গরম পানি লেবু খাওয়ার সকল উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনারা যারা নিয়মিত গরম পানি লেবু খেয়ে যাচ্ছেন তারা নিজের অজান্তেই দেহের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন না তো। কিংবা যারা নিয়মিত গরম পানি লেবু খাওয়ার চিন্তা করছেন তাদের অবশ্যই গরম পানি লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা উচিত। আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা গরম পানি লেবু খাওয়ার উপকারিতা এবং গরম পানিতে লেবু খাওয়ার অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এছাড়াও আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন গরম পানিতে মধু ও লেবুর অপকারিতা, লেবু মধু গরম পানির উপকারিতা, লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত এবং লেবুর শরবত খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। তাই আপনি যদি নিয়মিত গরম পানি লেবু খাওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকেন বা নিয়মিত খাচ্ছেন তাহলে অবশ্যই আপনার উপরোক্ত সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।
পোস্ট সূচীপত্রঃগরম পানি লেবু খাওয়ার সকল উপকারিতা ও অপকারিতা
ভূমিকা
অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ে চুমুক দিয়ে দিন শুরু করতে পছন্দ করে। কিন্তু সকালবেলা খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে চা পান করলে এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পায় এবং ক্রমেই তা আলসারে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চায়ের পরিবর্তে যদি আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করেন তাহলে অনেক বেশি ভালো হয়।
এতে যেমন আপনার স্বাস্থ্য উপকার হবে তেমনি লেবুর মধ্যে থাকা পোস্ট উপাদান গুলো আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। লেবু পছন্দ করে না এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। অনেকেই ভাতের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খান অনেকেই আবার লেবুর শরবত বানীয়ও খেয়ে থাকেন।
কিন্তু আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়তে পারেন তাহলে লেবু খাওয়ার সকল উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এছাড়াও জানতে পারবেন কোন নিয়ম অনুসরণ করে লেবু ভাতের সাথে কিংবা শরবত করে খেলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। তাই সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরুতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
গরম পানি লেবু খাওয়ার উপকারিতা
গরম পানি ও লেবুর রস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরম পানি লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
হৃদরোগ ও স্টোকের ঝুঁকি কমায়: লেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে,সংবহনতন্ত্রের সুরক্ষায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। চিকিৎসকদের মতে একটি স্বাভাবিক আকারের লেবুর মধ্য থেকে ১৮.৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন সি পাওয়া যায়। অন্যদিকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদা ৬৫ থেকে ৯০ মিলিগ্রাম যার ম্যাক্সিমাম অংশ লেবুর মাধ্যমে পূরণ হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে এটি পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে লেবুর টক স্বাদ পাচনতন্ত্রের হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে এবং হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও পাচনতন্ত্রের মধ্যে জমে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থগুলো বের করতেও সকালের গরম পানিতে লেবুর রস খাওয়া যায়।
ত্বক ভালো রাখে: লেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের ত্বকের অবাঞ্ছিত বলি রেখা দাগ,বার্ধক্য জনিত সমস্যা এবং সূর্যের ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে। শরীরে পানির প্রবণতা কমে আসলে বলিরেখা দাগ এর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
এই সমস্যা থেকে ত্বককে বাঁচাতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে উষ্ণ গরম পানির সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
মুখের গন্ধ দূর হয়: অনেকেই রসুন,পেঁয়াজ কাঁচা খেতে পছন্দ করেন। যার কারণে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও মাছ খাবার পর মুখে মাছের আঁশটে গন্ধ বের হয়।
এছাড়াও অন্য যে সকল কারণে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। লেবু আমাদের লালাগ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে এবং মুখের মধ্যে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে কয়েক ফোটালেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে শরীরের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
কিডনির সুরক্ষায়: কিডনির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এছাড়াও লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল যা আমাদের ত্বকের ভেতরে জমে থাকা টক্সিক পদার্থগুলো দূর করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়: আপনি যদি প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে খাবারকে দ্রুত হজম করতে সাহায্য করবে।
