মুখে চুলকানি বা এলার্জি দূর করার উপায়-মুখে এলার্জি কেন হয়
আপনি কি মুখে এলার্জি কিংবা চুলকানির সমস্যায় ভুগছেন। চর্ম এলার্জি এবং হঠাৎ এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের এ আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এছাড়াও জানতে পারবেন মুখে চুলকানি দূর করার উপায়,চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় এবং আরো জানতে পারবেন হঠাৎ করে এলার্জির সমস্যা দেখা দিলে দূর করার উপায়।
আরো জানতে পারবেন কোন কোন খাবারে অ্যালার্জি আছে তার তালিকা সম্পর্কে এবং মুখে এলার্জি কেন হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের এই আর্টিকেলটিতে। তাই আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কেউ যদি এলার্জি কিংবা চুলকানির সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃমুখে চুলকানি বা এলার্জি দূর করার উপায়
ভূমিকা
বর্তমানে এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। এলার্জি থেকে খুব সহজেই সুস্থ থাকা যায় যদি আপনি কি থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে পারেন। মূলত যদি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইউনিয়ন সিস্টেম শক্তিশালী বা প্রতিরোধক হয় তাহলে খুব সহজেই অ্যালার্জি কিংবা চুলকানির মত সমস্যাগুলো দেখা দেয় না।
কিন্তু অনেক সময় এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ কিংবা এলার্জেন সৃষ্টিকারী অতিপ্রক্রিয়া জাতক বস্তু যেগুলো সাধারণত ক্ষতিকারক নয় কিন্তু এগুলো যখন আমাদের ইউনিয়ন সিস্টেমকে দুর্বল করে তুলে তখন এলার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দেয়। আমাদের ত্বকে রোগ প্রতিরোধক যে কোষ থাকে তা মূলত প্রোটিন বা অ্যান্টিবডি এর কারনে সৃষ্টি ইমিউনোগ্লোবুলিন ই।
কিন্তু যখন এলার্জিক বস্তুগুলো শরীরে প্রবেশ করে তখন এই ইমিউনোগ্লোবুলিন ই শরীরের বিভিন্ন কোষের প্রতিক্রিয়া বা এলার্জির সৃষ্টি করে যার কারণে হিস্টামিন মিশ্রিত হয় এবং এলার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ বা সমস্যার দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে এলার্জি বিভিন্ন কারণে হতে পারে তবে সেটা কি ধরনের এলার্জি তা কারণ ও লক্ষণের উপর নির্ভর করে। যেমন:
- বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে এলার্জি
- অ্যানাফাইলেটিক রিঅ্যাকশন বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া
- শ্বাস প্রশ্বাসের কারণে এলার্জির প্রতিক্রিয়া
- বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণে এলার্জি
- রাবারের কারণে এলার্জির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া
- পোকামাকড়ের কারণে এলার্জির প্রতিক্রিয়া
- এছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে এলার্জির বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয়
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা এলার্জি কি এবং এলার্জির প্রতিক্রিয়া হওয়ার বিভিন্ন কারণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আর্টিকেলটির অংশ আমরা অ্যালার্জি হলে কি কি ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পাই কিংবা কোন কোন সমস্যাগুলো দেখা দিলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার এলার্জি রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
- শরীরের বিভিন্ন অংশে চাকা চাকা হয়ে যাওয়া কিংবা ফুলে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
- ত্বকে ফোসকা পড়া কিংবা চামড়া ঝরে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
- চামড়ায় চুলকানি কিংবা ফুসকুড়ির মত সমস্যা দেখা দেওয়া।
- নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া।
- নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সময় বুকে ভারী চাপ অনুভব করা।
- শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ বের হওয়া।
- বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়া।
- পেটে প্রচন্ড ব্যথা কিংবা ডায়রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
- শুকনো ও অতিরিক্ত পরিমাণ হাঁচি ও কাশি হওয়া।
- নাকে ও গলায় চুলকানির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
- চোখ দিয়ে অতিরিক্ত পানি পড়া।
