যক্ষা বা টিবি রোগ কেন হয়-টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আপনি কি যক্ষা রোগ কেন হয় এবং যক্ষা বা টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারগুলো সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা যক্ষা রোগ বা টিবি কেন হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনার মধ্যে কোন কোন লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন আপনার যক্ষা রোগ হয়েছে সে সম্পর্কেও আলোচনা থাকছে।
এছাড়াও আরো জানতে পারবেন যক্ষা বা টিবি রোগ থেকে প্রতিকার কিভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে, যক্ষা বা টিবি রোগ ছোঁয়াচে কিনা, যক্ষা বা টিবি রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম এবং যক্ষ্মা বা টিবি রোগের ওষুধের কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে সে সকল বিষয় সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটিতে তুলে ধরা হয়েছে। যক্ষা রোগ থেকে বাঁচার জন্য সকল বিষয়গুলো আপনার জরুরী। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃযক্ষা বা টিবি রোগ কেন হয়-টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ভূমিকা
যক্ষা বা টিবি বর্তমান সময়ের একটি ঘাতক ব্যাধি এবং জনসাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের ২২ টি যক্ষা প্রবণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ৭ নম্বরে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ জন্মগতভাবে যক্ষা রোগের জীবাণু বহন করে। তবে চিকিৎসকদের মতে যক্ষা বা টিবি রোগের জীবাণু নিয়ে জন্মগ্রহণ করা মানেই যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত হওয়া নয়।
তবে যক্ষা বা টিবি রোগের জীবাণু নিয়ে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তির মাধ্যমেও অন্যরা যক্ষা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। চিকিৎসকদের ধারণা যক্ষা বা টিবি রোগের জীবাণু দ্বারা সে সকল ব্যক্তিরাই বেশি আক্রান্ত হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। কিংবা যাদের ডায়াবেটিসের মত সমস্যা রয়েছে তাদের যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান,দূষিত পরিবেশ এবং অপুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে আসছেন তাদের ক্ষেত্রে যক্ষা হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তাই অবশ্যই আমাদের যক্ষা বা টিবি রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে এবং যক্ষা রোগের প্রতিকার সহ যক্ষা বা টিবি রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা এবং জানা উচিত।
আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে যক্ষা বা টিবি রোগ কেন হয়,এর থেকে পতিকার পাওয়ার উপায় এবং যক্ষা বা টিবি রোগের যাবতীয় লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
যক্ষা বা টিবি রোগ কেন হয়
যক্ষা বা টিবি রোগের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়া। যে ব্যাকটেরিয়ার কারণে যক্ষা বা টিবি রোগ হয় তার নাম হচ্ছে মাইকো ব্যাকটেরিয়াম টিউবার কিউলোসিস। এই ব্যাকটেরিয়া টি সরাসরি আমাদের ফুসফুস কে আক্রমণ করে যার কারণে আমাদের ফুসফুস এর কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটে।
যক্ষা বা টিবি রোগ ফুসফুস ছাড়াও কিডনি মেরুদণ্ড কিংবা মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যক্ষা বা টিবি বিভিন্ন কারণে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন:
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
- IV ওষুধ গ্রহণ করা
- অতিরিক্ত ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ করা
- এমন এলাকায় ভ্রমণ বা যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশা করা অথবা বসবাস করা
- দূষিত পরিবেশ বা দুর্বল বায়ু চলাচল গ্রস্ত এলাকায় কাজ করা
তবে কারো দেহে যক্ষা বা টিবি রোগের ব্যাকটেরিয়া থাকলেই সে অসুস্থ হয় না। যক্ষা বা টিবি রোগকে ডাক্তারি ভাষায় টিউবারকুলোসিস বলা হয়। কিন্তু এককালে যক্ষা বা টিবি রোগকে ক্ষয় রোগ বা রাজ রোগ ও বলা হয়ে থাকতো। যদিও যক্ষা বা টিবি রোগের কারণে এক সময় প্রচুর লোক মারা যেতো এবং তখন যক্ষা রোগের সঠিক চিকিৎসা ছিল না।
কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে খুব সহজে যক্ষা রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। কিন্তু তার জন্য অবশ্যই আপনাকে যক্ষা রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে। যেমন যক্ষা বা টিবি রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। যক্ষা রোগের জন্য কোন ঔষধ গুলো খাওয়া উচিত এবং কি নিয়ম অনুসরণ করে খেতে হবে সে সম্পর্কেও জানতে হবে।
আরো জানতে হবে যক্ষ খাবার টিবি রোগ কিভাবে ছড়ায় বা এটি ছোঁয়াচে রোগ কিনা। এ সকল বিষয়গুলো আর্টিকেলটির মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরুতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
যক্ষা রোগের লক্ষণ কি কি
দ্রুত যক্ষা রোগ নির্ণয় করতে পারলে খুব সহজে আপনি যক্ষা রোগ থেকে প্রতিকার পেতে পারেন। তবে তার জন্য অবশ্যই আপনাকে যক্ষা রোগের বিভিন্ন লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। যেই লক্ষণগুলো দেখলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন কিংবা যক্ষা বা টিবি রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়ার চেষ্টা করবেন।
আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা যক্ষা বা টিবি রোগের যাবতীয় লক্ষণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। সাধারণত চিকিৎসকেরা যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগের লক্ষণের উপর ভিত্তি করে দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করেন।
আরো পড়ুনঃমেয়েদের হার্টের সমস্যার সকল লক্ষণ সমূহ
সুপ্ত যক্ষা: যে সকল ব্যক্তিরা জন্মগতভাবে যক্ষা বা টিবি রোগের জীবাণু নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন তারা সুপ্ত রক্ষার অন্তর্গত। এই শ্রেণীর ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যক্ষা রোগের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো তেমন একটা প্রকাশ পায় না। যার কারনে একে নিষ্ক্রিয় টিবি বা যক্ষাও বলা হয়। তবে যত দ্রুত সম্ভব এর চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে না হলে পরবর্তীতে এটি সক্রিয় যক্ষা তে পরিণত হতে পারে।
সক্রিয় যক্ষা: এটি যক্ষা রোগের চূড়ান্ত পর্যায়। এই পর্যায়ে যক্ষা বা টিবি রোগের সকল লক্ষণ গুলো আপনার মধ্যে প্রকাশ পাবে এবং আপনাকে অসুস্থ করে তুলবে। যক্ষা রোগের যে সকল লক্ষণগুলো দেখলে আপনি সক্রিয় যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সেগুলো নিচে দেওয়া হল।
- ধীরে ধীরে খাওয়াতে অরুচি বা ক্ষুধামান্দ্য
- রাতের দিকে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া
- অল্প পরিশ্রমে চরম ক্লান্তি অনুভব করা
- হঠাৎ করেই বুকে ব্যথা
- কাশি বা শ্বাসকষ্টের সাথে ব্যথা অনুভব হওয়া
- তিন সপ্তাহের বেশি ধরে অবিরাম কাশি দেখা দেওয়া
- হঠাৎ করেই শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া
- হালকা বা অতিরিক্ত জ্বর অনুভব হওয়া
- অবাঞ্চিতভাবে ওজন হ্রাস পাওয়া
- হাঁচি বা কাসির সাথে রক্ত বের হওয়া
এ সকল লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে আপনার যক্ষা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও যক্ষা ফুসফুসের রোগ কিন্তু এটি কিডনি,লিভার কিংবা মস্তিষ্কে আক্রমণ করতে পারে। এ বিষয়ে ডঃ হাসান কয়েকটি লক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হতে জানান।
১/চিকিৎসকের মতে যক্ষা রোগের জীবাণু যদি গলার গ্লান্ডকে আক্রমণ করে বা সংক্রামিত করে তাহলে গলা ফুলে উঠার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে এবং যদি মেরুদন্ড যক্ষা রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে মেরুদন্ড ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
২/ফোলা অংশটি খুব বেশি শক্ত বা খুব বেশি নরম হবে না। তবে ফোলার আকার যদি অতিরিক্ত বেশি হয় তাহলে ফোলার সাথে সাথে ব্যথা হতে পারে।
