সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম-সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
আপনি কি নিয়মিত সূর্যমুখীর বীজ খেয়ে থাকেন কিংবা নিয়মিত খাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা পাশাপাশি সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সহ সূর্যমুখী বীজ খেলে কি হয় কিংবা সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।
এছাড়াও আর্টিকেল দিতে থাকছে সূর্যমুখী বীজের দাম কত এবং কোথা থেকে আপনি সূর্যমুখী বীজ ক্রয় করতে পারবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে এ আর্টিকেলটিতে। তাই আপনি যদি সূর্যমুখী বীজ খাবার বিভিন্ন উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনার কাছে অনুরোধ রইলো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃসূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম-সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
ভূমিকা
সূর্যমুখী বীজ একটি সুস্বাদু নাস্তাই নয় বরং স্বাস্থ্যের জন্যও এর উপকারিতা অতুলনীয়। সূর্যমুখী বীজ আমরা মাখন তৈরিতে কিংবা সালাদের সাথে ব্যবহার করতে পারি। সূর্যমুখীর এই ছোট ছোট ব্রিজগুলো প্রয়োজনে পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর। সূর্যমুখীর বীজ পুষ্টির একটি ভান্ডার ধরা হয়। এরমধ্যে ভিটামিন খনিজ সহ প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে।
যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি আমাদের মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের কোষ গুলোকে ফ্রী রেডিক্যাল এর হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি যেমন থায়ামিন,রিবো ফ্লোভিন,নিয়াসিন যেগুলো আমাদের স্নায়ুতন্ত্র কে সুস্থ রাখতে এবং শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজ খেলে ম্যাগনেসিয়াম সেলেনিয়াম ও তামার মত খনিজ এর ঘাটতি পূরণ হয়, যা আমাদের শারীরিক ক্রিয়া-কলাপ ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে লবণহীন শুকনো সূর্যমুখী বীজের(১/৪ কাপ)মধ্যে নিম্নোক্ত পুষ্টি গুলো পাওয়া যায়।
- ক্যালোরি রয়েছে ২০৮ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিনের মাত্রা ৫.৮ গ্রাম
- স্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে ১৯ গ্রাম
- সূর্যমুখী বীজে শর্করা রয়েছে ৭ গ্রাম
- তন্তু রয়েছে ৩.৯ গ্রাম
সূর্যমুখী বীজের এই পুষ্টি উপাদান গুলো পেতে আমাদের নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে পাশাপাশি সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। যা আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে জানতে ও বুঝতে পারবে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
সূর্যমুখী বীজ আমাদের নানা রোগ সারিয়ে তুলতে এবং শরীরকে ভেতর থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এর মধ্যে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান।সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই যার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরে জ্বালাপোড়া কমায় এবং বিভিন্ন রোগ যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস,অ্যাজমা ও বাতরোগের সমস্যাগুলো থেকে দূরে রাখে।
হাড় শক্তিশালী করে
সূর্যমুখী বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড়ের সুরক্ষা এবং হাড়ের উন্নতিতে সাহায্য করে। এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজ খনিজের খুব ভালো একটি উৎস যা আমাদের হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যা আমাদের স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
সূর্যমুখী বীজে রয়েছে উচ্চমানের ফাইটোস্টেরল ও লিগন্যানস যা আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এবং সূর্যমুখী বেঁচে থাকা এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষ তৈরি হওয়া থেকে বিরত রাখে। ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ গুলো থেকে বাঁচাতে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা অতুলনীয়।
বয়সের ছাপ কমাতে
সূর্যমুখী বেঁচে থাকা অ্যান্টি এজিং প্রপার্টিজ আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে তারা ভিটামিন-ই ও বিটাক্যারোটিন ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। বিটা ক্যারোটিন আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশি বা ইউবি রশ্মি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে এবং এর মধ্যে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের বলিরেখা দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তাই ত্বকের স্বাস্থ্য উপকারিতায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়া যেতে পারে।
চুল পড়া রোধ করে
সূর্যমুখী বেঁচে থাকা ভিটামিন বি-৬ আমাদের মাথার স্কাল্পে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে এর উপকারিতা অনেক। এছাড়াও সূর্যমুখী বীজে রয়েছে কপার যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ও রং স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
ত্বক কোমল রাখতে
সূর্যমুখী বিচিত্রে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাটি এসিড যা আমাদের ত্বকের এলাস্টিক ধরে রেখে ত্বককে মসৃণ ও ভেতর থেকে কোমল রাখতে সাহায্য করে।
দাগ দূর করতে
