মধ্যে থাকা সালফার ও সিলিকা চুল পড়া রোধ করে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
গেঁটে বাত থেকে মুক্তি
শসার মধ্যে থাকা খনিজ সিলিকা আমাদের গেঁটে দূর করতে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন গাজরের সঙ্গে শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমে আসবে এবং গেঁটেবাতের সমস্যা দূর হবে।
মাথা ধরা রোধ করতে
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর যাদের অতিরিক্ত মাথা ব্যাথা কিংবা শরীর ম্যাচ ম্যাজ করার মত সমস্যা দেখা দেয় মূলত ভিটামিন বি ও সুগার এর ঘাটতির কারণে এরকম হয়ে থাকে। এ সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক টুকরা শসা খেলে দ্রুত এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
শসার মধ্যে থাকা সিকোইসোলারিসিরেসিনোল,ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল নামক আয়ুর্বেদিক উপাদান গুলো জরায়ু,স্তন ও মুত্র গ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনে এবং শরীরে ক্যান্সারের কোষগুলোকে বৃদ্ধি পেতে বাধার সৃষ্টি করে।
হাড় মজবুত করে
শসার মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকার পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন কে। যা আমাদের হাড়ের ক্ষয় হওয়া কমাতে এবং হাড় কে শক্তিশালী করতে এর মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম সাহায্য করে। এছাড়াও হাড়ের গঠন মজবুত ও শক্তিশালী করতেও নিয়মিত শসা খাওয়া উচিত।
দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখতে
শসার মধ্যে থাকা পোস্ট উপাদান গুলো আমাদের মুখের এসিডের ভারসাম্য ও ph এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও দাঁতের প্লাক গুলোকে সুস্থ রাখতে এবং টক্সিক পদার্থ বাইরে বের করতে এটি বেশ কার্যকরী। আপনি যদি নিয়মিত শসা খেতে পারেন তাহলে আপনার দাঁত ও মাড়ির যাবতীয় রোগ থেকে মুক্তি পাবেন এবং ক্ষয় রোধেও এটি বেশ কার্যকরী।
পানির শূন্যতা দূর করতে
গরমে অতিরিক্ত পানি চাহিদা পূরণ করতে এবং শরীরকে ডি হাইড্রেশনের সমস্যা থেকে বাঁচাতে নিয়মিত শসা খেতে পারেন। শসার মধ্যে নব্বই শতাংশই পানি থাকার কারণে এটি আমাদের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং পানি সল্পতা দূর করে।
মানসিক চাপ কমায়
শসার মধ্যে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৫ ও ভিটামিন বি৭ রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণকে বাড়িয়ে তুলে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য বজায় রাখে
শসার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম ও ভিটামিন কে আমাদের হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় কাজ করে। শসার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে পাশাপাশি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাধা ও রক্তে ক্যালসিয়ামের প্রবাহ মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিণ্ডের সুরক্ষায় জন্য ধারণ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
কিডনির সুরক্ষায়
যাদের নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদের শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এই ইউরিক অ্যাসিড আমাদের কিডনির অসুস্থতার জন্য দায়ী। আপনার যদি ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে আপনার কিডনি থাকবে সুস্থ সতেজ ও কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক ও ধমনীতে জমে থাকা এলডিএল গুলোর মাত্রা কমে আসে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
ব্যথা থেকে মুক্তি
শসার মধ্যে থাকা খনিজ সিলিকা এবং গাজর একসঙ্গে রস করে খেতে পারলে তা আমাদের শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘমেয়াদিব্যথা থেকে মুক্তি দিত এটি বেশ কার্যকারী।
হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে
শসার মধ্যে থাকা ফসফরাস মানব শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী মূল উপাদান। আর শসার মধ্যে এই ফসফরাসের মাত্রা চার শতাংশ যা প্রাপ্তবয়স্কদের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন। তাই মানব শরীরে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শসা যুক্ত করতে পারেন।
বলিরেখা দাগ দূর করতে
শসার মধ্যে টাকা ভিটামিন কে ও ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের টানটান ভাব ধরে রাখতে এবং বলিরেখা দাগ সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত শসার ব্যবহারের ফলে বার্ধকের ছাপ কমে আসে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পাই।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
শসার মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের হজম শক্তিকে উন্নত করতে এবং প্রাকৃতিকভাবে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি যারা নিয়মিত সচাকে থাকে তাদের রক্তের শতকরার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে যা আমাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল করে
শসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি যা আমাদের ত্বকের ডিহাইড্রেশন কমাতে সাহায্য করে এবং আদ্রতা ধরে রাখতে বেশ কার্যকারী। নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-বি-নায়াসিন, রিবোফ্লেভিন, ভিটামিন সি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ জিংক পাওয়া যায় যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ত্বকের টানটান ভাব ধরে রাখতেও বেশ কার্যকারী।
অপকারিতা
বন্ধুরা এতক্ষণ আমরা শসা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানলাম। এখন আমরা শসা খাওয়ার অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানব।
হাইপারক্যালিমিয়া
অনেকে আমরা গরমের সময় শরীরে পানির আদ্রতা বজায় রাখতে নিয়মিত শসা খেয়ে থাকি। শসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম। অতিরিক্ত গরমের কারণে আমাদের শরীর থেকে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায় তাই আমরা নিয়মিত শসা খেয়ে থাকি।
কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যদি আপনার শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে হাইপার ক্যালিমিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর আপনি যদি এই সমস্যায় আক্রান্ত হন তাহলে আপনার পেটে গ্যাস,পেট ব্যথা ও কিডনির সমস্যা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
শরীরে জমা হতে পারে টক্সিন
শসা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। তবে যে কোন জিনিসই অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে এর ক্ষতিকর দিকগুলো প্রকাশ পেতে পারে। শসার মধ্যে রয়েছে কিউকারবিটাসিন্স ও টেরাসাইক্লিক টাইটেরপেনয়েডন নামক দুটি টক্সিন পদার্থ যা অতিরিক্ত শসা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে জমা হতে পারে।
যদিও পরিমাণ মতো শসা খাওয়ার ফলে এ দুটি টক্সিন আমাদের তেমন কোন স্বাস্থ্যহানি করতে পারে না। কিন্তু যদি আপনি পরিমাণ এর চেয়ে বেশি পরিমাণ সোজা খেয়ে থাকেন এতে আপনার শরীরে টক্সিন পদার্থ হিসেবে কিউকারবিটাসিন্স ও টেরাসাইক্লিক টাইটেরপেনয়েডন জমা হতে পারে।
পেটের সমস্যা
পেটকে ঠান্ডা রাখতে এবং পেটে যাবতীয় সমস্যা দূর করতে শসা ভীষণ কার্যকারী একটি ফল। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন অতিরিক্ত পরিমাণ শসা খাওয়ার ফলে আমাদের পেটে বদহজম,পেটে ব্যথা,পেট ফাঁপা কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সকলের উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণ শসা খাওয়া এতে আপনার স্বাস্থ্য বজায় থাকবে এবং শসা খাওয়ার ফলে আপনি এর সকল উপকারিতা গুলো পাবেন।
প্রস্রাবের সমস্যা
শসার মধ্যে রয়েছে কিউকারবিটিন নামক উপাদান যা আমাদের দেহে ডাইউরেটিক হিসেবে কাজ করে। যার কারণে আমাদের ঘন ঘন প্রস্রাব বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শসার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকার কারণে বারবার প্রস্রাবে চাপ আছে যা আমাদের শরীরে পানির ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই নিয়মিত পরিমাণমতো শসা খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
কিডনির সমস্যা
অতিরিক্ত শসা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি হয়। আমাদের কিডনির সমস্যার যাবতীয় কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে শরীরের অতিরিক্ত পরিমাণ পটাশিয়াম । তাই আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ সসা খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাবে যা আপনার পেটে গ্যাসপেট ফোলা কিংবা কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শ্বাসকষ্ট
যারা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট কিংবা হাঁপানি ও অ্যাজমার মত সমস্যায় ভুগছেন তারা শসা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। কেননা শসাতে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি থাকার কারণে এতে আপনার শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পেতে পারে।
হার্টের সমস্যা
শশা একটি পানি জাতীয় খাবার। শসার মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি থাকার কারণে আপনি যদি নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণ শসা খেয়ে থাকেন তাহলে তা আপনার শরীরে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলবে যার কারণে আপনার শরীরে রক্তের পরিমাণও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। যদি আপনার ছবির প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণ রক্ত বৃদ্ধি পায় তাহলে আপনার রক্তনালীর উপর হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে যার কারণে আপনার হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
যাদের অতিরিক্ত গ্যাস এর সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণ করে শসা খেয়ে থাকেন এতে আপনার পেটে গ্যাসের সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
হজমের সমস্যা
যাদের রাতে শসা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে, তারা আজ থেকে সচেতন হয়ে যান। শশা ভারী জাতীয় খাবার হওয়ার কারণে রাতে শসা খাওয়ার ফলে আপনার হজম প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা
রাতে অতিরিক্ত পরিমাণ শসা খাওয়ার ফলে পেট ভরে থাকে এবং ঘুমের ব্যাঘাত হয়। এছাড়াও শসায় অতিরিক্ত পরিমাণ জল থাকার কারণে তারা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ শসা খাওয়ার ফলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণের চেয়ে বেশি মাত্রায় শসা খেয়ে ফেলেন এতে আপনার ওজন অনেকটা কমে আছে যেটা আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো বিষয় নয়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শসা খাওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ।
শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা
শসাতে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি থাকার কারণে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণ শসা খাওয়ার ফলে অনেকের পায়ে পানি জমে যাওয়ার মত সমস্যা কিংবা পা ফোলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আশা করছি আপনারা শসা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। শসার সকল অপকারিতা গুলো এড়িয়ে চলতে আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শসা খাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন সুস্থ ব্যক্তির প্রতিদিন ২ থেকে ৩টির বেশি শসা খাওয়া উচিত না।
অতিরিক্ত পরিমাণ শসা খাওয়ার ফলে যে সকল ক্ষতি হতে পারে সেগুলো সম্পর্কে অবশ্যই আপনারা একটি ধারণা পেয়ে গেছেন। তাই যে কোন খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলে আপনি উপকারীতা পাবেন এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণ খেলে আপনার স্বাস্থ্য হানি হতে পারে।
লেখকের মন্তব্যঃশসা খেলে কি গ্যাস হয়-শসা খাওয়ার সঠিক সময়
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url