- হঠাৎ চোখে চুলকানির সমস্যা দেখা দেওয়া।
- চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়া কিংবা চোখের পাপড়ি ফুলে যাওয়া।
- ঠোঁট,জিব্বা,চোখ,মুখ ফুলে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
- নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সময় বুকে ঘড় ঘড় আওয়াজ বের হওয়া।
- হঠাৎ করে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেওয়া।
উপরোক্ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো যদি আপনার মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে আপনি নিশ্চিত অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছেন। এ সময় আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী জীবন যাপন করা আবশ্যক।
মুখে চুলকানি বা এলার্জি দূর করার উপায়
মুখে চুলকানি কিংবা এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় অনেকের ক্ষেত্রেই। যার কারণে অনেকেই অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ে আবার এলার্জির কারণে প্রাণ হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। মুখে চুলকানি কিংবা এলার্জির সমস্যা গুলো দেখা দিলে কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে তা দূর করবেন আর্টিকেলটির এই অংশ আমরা সে বিষয়ে সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
অলিভ অয়েল: মুখে চুলকানি কিংবা এলার্জি দূর করার জন্য নিয়মিত এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি মুখের প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ অলিভ অয়েল মুখের চুলকানি বা এলার্জি সমস্যা দূর করে।
নিম পাতা: প্রাকৃতিকভাবে মুখের এলার্জির সমস্যা দূর করতে এবং চুলকানির মতো সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করতে নিয়মিত নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিক এই উপাদানটি ৩০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে নিলে মুখের এলার্জি ও চুলকানির যাবতীয় লক্ষণগুলো তাৎক্ষণিক দূর করতে বেশ কার্যকারী।
কোল্ড শাওয়ার: মুখের চুলকানি ও এলার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে ঠান্ডা পানি কিংবা বরফ ব্যবহার করতে পারেন। এতে মুখের রক্তনালী গুলো সংকুচিত করতে সাহায্য করবে এবং হিস্টামিন নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করবে। যা এলার্জির তীব্রতা ও চুলকানির সমস্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তুলসী: প্রাকৃতিক তুলসী পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যার ত্বকের চুলকানি হ্রাস করতে এবং এলার্জির সমস্যা চিরতরে দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতাকে ভালোভাবে বেটে পেস্ট করে নিয়ে ৩০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর হালকা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে ধুয়ে নিলে এটি এলার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে এবং চুলকানি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
নারকেল তেল: শিশু,বয়স্ক এবং যেকোনো বয়সীদের মুখের এলার্জি ও চুলকানি সমস্যা দূর করতে নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিক এই উপাদানটি এলার্জির তীব্রতা হ্রাস করতে এবং চুলকানি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
প্রতিদিন এক চামচ পরিমাণ নারিকেল তেল হালকা গরম করে এলার্জি আক্রান্ত স্থানে 30 মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ভালোভাবে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত নারিকেল তেল দিনে ৩ বার থেকে ৪ বার ব্যবহার করুন। আশা করছি খুব দ্রুত আপনি মুখের চুলকানি ও এলার্জি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
অ্যালোভেরা জেল: এলোভেরা জেল একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং এর মধ্যে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা প্রাকৃতিকভাবে চুলকানির সমস্যা দূর করতে এবং হিস্টামিনের ক্ষরণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। যা এলার্জি প্রতিরোধ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মুখের চুলকানি ও এলার্জি দূর করার জন্য নিয়মিত এলোভেরা জেল ব্যবহার করা যায়।