৩/লিভার যক্ষা রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হলে পেটে পানি জমে অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে।
৪/যদি যক্ষা রোগের জীবাণু মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে তাহলে মস্তিষ্ক যে ইডিমা বা পানির মধ্যে থাকে তার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
৫/এছাড়াও যক্ষা রোগের জীবাণু যদি ত্বক বা অন্য কোন অংশে সংক্রামিত করে তাহলে সে অংশ ফুলে ওঠার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন আপনার শরীরের কোন কোন লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে যক্ষা রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কিনা বুঝতে পারবেন।
যক্ষা বা টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটির আগের অংশে আমরা যক্ষা বা টিবি রোগের যাবতীয় লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা যক্ষা বা টিবি রোগ নির্ণয় এবং প্রতিকার বা চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
রোগ নির্ণয়
মেডিকেল ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা: যক্ষা রোগের যাবতীয় লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর চিকিৎসকরা প্রথমে আপনার মেডিকেল ইতিহাস এবং যক্ষ বা টিবি রোগের যাবতীয় লক্ষণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং লিম্ফ নোট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গেলে কিংবা শ্বাস প্রশ্বাসের সময় শব্দ বের হলে শারীরিক পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
টিউবার কুলিন স্কিন টেস্ট (TST): এটি সাধারণত আপনার শরীরে যক্ষা রোগের জীবাণু রয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য আপনার ত্বকে অল্প পরিমাণ পিউরিফাইড প্রোটিন ডেরিভেটিভ(PPD) টিউবার কুলিন এর একটি ইঞ্জেকশন প্রদান করা হয়। যদি আপনার শরীরে যক্ষ বা টিবি রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে তাহলে 48 থেকে 72 ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট পজেটিভ দেখা দিবে।
রক্ত পরীক্ষা: এরপর রক্ত পরীক্ষা যেমন ইন্টারফেরুন গামা রিলিজ অ্যাসেস(IGRA) পরীক্ষা করানো হবে যা যক্ষা বা টিবি এর সংক্রমণ সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
সিটি স্ক্যান বা বুকের এক্সরে: বুকের এক্সরে করার মাধ্যমে ফুসফুসের বাসরের কোন অংশটি যক্ষা বা টিবি রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত সেটি নির্ধারণ করা যায়।
স্পুটাম টেস্ট: থুতু পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষা বা টিবি ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করা যায়। এর জন্য যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির থুতু নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই বোঝা যায় যক্ষাবার টিবি রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত কিনা।
অন্যান্য টেস্ট: এছাড়াও যক্ষা বা টিবি রোগের অন্যান্য লক্ষণ বা সংক্রমণের ওপর নির্ভর করে বায়োপসি,ব্রঙ্কোস্কোপি কিংবা অন্যান্য পরীক্ষা করার মাধ্যমেও যক্ষা বা টিবি রোগের সংক্রমণ নির্ধারণ করা যায়।
প্রতিকার
এতক্ষণ আমরা যক্ষা বা টিবি রোগ নির্ণয় করার পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এই অংশে আমরা যক্ষাবার টিবি রোগ থেকে কিভাবে প্রতিকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
মেডিকেশন: রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসকের পরামর্শে যক্ষা বা টিবি রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে টিবি এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যায়। যক্ষা বা টিবি রোগের জন্য চিকিৎসকরা যে সকল ঔষধ সর্বাধিক দিয়ে থাকেন তা হচ্ছে আইসোনিয়াজিড,রিফাম্পিন,ইথামবুটল এবং পাইরাজিনামাইড। এটি চিকিৎসা গ্রহণের পর থেকে শুরু করে ৬ মাস কিংবা এক বছর পর্যন্ত গ্রহণ করা লাগতে পারে।
সরাসরি পর্যবেক্ষণ থেরাপি: এই পদ্ধতিটি সাধারণত একজন চিকিৎসা সেবা কর্মী কিংবা প্রশিক্ষিত পেশাদার আপনার ওষুধগুলো সঠিকভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা সেটি নির্ধারণ করেন। এবং আপনাকে অল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করেন।
