গর্ভাবস্থায় গর্ভবতীর হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার
আপনি কি গর্ভধারণ করেছেন? গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন লক্ষণগুলো নিয়ে চিন্তিত। আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি রয়েছে কি? গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা যে সকল বিষয়গুলো জানতে পারবেন তা হলো।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এছাড়াও জানতে পারবেন বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য কোন খাবার গুলো দেওয়া উচিত। আপনি যদি এ সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আশা করি উপরোক্ত সকল প্রশ্নগুলোর সঠিক ধারণা আপনারা পেয়ে যাবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় গর্ভবতীর হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার
ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে গর্ভবতী মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের থাকা আবশ্যক। গর্ভাবস্থায় অনেক নারী হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি জনিত কারণে রক্তশূন্যতায় ভোগেন। সাধারণত হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি আয়রনের অভাবের কারণে দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় যদি আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি বেড়ে যায় তাহলে রক্তশূন্যতার কারণে আপনার গর্ভাবস্থায় জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে প্রায় ৫০ শতাংশ নারী গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে গর্ভাবস্থায় ২০ শতাংশ নারীর মৃত্যুর কারণ বলে রক্তশূন্যতা বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতিকে ধরা হয়।
তাই গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দূর করতে এবং গর্ভাবস্থায় জটিলতা থেকে বাঁচতে অবশ্যই আপনাকে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে এছাড়া আপনাকে জানতে হবে গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার গুলো খাবার ফলে আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে।
আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতা দূর করার যাবতীয় বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় শরীরে হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার সে সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটির এই অংশ সম্পূর্ণ পড়ুন। চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর রক্ত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যদি 10 থেকে 11 এর মধ্যে থাকে তাহলে সেটা স্বাভাবিক কিন্তু যদি এর থেকে কম থাকে তাহলে এটাকে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতা বলা হয়।
যদি আপনার গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১০ এর নিচে হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে গর্ভাবস্থায় আপনার বাচ্চার মৃত্যু হতে পারে এমনকি হিমোগ্লোবিন কম থাকার কারণে ডেলিভারির সময় আপনার প্রাণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গর্ভস্থায় হিমোগ্লোবিনের ঘাটটির বিভিন্ন কারণ হতে পারে।
তাই গর্ভাবস্থায় রক্ত পরীক্ষার পর যদি রিপোর্টে হিমোগ্লোবিন 10 থেকে 11 এর মধ্যে না থাকে বাহির থেকে কম থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কম থাকার কারণ।
১/গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি স্বাভাবিক ব্যাপার। সাধারণত গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে জলীয় উপাদান গুলো বৃদ্ধি পায় যার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হতে পারে না। তাই রক্ত হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতার সমস্যা দেখা দেয়।
২/গর্ভাবস্থায় আয়রন যুক্ত খাবার কম খাওয়ার কারণেও রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
৩/গর্ভাবস্থায় যাদের ঘন ঘন বমি হয় তাদের ক্ষেত্রেও রক্তশূন্যতা বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কে কারণ ধরা হয়।
৪/যাদের গর্ভধারণের আগে থেকেই রক্তশূন্যতা বা শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থেকে থাকে গর্ভাবস্থায় তাদের শরীরে অতিরিক্ত হারে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
৫/গর্ভাবস্থায় ভুল খাদ্যাভসের কারণেও আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েরা সবুজ শাকসবজি বা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরিবর্তে মুখরোচক খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন। যার কারণে শরীরে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না এবং আয়রনের ঘাটতি দেখাতে। যার ফলে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
৬/ভিটামিন বি বা ফোলেটের কারণেও গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর রক্তশূন্যতা বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফোলেট আমাদের শরীরে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে এবং লোহিত রক্তকণিকা গঠনেও এটির ভূমিকা রয়েছে।
কিন্তু গর্ভাবস্থায় শরীরে সঠিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণে ফোলেটের পরিমাণ কমতে থাকে। যার ফলে রক্তের হিমোগ্লোবিন ধীরে ধীরে কমে যায় এবং রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়।
৭/আপনার শরীরে যদি কোবালামিন বা ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি থাকে তাহলেও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে এবং রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোবালামিন রক্তে লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্নের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
যদি একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে এর ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে রক্তে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে অধিকাংশ গর্ভবতী নারী রক্তশূন্যতার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন।
এছাড়াও আরেকটি কারণ হতে পারে হিমোগ্লোবিনের জীনগত রোগ থ্যালাসেমিয়া রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ধীরে ধীরে রক্ত কণিকার উপাদান গুলো ভেঙে গেলে রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এজন্য চিকিৎসকরা সকল গর্ভবতী মায়েদেরকে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি বা কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ হওয়া মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা গর্ব অবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার এবং গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি রক্ত পরীক্ষার আগেই আপনার হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি জনিত বিভিন্ন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে কিভাবে বুঝবেন।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার ফলে একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যেমন:
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব বা দুর্বলতা শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম লক্ষণ।
- অতিরিক্ত মাথা ঘোরার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া
- শ্বাস প্রশ্বাসের সময় কষ্ট অনুভব হওয়া
- হঠাৎ করে হৃদস্পন্দন বেড়ে বা কমে যাওয়া
- আচমকা বুকে ব্যথা অনুভব
- হাত-পা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে পড়া
- ঠোঁটের কিনারায় ক্ষত সৃষ্টি হওয়া
- মুখে বা জিহ্বায় ঘা হওয়ার লক্ষণ
- ত্বকের রং ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হতে থাকা
- অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা
- খাবারের অরুচি বৃদ্ধি পাওয়া
- অন্যমনস্ক হয়ে থাকা
গর্ভাবস্থায় উপরোক্ত লক্ষণ গুলো যদি আপনার শরীরে প্রকাশ পায় তাহলে বুঝে নেবেন আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থেকে বাঁচার জন্য চিকিৎসকরা যে সকল পরামর্শ বা প্রতিকার দিয়ে থাকেন তা হলো।
১/২১ বছর বয়সের নিচে গর্ভধারণ করলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে আসতে পারে। তাই অবশ্যই ২১ বছরের নিচে গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকগণ।
২/যাদের পূর্বে একবার গর্ভধারণ হয়েছিল দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন দুটি গর্ভধারণের মাঝে অন্তত দুই বছরের বেশি সময় গ্যাপ থাকে। তা না হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। এবং গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন জটিলতার শিকার হতে পারেন।
৩/অবশ্যই গর্ভধারণের আগে চিকিৎসকের সাথে স্বাস্থ্য পরামর্শ করে নিতে হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করতে হতে পারে।
৪/যদি গর্ভধারণের পূর্বে আপনার শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের শতকরা মাত্রা ১০ গ্রাম এর কম হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৫/গর্ভাবস্থায় অবশ্যই আপনাকে মুখরোচক খাবার খাওয়ার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে।
৬/যদি শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ট্যাবলেট কিংবা ইনজেকশন গ্রহণ করতে পারেন।
৭/গর্ভাবস্থায় সকল ধরনের জটিলতা বা প্রতিকূলতা থেকে বাঁচতে অবশ্যই প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার চিকিৎসকের পরামর্শে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করিয়ে নিন।
৮/যদি গর্ভাবস্থায় আপনার রিপোর্টে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখাতে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের কমে যাওয়ার কারণে উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে হালকা প্রকাশ পেতে পারে। কিন্তু আপনি যদি লক্ষণগুলো অবহেলা করেন তাহলে পরবর্তীতে মারাত্মক যুগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তাই যদি আপনার শরীরে এ সকল লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করুন তা না হলে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন জটিলতা আসতে পারে। যার কারণে আপনার গর্ভে শিশু মাতৃ গর্ভে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় এছাড়াও বাচ্চার সঠিক ওজন বৃদ্ধিতেও সমস্যা সৃষ্টি হয়।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি না থাকলে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা ও গর্ভাবস্থায় জটিলতার শিকার হতে হয়। তাই অবশ্যই গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি ও শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
আর্টিকেলটির এই অংশে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে আলোচনা করব যেগুলো অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে।
ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে: গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন ডালিম বা কমলালেবুর মতো খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকা যুক্ত করতে হবে।
ডালিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন এবং কমলা লেবুতে ভিটামিন সি যা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং গর্ভকালীন জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে বেশ কার্যকারী।
শুকনো ফল খেতে হবে: গর্ভাবস্থায় পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য তালিকায় শুকনো ফল যেমন খেজুর বা ডুমুর রাখতে পারেন। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায় যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। এছাড়াও খাদ্য তালিকায় আখরোট,কিসমিস কিংবা বাদাম জাতীয় খাবার যুক্ত করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
ডাল জাতীয় খাবার: গর্ভাবস্থায় প্রোটিন ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে ডাল খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে। এটি একজন গর্ভবতী নারীর শরীরের পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সবজি: ফলিক এসিড গর্ভাবস্থায় নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বাড়িয়ে তুলে। তাই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ সবজি যেমন শালগম, অ্যাভোক্যাডো ও ওকরা যুদ্ধ করতে পারেন।
স্মুদিও সাহায্য করে: গর্ভাবস্থায় আপনার যদি মুখরোচক একটি খাবার খেতে পছন্দ হয় তাহলে আপনি আপেল, বিটরুট ও গাজরের স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি এবং শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে।
বীজ জাতীয় ফল: গর্ভাবস্থায় আয়রনসমৃদ্ধ বীজ যেমন মিষ্টি কুমড়ার বীজ এবং সূর্যমুখীর বীজ যুক্ত করতে পারেন। এগুলো গর্ভকালীন হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে এবং শিশুর শারীরিক গঠন ঠিক রাখতেও বেশ কার্যকারী।
ডিম খাওয়া: গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে এবং ভিটামিনের ভালো উৎস হিসেবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম যুক্ত করতে পারেন। এটি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং সার্বিক পুষ্টি চাহিদা মেটাবে।
রঙিন সবজি ও ফলমূল: গর্ভাবস্থায় আয়রন,ক্যালসিয়াম ও ফাইবার এর চাহিদা পূরণ করার জন্য রঙিন শাক সবজি ও ফলমূল যেমন ডালিম, আপেল,বিট,লাল আঙ্গুর ও ব্রকলি যুক্ত করতে পারেন। এগুলো খুব দ্রুত আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কে বাড়িয়ে তুলবে।