কুলিং ময়েশ্চারাইজার: মুখের চুলকানি ও এলার্জির প্রতিক্রিয়া দূর করতে ফ্রিজে রাখতে পারেন মুখে ব্যবহারের মশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন। যখন মুখে এলার্জি কিংবা চুলকানির লক্ষণগুলো প্রকাশ পাবে তখন ফ্রিজ থেকে বের করে মশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করলে এটি মুকে শীতল করতে এবং চুলকানির প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
ওয়েট রাপ থেরাপি: এ থেরাপির মাধ্যমে মূলত চুলকানি বা এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া জায়গাতে গজ বা সার্জিক্যাল নেটের মাধ্যমে তৈরি কাপড় জলে ভিজিয়ে চিকিৎসা করা হয়।। এই থেরাপির মাধ্যমে মূলত চুলকানি বা এলার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধক মূলক বাধা প্রদান করা হয় যার ত্বককে রিহাইড্রেট ও প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
কলয়েডাল ওটমিল: মুখের চুলকানি ও এলার্জি সমস্যা দূর করতে জলে ভেজানো ওটমিল ব্যবহার করা যায় যা মুখের এলার্জি বা চুলকানির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক বাধা তৈরি করে। এবং মুখের আদ্রতা বন্ধ করতে,শুষ্কতা ও চুলকানির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
মধু: মুখে এলার্জি ও চুলকানি সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিকভাবে মধু ব্যবহার করা যায়। মধুর প্রাকৃতিক উপাদান গুলো এলার্জিনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে এবং মধুর প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য মুখের এলার্জি চুলকানি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
চর্ম এলার্জি দূর করার উপায়
ত্বক বা চর্ম এলার্জিজনিত সমস্যায় বর্তমানে অনেকেই ভুগছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এবং কিছু নিয়ম অনুসরণ করার মাধ্যমে জন্ম এলার্জি চিরতরে দূর করা যায়। যদি জেনে না থাকেন তাহলে আর্টিকেলটির এই অংশ সম্পূর্ণ। আমরা জন্ম এলার্জি দূর করার যাবতীয় উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
আরো পড়ুনঃমেয়েদের হার্টের সমস্যার সকল লক্ষণ সমূহ
হলুদ: হলুদের রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাংগাল উপাদান যা এলার্জি সমস্যা দূর করতে এবং চর্মরোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। চর্ম এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা হলুদ বাটা ব্যবহার করতে পারেন অথবা ভাতের সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলেও চর্ম এলার্জি দূর হয়।
তিতা জাতীয় খাবার: চর্ম এলার্জির দূর করতে তিতা জাতীয় খাবার যেমন করলা ও নিম পাতা ভাজা খাওয়া যায়। যারা চর্ম এলার্জি সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে কাঁচা করলা অথবা নিমপাতা ভাজা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন এতে চর্মবারকের যাবতীয় সংক্রমণ দূর হয় এবং এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল: চর্ম বা ত্বকের এলার্জি কিংবা চুলকানি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত গোসল করার সময় গোসলের পানিতে ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিলে চর্ম এলার্জি সমস্যা দূর হয়। অথবা আপনি চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল এর ভাপ নিলেও এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ঠান্ডা এগিয়ে চলা: ঠান্ডা লাগার কারণে অনেকের এলার্জির লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। বিশেষ করে ঠান্ডার সময় মেঝেতে খালি পায়ে হাঁটলে কিংবা গরমের সময় মেঝেতে শুলে এবং গোসলের সময় অতিরিক্ত সময় ধরে গোসল করলেও এলার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
বেকিং সোডা: বেকিং সোডা ত্বকের ph এর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং বেকিং সোডার প্রদাহ বিরোধী উপাদান গুলো এলার্জি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যাইহোক এর জন্য আপনাকে ১২ চামচ পানির সাথে ৪ চামচ বেকিং সোডা ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে এবং এলার্জির স্থানে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর স্বাভাবিক পানি ব্যবহার করে ধুয়ে নিতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: চর্ম বা ত্বকের এলার্জির অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা। তাই জন্মগত এর এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত গোসল করুন এবং পরিষ্কার জামা কাপড় পরিধান করুন।