ফলো আপ টেস্টিং: রেগুলার চেকআপ করার মাধ্যমে যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অগ্রগতিগুলো পরীক্ষা করা হয় এবং দেখা হয় ওষুধ গ্রহণের ফলে যক্ষা রোগের সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসছে কিনা।
বিচ্ছিন্নতা এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ: যদি যক্ষা বা টিবি রোগের সংক্রমণ অন্তিম পর্যায়ে বা মারাত্মক পর্যায়ে চলে আসে তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং বিস্তার প্রতিরোধ করতে বিচ্ছিন্নতা প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা আনুগত্য: যদি নিয়মিত ওষুধ গ্রহণের ফলে আপনার উপসর্গ বা লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে তাহলেও সম্পূর্ণ কোর্স টি শেষ না করা পর্যন্ত ওষুধ বাদ দেওয়া উচিত না। সম্পূর্ণ কোর্স শেষ না করে ঔষধ বাদ দিলে পরবর্তীতে চিকিৎসা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
খাদ্য গ্রহণ: যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে গরম ও তরল খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন। যদি যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি গরম ও তরল খাবার খায় তাহলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যক্ষা বা টিবি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
যক্ষা বা টিবি কি ছোঁয়াচে রোগ
যক্ষা মূলত একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে হয়ে থাকে। যক্ষা বা টিবি রোগ ছোঁয়াচে রোগ। এটি মূলত বাতাসের মাধ্যমে অন্যজনকে আক্রমণ করে। যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি ও কাসির মাধ্যমে যক্ষা বা টিবি রোগের জীবাণু অন্যজনকে আক্রান্ত করে। এছাড়াও কাঁচা ও পাস্তুরিত দুধ এর মাধ্যমেও যক্ষা রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যক্ষা বা টিবি রোগ যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা দিতে পারে। তবে শিশু ও বৃদ্ধরা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কেননা শিশু ও বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে যার কারণে যক্ষা রোগের জীবাণু খুব সহজেই তাদের আক্রান্ত করে। কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে চললে যক্ষা বা টিবি ছড়ানো আটকানো যায়।
১/যেহেতু যক্ষা বা টিবি ছোঁয়াচে রোগ তাই অবশ্যই হাঁচি কিংবা কাসি দেওয়ার সময় অবশ্যই মুখে রুমাল অথবা হাত দিতে হবে। যেন তা অন্যজনকে আক্রমণ করতে না পারে।
২/যক্ষা বা টিবি ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে খুব সহজেই থুতু বা কফের মাধ্যমে এটি অন্যদের আক্রান্ত করতে পারে। তাই যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেখানে সেখানে থুথু বা কফ না পেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে।
৩/যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উচিত কারো সামনে সরাসরি কথা না বল। বরং যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবাণু যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা।
৪/যক্ষা রোগীর কোন অংশ কেটে গেলে অন্য কোন ব্যক্তির কাটা অংশ জেন সংস্পর্শ না করে সেদিকে খেয়াল রাখা।
৫/পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের পাশাপাশি গরম ও তরল খাবার গ্রহণ করা। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত যক্ষা থেকে সুস্থ হওয়া যায়।
৬/যতক্ষণ পর্যন্ত না রোগী জীবাণুমুক্ত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির থালা-বাসন,কাপড় চোপড় আলাদা রাখা এবং সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
৭/থ্রি এইচটি প্রতিরোধক থেরাপির মাধ্যমে খুব সহজেই যক্ষা বা টিবি রোগের জীবাণুর সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে রোগীকে রিফা-পেন্টিং নামক ঔষধটি প্রতি মাসে একবার করে তিন মাস পর্যন্ত খাওয়াতে হবে।