স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে: নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস খেলে এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই লেবুর রস ও গরম পানি চিনি মিশ্রিত করে খাওয়া যাবেনা।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: যারা অতিরিক্ত মেদ বা চর্বিষ সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত সকাল বেলা হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। লেবুর রস যকৃতে জমে থাকা চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: লেবুর রস আমাদের পাচনতন্ত্রের কার্যক্রম বাড়িয়ে খাবারের অতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তে জমা হতে দেয় না যার কারণে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং লেবুর রস ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তাই যারা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন এটি দারুন উপকার পাওয়া যায়।
গরম পানিতে লেবু খাওয়ার অপকারিতা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা সকালবেলা খালি পেটে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। কিন্তু যে কোন খাবারে অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর লেবুও ঠিক তেমনি। আপনি যদি প্রতিদিন অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খান তাহলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা প্রকাশ পেতে পারে।
দাঁতের সমস্যা: চিকিৎসকদের মতে বাজারজাত করা কোমল পানীয় খেলে দাঁতের যেমন ক্ষতি হয় সকালবেলা খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলেও সেরকম ক্ষতি হতে পারে। তাই যারা নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খান তারা অবশ্যই দিনে দুইবার ব্রাশ করার চেষ্টা করবেন তা না হলে দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হজমে সমস্যা: অতিরিক্ত গরম পানি ও লেবুর রস পান করার ফলে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পেপসিন ভেঙে যায়। এই পেপসিন আমাদের প্রোটিন হজম করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও আপনি যদি প্রতিদিন অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খান তাহলে পাকস্থলীতে সাইট্রিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে যা মোটেও হজম প্রক্রিয়ার জন্য ঠিক নয়। তাই অবশ্যই অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পানিতে লেবুর রস পান না করে পরিমাণ মতো পান করার চেষ্টা করুন।
গ্যাস্টিকের সমস্যা: লেবুর রসের নিচে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী বটে কিন্তু যদি এটি শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় তাহলে এর বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক দেখা দিতে পারে।
ক্ষতিকর দিক গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। এর পাশাপাশি বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত গরম পানি ও লেবুর রস পান করা থেকে বিরত থাকুন।
সোডিয়াম ও ইলেকট্রোলাইটের অভাব হতে পারে: লেবুর রস ও গরম পানি আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে, যার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত লেবুর রস ও গরম পানি খাওয়ার ফলে শরীর শক্ত হয়ে যাওয়া কিংবা পেট থেকে যাওয়ার মত লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে শরীর থেকে সোডিয়াম ও ইলেকট্রোলাইট এর পরিমাণ কমে যেতে পারে যার ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরম পানি ও লেবু খালি পেটে খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন।
রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়: লেবুর রসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি যদি শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় তাহলে আয়রনের আধিক্য বেড়ে যায়। যা মোটেও আমাদের শরীরের জন্য উপকারী নয়।
এটি যেমন আমাদের পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর তেমনি শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গরম পানির সাথে অতিরিক্ত মাত্রায় লেবুর রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
হাড়ের উপর প্রভাব ফেলে: প্রতিদিন অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পানি ও লেবু সকালে খালি পেটে খাবার ফলে হাড়ের ক্ষতি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে গরম পানি ও লেবুর রস পান করে থাকেন তাদের হাড়ের জয়েন্টের মধ্যে থাকা তেলকে ধীরে ধীরে শোষণ করে পরবর্তীতে বাতের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
তাই হাড়ের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অতিরিক্ত গরম পানি ও লেবুর রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে: লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক এসিড মাইগ্রেনের সমস্যা সৃষ্টির একটি কারণ হিসেবে ধরা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে সকালে গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার ফলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই প্রতিদিন সকালে গরম পানির সাথে লেবুর রস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। তা না হলে পরবর্তীতে মাইগ্রেনের সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
জিইআরডি রোগ: লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যাসিড যা শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় জমা হলে বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এছাড়াও চিকিৎসকদের মতে শরীরে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে জিইআরডি হতে পারে। আর জিইআরডি কে গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিসঅর্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