হঠাৎ এলার্জি দূর করার উপায়
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যাই কোনরকম কারণ ছাড়াই হঠাৎ এলার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এমন সময় অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের পূর্বেই রোগীর মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়ায়। এমন সময় কিভাবে এলার্জি দূর করা যায় সে বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেলটির এই অংশে আলোচনা করা হবে।
তাই আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কেউ যদি হঠাৎ করে এলার্জির সমস্যার মুখোমুখি হন তাহলে নিম্নোক্ত উপায় গুলো অনুসরণ করে এলার্জি থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পেতে পারেন।
লেবু: হঠাৎ করে যদি এলার্জির লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে লেবুর রস ব্যবহার করে এলার্জির প্রতিক্রিয়া কমানো যায়। লেবুর রসের রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা চুলকানি কমাতে এবং এলার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এলার্জি বা চুলকানির সমস্যা দূর করার জন্য লেবুর রস ব্যবহার করা খুবই সহজ। শরীরের যে অংশে এলার্জির লক্ষণ বা সমস্যা প্রকাশ পেয়েছে সে অংশে লেবুর রস লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর যখন লেবু রস শুকিয়ে আসবে তখন পরিষ্কার পানি ব্যবহার করে ধুয়ে নিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই চুলকানির কিংবা এলার্জি পরিমাণ কমে আসে।
পুদিনা পাতা: হঠাৎ এলার্জির সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিক ভাবে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা যায়। পুদিনা পাতার মধ্যে অ্যান্সথেটিক ও ইনফ্লামেটরি উপাদান চুলকানি প্রতিরোধ করতে ও এলার্জি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
পুদিনা পাতা চুলকানির প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যায় এর জন্য একমুখ ফুটন্ত পানিতে এক মুঠ পরিমান পুদিনা পাতা ভালোভাবে জাল দিয়ে এর নির্যাস বের করে নিতে হবে এবং চুলকানির স্থানে লাগিয়ে নিলে কিছুক্ষণের মধ্যে চুলকানি সমস্যা এবং এলার্জি প্রতিরোধ হয়।
চন্দন: গবেষণায় প্রমাণিত চন্দনের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেন্ট এর উপাদান ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং চুলকানি ও এলার্জি সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এর জন্য আপনাকে একটি ছোট পাত্রে পরিমাণ মতো চন্দনের গুঁড়ো এর সাথে অল্প পরিমাণ জল মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এই পেজটি এলার্জিতে স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর ধুয়ে নিলে অল্প দিন ব্যবহারে এলার্জি ও চুলকানির সমস্যা দূর হয়।
টি-ট্রি-অয়েল: আপনার যদি হঠাৎ করে এলার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় কিংবা আপনার যদি এলার্জি সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার ঘরে প্রাকৃতিক টি-ট্রি-অয়েল রাখা উচিত।
এটি এলার্জি সমস্যা দূর করতে এবং চুলকানির মতো সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিল ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা ত্বকের এলার্জি সমস্যা দূর করতে এবং হঠাৎ করে ত্বকে লালচে ভাব ও চুলকানির সমস্যা দেখা দিলে তা থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার: ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং হজমের সমস্যা দূর করতেই যে শুধু অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয় বিষয়টা কিন্তু এরকম নয়। ত্বকের এলার্জি ও চুলকানি সমস্যা দূর করতেও এটি দারুন কার্যকর। এর মধ্যে থাকা অ্যাসিটিক এসিড ত্বকের চুলকানি ও এলার্জির প্রভাব কমাতে সাহায্য করে এবং হঠাৎ করে এলার্জি সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সারিয়ে তুলতেও বেশ কার্যকারী।