সূর্যমুখী বেঁচে থাকা ফ্যাটি এসিড আমাদের ত্বকের কোলাজেন ও এলাস্টিন তৈরিতে সাহায্য করে যা আমাদের ত্বকের দাগ দূর করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এছাড়াও এর মধ্যে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ আমাদের ত্বককে জীবাণুর হাট থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কোলেস্টেরল কমায়
আমাদের শরীরে যদি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে তা আমাদের হৃদপিন্ডের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। শুধু মুখের বীজে থাকা ফাইটোস্টেরল আমাদের রক্তের খারাপ কলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই হৃদপিন্ডের সুরক্ষায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।
স্নায়ুতন্ত্রকে ভালো রাখে
সূর্যমুখীর বীজ ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস যেটি আমাদের নার্ভ গুলোকে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের মাত্রা থেকে রক্ষা করে এবং স্নায়ুতন্ত্রের কাজকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্য
সূর্যমুখী বীজে থাকা ট্রিপটোফেন নামক অ্যামিনো এসিড যা আমাদের শরীরে সেরোটোনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে আর এই সেরোটোনিন এমন একটি উপাদান যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে পাশাপাশি ক্লান্তি,দুশ্চিন্তা, হতাশার মত সমস্যা গুলো দূর করতেও এর ভূমিকা রয়েছে।
সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
আর্টিকেলটির আগের অংশে আমরা সূর্যমুখী ব্রিজ খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানলাম। আর্টিকেলটির এই অংশে সূর্যমুখী বীজের আরো যে সকল উপকারিতা রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরুতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
হার্টের স্বাস্থ্য বাড়ায়
হার্টের সুরক্ষায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। সূর্যমুখী বীজে থাকা মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড উচ্চমাত্রার ফ্যাট গুলো আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখতে এবং হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এছাড়াও সূর্যমুখীর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং হৃদপিন্ডের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও সূর্যমুখী ভিজে থাকা ভিটামিন ই বিভিন্ন প্রদাহ বিরোধী এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে এবং এর মধ্যে থাকা অক্সিডেটিভ উপাদান স্ট্রেস কমিয়ে হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
সূর্যমুখী বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা আমাদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিক রাখতে এবং মস্তিষ্কের কোষ ও নিউরনকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং ঘনত্ব উন্নত করতেও সাহায্য করে। সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ যা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ি তুলতে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অতুলনীয়।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে
সূর্যমুখীর বীজে থাকা পুষ্ট উপাদান গুলোর মধ্যে আরও একটি পুষ্ট বাধানো হচ্ছে ফাইবার। এই ফাইবার আমাদের পাকস্থলীতে হজম প্রক্রিয়াকে তার কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে এবং নিয়মিত মলত্যাগে উদ্দীপিত করে। এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজে থাকা সাইবার আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে এবং অন্ত্রের মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাই পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
সূর্যমুখী বীজ হয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে এবং ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। সূর্যমুখী বেঁচে থাকা ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংক্রামনজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে জিংক যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে
সূর্যমুখী বীযে থাকা ভিটামিন ই ও অন্যান্য এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চোখের যে ম্যাকুলার গুলো ক্ষয় হয়ে যায় সেগুলো প্রতিহত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে জিক্সানথিন ও লুটেইন যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং ছানি পড়ার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
রক্তে সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দিতে সুজনকে বীজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। সূর্যমুখীর বেঁচে থাকা সাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে যার কারণে আমাদের রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণ শর্করা জমতে পারে না। যেটি আমাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও সূর্যমুখী বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের রক্তে প্রাকৃতিকভাবে ইনসুলিন এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
পুরুষদের জন্য সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই,সেলিনিয়াম ও জিংক যা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো পুরুষের শুক্রাণু উন্নত করতে এবং শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মহিলাদের জন্য সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