আলসারের সমস্যা: প্রতিদিন সকালবেলা অতিরিক্ত গরম পানি ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে খেলে আলসার এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। লেবুর রসে থাকা এসিডীও উপাদান স্টপ লাইনিংকে বিরত করতে পারে যা নিরাময় প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই যাদের আলসারের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই সকাল বেলা খালি পেটে গরম পানি ও লেবুর রস খাওয়া বাদ দিয়ে দিন।
পেট খারাপ হতে পারে: সকাল বেলা খালি পেটে অতিরিক্ত পরিমাণ গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার কারণে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রো জটিলতাকে সমস্যার মুখোমুখি নিয়ে যেতে পারে।
অম্বলের সমস্যা: প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে অতিরিক্ত পরিমাণ কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার ফলে অম্বল বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতে এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
যদি আপনার অম্বলের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন এতে খাদ্যনালির স্পিংটার গুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না যার কারণে পেটের উচ্ছিষ্ট বর্জ্য পায়ুপথে বের হতে বাধাগ্রস্ত হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদি অম্বলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই আজ থেকেই খালি পেটে কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস খাওয়া বন্ধ করুন।
লেবু মধু গরম পানির উপকারিতা
অনেকেই সকালবেলা খালি পেটে পাতি লেবুর রসের সাথে মধু ও গরম পানি মিশ্রিত করে খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন সকালবেলা খালি পেটে মধু লেবুর রস ও গরম পানি মিশ্রিত করে খেলে কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেন না। আজকের এ আর্টিকেলটি যদি আপনি সম্পূর্ণ পড়তে পারেন তাহলে আশা করছি সকাল বেলা খালি পেটে লেবু মধু ও গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ওজন কমায়: যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় চিন্তিত তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবু মধু ও গরম পানি মেশানো মিশ্রণটি পান করলে খুব সহজে আপনার অতিরিক্ত মেদ ঝরে পড়বে। তাই যারা অতিরিক্ত ওজনের জন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবু মধু ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
এসিডের সমস্যা কমায়: যারা দীর্ঘদিন ধরে এসিডিটি বা অম্বলের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে দীর্ঘমেয়াদি অম্বল ও এসিডিটির সমস্যা তাৎক্ষণিক দূর হবে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: একটি নির্দিষ্ট বয়স পার হওয়ার পর অনেকের ক্ষেত্রে বদহজমের সমস্যা কিংবা খাবার হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।সেজন্য আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই আপনার গ্রহণযোগ্য খাবার হজম হবে এছাড়াও এই মিশ্রণটি আপনার শরীরের অনেক ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: লেবু ও মধু একসাথে পান করলে এর মধ্যে থাকা পোস্ট উপাদান গুলো আমাদের ত্বকের মধ্যে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্ষতিকারক পদার্থ গুলোকে বের করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বককে কে করে তোলে কোমল ও ঝকঝকে। শুধুমাত্র শারীরিক উপকারিতার জন্যই নয় ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত লেবু ও মধু মেশানো গরম পানি পান করুন।
গলার ইনফেকশন দূর করে: সর্দি কাশি কিংবা গলায় অবাঞ্ছিত ইনফেকশন দূর করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিয়মিত পান করুন। লেবু ও মধুর মধ্যে থাকা আন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ইনফেকশন দূর করে গলা সাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: চিকিৎসকদের মতে যারা নিয়মিত সকালবেলা খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু একসাথে মিশিয়ে খান তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী ও মজবুত হয়।
তবে এই পানীয়টি আপনাকে প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে খেতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি খুব বেশি গরম না হয় এছাড়াও পাতি লেবুর রস অতিরিক্ত টকস্বাধ যুক্ত হলে এর সাথে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে পান করুন।
ব্রণ কমাতে সাহায্য করে: প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে ব্রনের সমস্যা দূর হয়। এই মিশ্রণটি যদি আপনি দুই থেকে তিন সপ্তাহ পান করতে পারেন তাহলে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে।
শরীর পরিশোধিত করে: লেবু ও মধুর মধ্যে থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান শরীর থেকে ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থ বের করে শরীরকে পরিচয় দিতে করতে সাহায্য করে।
শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দূর করে: চাঁদের অ্যাজমা কিংবা হাঁপানি সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গরম পানির সঙ্গে এক চামচ মধু ও দুই চামচ পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন তাহলে শ্বাসকষ্ট হাঁপানের মত সমস্যা গুলো ধীরে ধীরে কমে আসবে।
গলা ব্যথা কমায়: লেবু ও মধুর মধ্যে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