যক্ষামুলত একটি ফুসফুসের রোগ। যদিও এটি ফুসফুস ব্যতীত কিডনি,লিভার কিংবা মস্তিষ্কে হয়ে থাকে। কিন্তু যক্ষার জীবাণু ফুসফুসের মাধ্যমেই অন্য সুস্থ ব্যক্তিদের আক্রান্ত করতে পারে এবং এই ফুসফুসের রোগী অন্যান্য রোগের তুলনায় বেশি ছোঁয়াচে।
ফুসফুসে যক্ষা বা টিবির জীবাণু সংক্রামিত হলে ছোঁয়াচে এ রোগটি খুব সহজে হাঁচি কিংবা খাসির মাধ্যমে এমনকি সংস্পর্শে আসলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই ছোঁয়াচে এ রোগটি থেকে এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে যত সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
যক্ষা বা টিবি রোগের ঔষুধ খাওয়ার নিয়ম
যক্ষা বা টিবি রোগের জীবাণু যদি কোন ব্যক্তি কে আক্রমণ বা সংক্রামিত করে তাহলে চিকিৎসকরা সর্বাধিক যে ঔষুধগুলো প্রেসক্রাইব করে থাকেন তা হচ্ছে স্ট্রেপ্টোমাইসি, পাইরাজিনামাইড, আইসোনিয়াজিড, ইথামবুটল,রিফ্যামপিসিন, পাইরাজিনামাইড ও প্রেমোমানিড।
সাধারণত যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঔষধের ডোজ জীবাণুর সংক্রমনের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। তবে ঔষধের ডোজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে যদি ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে জটিলতা আসতে পারে।
চিকিৎসকরা একজন যক্ষা বা টিবি রোগীকে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে যেকোনো ধরনের ওষুধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে প্রেসক্রাইব করা ঔষুধগুলো সেবন করার চেষ্টা করবেন।
চিকিৎসকের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে ঔষধের সম্পূর্ণ ডোজ কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত এবং সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ঔষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। আশা করি খুব দ্রুত আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
যক্ষা বা টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
যক্ষা বা টিবি রোগের ওষুধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
যক্ষা বা টিবি রোগের ওষুধের সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- হালকা পেট খারাপ হওয়া
- অম্বলের সমস্যা
- বমি বমি ভাব হতে পারে
- হালকা বা প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হতে পারে
- প্রস্রাব,ঘাম,লালা ও চোখের পানির রং পরিবর্তন হতে পারে
যক্ষা বা টিবি রোগের ঔষধের গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- কিডনির সমস্যা যেমন প্রস্রাবের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে
- মানসিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে
- অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব হওয়া
- সহজ কালশিরা হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া
- ত্বকে ছোট ছোট লালচে দাগ দেখা দেওয়া
- জয়েন্টে ব্যথা কিংবা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে
- শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে
- অতিরিক্ত বুকে ব্যথা
যক্ষা বা টিবি রোগের ওষুধ খাওয়ার ফলে লিভারের যে ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে
- ধীরে ধীরে খিদে কমে যাওয়া কিংবা ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে
- হালকা বা তীব্র পেটে ব্যথা অনুভব হওয়া
- চোখের এবং ত্বকের রং হলুদ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া
- অন্ধকার মুত্রের সমস্যা দেখা দেওয়া
- এছাড়াও এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্যঃযক্ষা বা টিবি রোগ কেন হয়-টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।আশা করছি যক্ষা রোগের যাবতীয় লক্ষণগুলো এবং প্রতিকার পাওয়ার উপায় সহ ওষুধ খাওয়ার নিয়ম এবং ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন।
আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। এ বিষয়ে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। সকলে ভালো থাকবেন।আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url