লবণ পানি: যাদের এলার্জির কারণে হঠাৎ করে চোখ ফুলে যায় কিংবা চোখ জ্বালাপোড়া বা চোখ লালচে হয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তারা এক গ্লাস পানির সাথে তিন চামচ পরিমাণ লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফোটানোর পর যখন পানি ঠান্ডা হয়ে আসবে তখন পরিষ্কার তোলার সাহায্যে চোখে গরম শেক দিলে দ্রুত চোখের এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সায়েনি:সায়েনি এক ধরনের হার্ভ যা শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে জমে থাকা ক্ষতিকারক টকশিক পদার্থ গুলো দূর করতে সাহায্য করে এবং এলার্জি বা চুলকানির মতো সমস্যাগুলো দূর করে।
রসুন: রসুন প্রাকৃতিকভাবেই ছত্রাক,ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই যদি হঠাৎ করে আপনার এলার্জি কিংবা চুলকানি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে কয়েকটি রসুন খেত করে সেই রস সেই এলার্জিক স্থানে লাগিয়ে রেখে দিন এতে দ্রুত এলার্জি সমস্যা দূর হবে।
গোলাপজল: গোলাপজল চোখের এলার্জির সমস্যা দূর করতে এবং চোখের ইনফেকশন সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। আপনার যদি বিভিন্ন কারণে চোখের এলার্জি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দুই থেকে তিন ফোঁটা গোলাপজল এলার্জিতো স্থানে ব্যবহার করুন এবং কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখুন এতে খুব দ্রুত আপনার চোখের এলার্জি সমস্যা এবং ইনফেকশনের সমস্যা দূর হবে।
আমলকি ও মধু: প্রথমেই আমলকি কে ভালোভাবে শুকিয়ে পাউডার করে নিন এবং প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমলকির পাউডার এর সাথে মধু মিশে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যা আপনাকে এলার্জি সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
পেয়ারা: পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা ঠান্ডা জনিত কারণে এলার্জি যে সকল সমস্যা হয় সে সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পেয়ারার পাশাপাশি আপনি লেবুর শরবত কিংবা লেবুর চা খেলেও দারুণ উপকার পাওয়া যায়।
ঘি: ঠান্ডা জনিত কারণে এলার্জির যে সকল সমস্যা দেখা দেয় ঘি সে সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। শীতে অনেকেই ঠান্ডার কারণে এলার্জির বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন এ সময় যদি আপনি এক চামচ পরিমাণ বেশি ঘি খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার ঠান্ডা জনিত এলার্জি সমস্যা দূর হবে।
কালোজিরা: শুধু এলার্জি সমস্যা নয় মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ওষুধ কালোজিরা আপনার এলার্জি সমস্যা দূর করতে এবং হঠাৎ এলার্জির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। তাই সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করুন এর সঙ্গে আপনি চাইলে মধু যুক্ত করতে পারেন।
কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে তার তালিকা
এলার্জির লক্ষণ গুলো প্রকাশ করার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে অস্বাভাবিক খাবার খাওয়া। এলার্জির লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে খাবারের এলার্জি। অনেকের বিভিন্ন খাবার খাওয়ার কারণে এলার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। আর্টিকেলটির অংশ আমরা এমন ১০ টি খাবার সম্পর্কে জানব যেগুলো এলার্জির অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।
ডিমের সাদা অংশ: ডিমকে এলার্জির সমস্যা সৃষ্টির অন্যতম একটি কারণ ধরা হয় তবে ডিমের গোটা অংশ নয় কেবলমাত্র ডিমের সাদা অংশটুকু কে এলার্জির কারণ ধরা হয়। মূলত ডিমের সাদা অংশের প্রোটিন বেশি থাকার কারণে তা এলার্জির লক্ষণ গুলো কে উদ্দীপ্ত করে। চিকিৎসকদের মতে ৬০ শতাংশ শিশুদের ক্ষেত্রে এলার্জির অন্যতম কারণ হচ্ছে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া।