সূর্যমুখীর বীজে থাকা পুষ্ট উপাদান গুলো মহিলাদের মেনোপজ এর পর যে সকল মানসিক পরিবর্তন হয় যেমন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া কিংবা গরম ঝলকানি গুলো দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মাসিকের বাধা দূর করতে এবং শিথিলতা বাড়িয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি থেকে মুক্তি। সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ চর্বি জমা হয় না এবং ওজন বৃদ্ধি সম্ভাবনা কমে আসে।
সূর্যমুখীর এই ছোট ছোট বীজগুলো হাজারো পুষ্টি গুণে ভরপুর তাই আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিঃসন্দেহে আপনার ওজন কমানোর জন্য সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। এতে দ্রুত ও ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
সোডিয়ামের চাহিদা মেটাতে
বাজারে বিক্রি কৃত লবণযুক্ত সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার ফলে আমাদের দৈনন্দিন সোডিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। আমেরিকার একটি পত্রিকায় জানানো হয়েছে যে একজন মানুষের দৈনন্দিন লবণের চাহিদা ২৩০০। এই ঘাটতি পূরণের জন্য লবণযুক্ত অন্যান্য খাবারগুলো বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও বাজারে বিক্রিত লবণযুক্ত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যা আমাদের সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে
যারা অ্যানিমিয়ার বা রক্তস্বল্পতা জনিত সমস্যায় ভুগছেন বিশেষ করে মেয়েরা তারা চাইলে প্রতিদিন সূর্যমুখীর বীজ খেতে পারেন। এতে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া জনিত সকল সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। যা আমাদের লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে এবং অ্যানিমিয়ার মতো রোগ থেকে মুক্তি দিতে এর ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
টক্সিক দূর করতে
সূর্যমুখীর বেঁচে থাকা পুষ্ট উপাদান গুলো আমাদের শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিক পদার্থ গুলো বের করতে এবং তাৎক্ষণিক এনার্জি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সূর্যমুখী বীজ যুক্ত করতে পারেন তাহলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যাবে।
গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে
গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও হাড়ের গঠন সঠিকভাবে হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ। যার ভালো উৎস হিসেবে সূর্যমুখীর বীজ খাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো শিশুর মস্তিষ্কের এবং হাড়ের গঠন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে পাশাপাশি এর মধ্যে থাকা ভিটামিন ই গর্ভের সন্তানের দ্রুত বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম
এতক্ষণ আমরা সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানলাম। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। যার উত্তর আশা করি আর্টিকেলটির এই অংশ পড়লে আপনারা পেয়ে যাবেন।
স্নাক্স হিসেবে: আপনি চাইলে সূর্যমুখীর বীজ খাবারের সাথে কিংবা সকালে নাস্তার সাথে এক মুঠো সূর্যমুখী বীজ খেতে পারেন।
সালাদের সাথে: মুখরোচক এই সূর্যমুখীর বীজ আপনি বিভিন্ন সালাদের সাথে মিশিয়ে অথবা ওপরে ছিটিয়ে খেতে পারেন।
স্মুদির মিশ্রণে: একটি ক্রিমি ভাব আনতে এবং অতিরিক্ত পুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য স্মুদিতে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন।
দই বা ওটমিল: আপনি চাইলে সূর্যমুখীর বীজ দইয়ের সাথে কিংবা রাতে ওটস এর সাথে ছিটিয়ে খেতে পারেন।
বেকিং এ ব্যবহার করে: আপনি চাইলে রুটি,মাফিন বা গ্ৰানোলার স্বাদ বৃদ্ধির জন্য একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
শীর্ষ স্যুপ বা নাড়ুন ভাজা: সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার নিয়ম গুলোর মধ্যে আপনি এই নিয়মটি অনুসরণ করতে পারেন। এর জন্য বিভিন্ন সুখের সাথে একসাথে মিশিয়ে কিংবা নাড়া ভাজাতে ছিটিয়ে খেতে পারেন।
সূর্যমুখী বীজ মাখন তৈরি করুন: আপনি চাইলে সূর্যমুখীর বীজ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে তা টোস্ট কিংবা স্যান্ডউইচ এর সাথে মাখন হিসেবে ব্যবহার করে খেতে পারেন এতে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি এরশাদ কয়েক গুণ মুখরোচক হয়ে উঠবে।
এছাড়াও আপনি চাইলে নিম্নোক্ত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
- লেজ মিশ্রণের সাথে যোগ করে খেতে পারেন
- সূর্যমুখীর বীজ দিয়ে কুকিজ বানিয়ে খেতে পারেন
- সবুজ শাক সবজির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
- গরম বা উষ্ণ সিরিয়ালের সাথে যোগ করে খাওয়া যায়
- ফলের কিংবা অন্যান্য যে কোন সালাদের সাথে মিশে খেতে পারেন
- শুধু মুখের বীজ ভেজে খালি মুখে খেতে পারেন
- চিকেন কিংবা টুনা সালা দেও যোগ করে খেতে পারেন
- ভাজা সবজির ওপরে ছিটিয়ে খেতে পারেন
এছাড়া আপনারা চাইলে আপেল কিংবা কলার উপর সূর্যমুখীর বীজ ছড়িয়ে খাওয়া যায়।
সূর্যমুখী বিজ খাওয়ার উপরোক্ত নিয়মগুলো আপনি অনুসরণ করে খেতে পারেন। এতে আপনার খাবারের স্বাদ যেমন বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি এর পুষ্টিগুণ ণ গুলো আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে। তাই উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে প্রতিদিন সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
সূর্যমুখী বীজের দাম কত