আয়রন যুক্ত খাবার: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আয়রনের ঘাটতি। তাই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কে বাড়িয়ে তুলতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে মুরগির কলিজা, ঝিনুক,জলপাই,তরমু, কিসমিস ও বেদানা যুক্ত করতে পারেন এগুলো আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কে বৃদ্ধি করবে।
সামুদ্রিক মাছ: আপনার শরীরে আগুনের চাহিদা পূরণ করতে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সামুদ্রিক মাছ বেশ কার্যকরী। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ যেমন চিংড়ি,কাঁকড়া,স্যামন মাছ,টুনা মাছ খেতে পারেন এতে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর হবে।
শস্য জাতীয় খাবার: গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি পূরণ করতে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন চাল,গম,বার্লি কিংবা ওটস। এই খাদ্য শস্য গুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও আয়রন যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনার রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি ধীরে ধীরে কমে আসবে।
বিটরুট: গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণে এবং শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলিক এসিড,ফাইবার ও পটাশিয়ামের চাহিদা মেটাতে চিকিৎসকেরা বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিটের মধ্যে থাকা আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার মত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
মাংস খাবেন যে কারণে: শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তুলতে প্রানিজ আমিষ খুবই ভালো কাজ করে। এর জন্য লাল মাংস অন্যতম একটি ভালো উৎস ধরা হয়। চিকিৎসকন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তুলতে প্রাণিজ আমিষ হিসেবে গরুর মাংস,খাসির মাংস কিংবা কলিজা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায় যেগুলো আমাদের শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। আর আপনার শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন থাকলে তা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কে কমতে দেই না।
শতমূলী: শতমূলী আয়রনের সমৃদ্ধ খাবার এবং খুব সহজে ই হজম হয়ে যায় যার কারণে এটি আপনার বিকেলের একটি দারুন নাস্তা হতে পারে। শতমূলীর সঙ্গে আপনি যদি তিল বীজ যোগ করতে পারেন তাহলে এর কার্যকারিতা আরো অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়।
তাই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত শত গুলির এক কাপ গরম সুপ সেবন করতে পারেন এতে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হবে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম: শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবার খেলে চলবে না। গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। এর জন্য প্রতিদিন রাতে কমপক্ষে আপনাকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এছাড়াও সকল ধরনের ভারী কাজগুলো বর্জন করতে হবে এবং খুবই সতর্কতার সাথে গর্ভাবস্থায় সকল বিধি-নিষেধ গুলো মেনে চলতে হবে।
বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে এমন সকল খাবার গুলো সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু এই একই সমস্যা যদি আপনার বাচ্চার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে তাহলে কোন খাবার গুলো আপনার বাচ্চার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে সে সম্পর্কে আর্টিকেলটির এই অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।রক্তশূন্যতা কিংবা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় কিংবা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা দেয় এমনটি কিন্তু নয়। অনেক সময় বাচ্চাদের শরীরেও হিমোগ্লোবিন কমে যায়। যার কারণে আপনার বাচ্চা অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া কিংবা খেলাধুলা করতে চাই না।
এই সমস্যা পরবর্তীতে আপনার বাচ্চার মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবারগুলো যুক্ত করতে হবে। সাধারণত রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য যে সকল খাবারগুলো খাওয়া উচিত সেগুলো আমরা উপরে আলোচনা করেছি।
উপরোক্ত খাবারগুলো যদি আপনার বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন তাহলে খুব অনায়াসে তাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি শারীরিক পোস্টটি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আপনার বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন কলা। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম।
যা মানব দেহে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বৃদ্ধিতে এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। কলার সাথে যদি আপনি দুধ যুক্ত করে নিয়মিত আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন তাহলে খুব দ্রুত আপনার বাচ্চার শরীর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি আপনার শিশু শারীরিক গঠন ঠিক রাখতেও কলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক ও মানসিক গঠন ঠিক রাখতে এবং হাড়ের সঠিক বৃদ্ধিতে কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ঠিক তেমনি যদি আপনার বাচ্চাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে যদি নিয়মিত কলা খাওয়ান তাহলে দ্রুত ভিটামিনের এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ হবে।
আপনারা চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেও বিভিন্ন আয়রন সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি না থাকলে চিকিৎসকরা তেমন কোন ট্যাবলেট কিংবা ইনজেকশন রেফার করেন না।
তাই শুরু থেকেই যদি আপনি আপনার বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় উপরোক্ত খাদ্যগুলো যুক্ত করতে পারেন তাহলে কখনোই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পরবে না এবং আপনার শিশু শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকবে। তাই বাচ্চাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন নিয়ে উপরোক্ত খাদ্যগুলো যুক্ত করুন আশা করি এতে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।
লেখকের মন্তব্যঃগর্ভাবস্থায় গর্ভবতীর হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা পরামর্শ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url