গরুর দুধ: যারা নিয়মিত গরুর দুধ খেয়ে থাকেন তাদের চর্ম এলার্জির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বিশেষ করে তিন বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ম এলার্জির লক্ষণ বেশি প্রকাশ পায়। গবেষণায় দেখা গেছে ৯০% শিশুদের ক্ষেত্রে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গরুর দুধ। তাই চিকিৎসকরা কখনোই তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন না। বরং এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বাদাম: এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকায় বাদাম অন্যতম একটি নাম। অধিকাংশ লোকের ক্ষেত্রেই বাদামে এলার্জি থাকার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। সেটা বিভিন্ন ধরনের বাদামের ক্ষেত্রে হয়ে থাকতে পারে আবার অনেকের সব ধরনের বাদামে এলার্জি হয়ে থাকে। তাই যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাদাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
গম: এলার্জি সৃষ্টির অন্যতম একটি খাবার হলো গম। বিশেষ করে গমের আটা ও পাউরুটি খাওয়ার মাধ্যমে অনেকেই এলার্জির সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখা গেছে।
সয়া: সাধারণত অনেকের ক্ষেত্রেই সয়া খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হয়। চিকিৎসকদের মধ্যে সহায় জাতীয় খাবার যেমন সয়াবিনস ও সয়া মিল্ক জাতীয় খাবারের কারণে এলার্জির যে সমস্যা দেখা দেয় তা ১০ বছর বয়সের পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
ফল ও সবজি: বেশ কিছু ফল ও সবজি রয়েছে যেগুলো এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির অন্যতম একটি খাবার। যেমন বেগুন,গাজর,টমেটো,পিচ ও কলা। সকল খাবারগুলো খাওয়ার ফলেও এলার্জির বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শেল ফিস: কিছু কিছু খাবার যেমন চিংড়ি, কাঁকড়া,ওয়েস্টার,শামুক জাতীয় শেল ফিস গুলোর মধ্যে শক্ত খোলোস থাকার কারণে বিশ্বের প্রায় ৬০% লোকেরাই এই শেল ফিস গুলোর দ্বারা এলার্জির শিকার বেশি হয়ে থাকেন।
চিনা বাদাম: শিশুদের এলার্জিতে আক্রমণের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে চিনা বাদাম খাওয়া। এলার্জি সৃষ্টির জন্য এটি অন্যতম একটি খাবার ধরা হয় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অতিরিক্ত পরিমাণ চীনা বাদাম খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে বলেন।
মাছ: অনেকের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ প্রজাতির মাছের মাধ্যমে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন স্যালমন মাছ,টুনা মাছ ও ম্যাকরলে জাতীয় সামুদ্রিক মাছ খেলে অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা গুলো তীব্র হয়ে ওঠে।
সালফাইট: বাজারে যে সকল আকর্ষণীয় ও লোভনীয় খাবার বিক্রি করা হয় এগুলোর রং ধরে রাখার জন্য কিংবা বাদামী রং ধরাতে অনেকেই খাবারে সালফাইট ব্যবহার করে থাকেন। যা অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
প্রিয় পাঠক এ তখন আমরা এলার্জির কারণে সৃষ্টি বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করলাম এমনকি এলার্জি থেকে বাঁচার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। কোন কোন খাবারে এলার্জির প্রতিক্রিয়া গুলো বেশি প্রকাশ পায় সেই সম্পর্কেও ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু এসব এলার্জির কারণ কি এবং কোন পদার্থ গুলোর সংস্পর্শে আসলে বেশি এলার্জির লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তা আমরা এর পরবর্তী অংশে জানতে পারবো।
মুখে এলার্জি কেন হয়
সাধারণত আমাদের মুখে কিংবা ত্বকে এলার্জির অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের দুর্বল ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সাধারণত আমাদের ইমিউন সিস্টেম শরীরের উপর প্রতিরক্ষামূলক এই ধরনের আবরণ সৃষ্টি করে কিন্তু যখন এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী পদার্থগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
তখন তা ইমিউন সিস্টেমকে আঘাত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে দুর্বল করে তুলে যার কারণে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন বা অ্যান্টি বডি ইমিউনোগ্লোবুলিন ই আমাদের শরীরকে ছত্রাক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয় যার কারণে শরীরে এলার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় এবং অতিরিক্ত হিস্টামিন নিঃসৃত হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের এলার্জির লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
লেখকের মন্তব্যঃমুখে চুলকানি বা এলার্জি দূর করার উপায়
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url