বিষাক্ত পদার্থ দূর করে: লেবু ও মধু একসাথে মিশ্রিত করে খেলে এটি শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিক পদার্থগুলো দূর করতে সাহায্য করে। মধুর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও লেবুর সাইটিক অ্যাসিড শরীরের জমে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থগুলো ঘামের মাধ্যমে বের করে দেয়।
গরম পানিতে লেবু ও মধুর অপকারিতা
গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে খেলে যেমন আমাদের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি এই পানীয়টি অনেকের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চিকিৎসকদের মতে যাদের আলসার কিংবা এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের এই পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
খালি পেটে অতিরিক্ত পরিমাণ মধু ও লেবুর রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে পেটে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয় যা পরবর্তীতে এসিডিটি এবং আলসারের মতো সমস্যায় রূপান্তরিত হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস পান করার ফলে টনসিলের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
যদিও সকালবেলা খালি পেটে মধু লেবু ও গরম পানি খাওয়ার তেমন খুব একটা অপকারিতা নেই কিন্তু কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যদি এই পানীয় পান করেন তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। কেননা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য মধু হুমকি স্বরুপ।
কিন্তু যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা লেবু ও মধু একসাথে পান করে তাহলে রক্তে সরকারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তীতে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়াও যাদের ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি আছে তারা ভুলেও লেবু ও মধুর এই মিশ্রণ পান করবেন না।
ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি মূলত যাদের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায় তাদের শরীর থেকে অবাঞ্ছিত চর্বি কমানোর প্রক্রিয়া। এই অবস্থায় যদি আপনি লেবু ও মধুর এই মিশ্রণ পান করেন তাহলে ডাম্পিং সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যা এসব রোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত
লেবু পানি আপনি যেকোনো সময় খেতে পারেন। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে সকালবেলা খালি পেটে লেবু পানি খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত পরিমাণ লেবু পানি সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়া যাবেনা।এতে পেটে এসিডের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ক্ষতি হতে পারে।
খাওয়ার আগে লেবু পানি খেলে যা হয়: যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় রয়েছেন তারা খাওয়ার আগে লেবু খেতে পারেন এতে ক্ষুধার প্রবণতা কমে আসে। এছাড়াও লেবু পানিতে অম্ল ভাব বেশি থাকার কারণে এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে খাবারের মধ্যে থাকা পোস্ট উপাদান গুলো রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেই।
যারা অতিরিক্ত খেতে পছন্দ করেন এবং এ অভ্যাস ত্যাগ করতে চান তারা খাওয়ার আগে এক গ্লাস লেবু পানি পান করে নিলে খিদে কমে আসে যা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের হার কে কমিয়ে দেই।
খাওয়ার পরে লেবু পানি খেলে যা হয়: অনেকের ক্ষেত্রে ভারী খাবার খাওয়ার পর পেটিএম হজমের সমস্যা হতে দেখা যায়। যার কারণে পেটে অস্বস্তি বোধ কিংবা পেট ভারী হয়ে যাওয়ার মত লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেকের ক্ষেত্রে বদহজম বা অম্বলের মতো সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাওয়ার পরে এক গ্লাস লেবু পানি পান করলে হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং পাকস্থলীর পিএইচ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া নিয়মিত খাবার ফলে পানি শূন্যতা দূর হয় এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।
লেবুর শরবত খাওয়ার নিয়ম
লেবুর শরবত খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত জানা উচিত। এতে করে আপনি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ লেবুর শরবত খেতে পারবেন এবং অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না। একজন ব্যক্তির প্রতিদিন ১ গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে ২ চামচ পরিমাণ লেবুর রস ও ১ চামচ অথবা ১/২ চামচ মধু মিশিয়ে ভালোভাবে লেবুর শরবত তৈরি করুন।
যদি আপনার ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে এই মিশ্রণ থেকে মধু বাদ দিতে পারেন। কেননা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য মধু হুমকি স্বরূপ। এই মিশ্রণটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত পান করুন।
এই নিয়মটি অনুসরণ করে লেবুরের শরবত নিয়মিত পান করতে পারলে আপনার সার্বিক সকল ধরনের অসুখ-বিসুখ দূর হবে এবং আপনার রোগ প্রতিরোক্ষ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন উপরোক্ত পরিমাণ ব্যতীত অতিরিক্ত খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে বিভিন্ন অপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক প্রকাশ পেতে পারে। পরিমাণ মত খেয়ে সুস্থ থাকুন।
লেখকের মন্তব্যঃগরম পানি লেবু খাওয়ার সকল উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যেটা আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url