দামে যেমন সস্তা তেমনি সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। বাংলাদেশের আবহাওয়া সারা বছরের সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যায় এবং এর উপকারিতার তুলনায় এর দাম খুব একটা বেশি নয়। সূর্যমুখী বর্তমান বাজার মূল্য ১০০০ থেকে ১৫০০ প্রতি কেজি আপনি পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আপনি অনলাইন থেকে এর দাম জানতে পারেন এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও পেজের মাধ্যমে সূর্যমুখীর বীজ কিনে খেতে পারেন। অনলাইন থেকে সূর্যমুখী বীজ কেনার বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে দারাজ।
আপনি যদি দারাজ অ্যাপস থেকে থাকে তাহলে আপনি খুব সহজে সূর্যমুখীর বীজের দাম জানতে পারবেন এবং অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করতে পারবেন। এছাড়াও অনেক ফেসবুক পেজ রয়েছে যারা অর্গানিক সূর্যমুখীর বীজ বিক্রয় করে থাকে সেখান থেকে আপনি সূর্যমুখী বীজের বর্তমান দাম জানতে পারবেন এবং কিনতেও পারবেন।
এছাড়া আপনি যদি চান তাহলে গুগলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে সূর্যমুখের বীজ বিক্রয় করা হয় সেগুলো থেকেও আপনি যোগাযোগ করে সূর্যমুখী বীজের বর্তমান দাম এবং গ্রহণ পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে অর্ডার করতে পারেন।
সূর্যমুখী ফুলের বীজ খেলে কি হয়
সূর্যমুখীর বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতার হাজারো পুষ্টি গুনাগুন যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ পাশাপাশি সতেজ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সূর্যমুখী ফুলের বীজ খাওয়ার ফলে শরীরে যে সকল উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়।
- শরীরে কোন ক্যান্সার কোষ বাঁচাতে পারে না
- হাড়ের সুরক্ষায় প্রতিদিন সূর্যমুখীর বীজ খাওয়া উচিত
- সূর্যমুখীর বীজ খেলে আমাদের মন শান্ত ও স্থির থাকে
- প্রতিদিন সূর্যমুখীর বীজ খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দূর হয়
- শুধু মুখের বীজ আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির কাজে সাহায্য করে
- সূর্যমুখী বীজ খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- সূর্যমুখী রিতা আমাদের সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি বা আল্ট্রাভায়োলেটরে থেকে রক্ষা করে।
- বদহজমের সমস্যাগুলো দূর করে
- হাঁপানি সাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে
- জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- হাড়ের গঠন মজবুত করে
প্রতিদিন সূর্যমুখীর বীজ খেলে আপনারা উপরোক্ত উপকারিতা গুলো পাবেন এছাড়াও আরো যে সকল উপকারিতা রয়েছে তা আমরা এর আগেই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা
এতক্ষণ আমরা সূর্যমুখীর বীজ ক্ষার বিভিন্ন উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। এখন আমরা সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার বিভিন্ন অপকারিতা গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনার কাছে অনুরোধ করা হলো।
১/সূর্যমুখী বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি।যা আমাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে এবং এর মধ্যে থাকা সোডিয়াম আমাদের শরীরে বৃদ্ধি পেলে রক্তচাপের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২/সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ক্যাডমিয়াম নামক ভারী ধাতু যা আমাদের কিডনি ও লিভারের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৩/সূর্যমুখীর বীজ যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয়ে থাকে তাহলে এর সঙ্গে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া যেমন সালমোনেল্লা নামক ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
৪/যাদের এলার্জির জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে কিংবা মুখের ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫/অতিরিক্ত পরিমাণ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে আমাদের পেটে ফাইবারের পরিমাণ বেড়ে যায় যার কারণে খাবার হজম হওয়ার প্রক্রিয়ায় বিঘ্নিত ঘটে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বদ হজমের মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৬/অতিরিক্ত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা বমি বমি ভাব হতে দেখা দেয়।
৭/অতিরিক্ত সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার ফলে ত্বকের জ্বালাপোড়া কিংবা ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরুতে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই খাওয়ার পরিমাণ খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত। এতে আমরা সেই খাবারের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে যেমন জানতে পারবো তেমনি এর ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কেও আমরা জানতে পারবো।
তাই যে কোন খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই সে খাবার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে অনেক বড় ধরনের সাস্থানে হওয়ার হাত থেকে আপনি রক্ষা পাবেন। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সূর্যমুখীর বীজ সম্পর্কিত আরো কোন বিষয় সম্পর্কে যদি আপনার জানার থাকে তাহলে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। সকলে ভালো থাকবেন আসসালামু আলাইকুম।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোস্টটি সচেতনতার জন্য লেখা। অবশ্যই যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন এবং ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিবেন।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url