জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ-জন্ডিস এর লক্ষণ কি
আপনি কি জন্ডিস রোগে আক্রান্ত? জন্ডিস এর কারণে চোখ হলুদ হয়ে গেছে। জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ। আপনার শরীরে কোন কোন লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে বুঝতে পারবেন জন্ডিস হয়েছে। এ সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে যদি আপনি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য।
আজকের এই পোস্টটিতে আমরা জানতে পারবো জন্ডিস কি ভাইরাসজনিত রোগ। এছাড়াও জানতে পারব জন্ডিস এর লক্ষণ কি কি, বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়, বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায় এবং আরো জানতে পারবো জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা গুলো সম্পর্কে। আপনি যদি সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃজন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ-জন্ডিস এর লক্ষণ কি
ভূমিকা
জন্ডিস নিজে কোন রোগ নয় তবে এটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে মাত্র। বিভিন্ন ভাইরাসজনিত কারণে জন্ডিস হয়ে থাকে। জন্ডিস নিজে কোন রোগ না হলেও যখন জন্ডিসের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো সব সময় সাধারণ থাকে না। এই লক্ষণগুলো কখনো অবহেলা করবেন না তা না হলে মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এর জন্য আপনাকে কোন কোন ভাইরাসের কারণে জন্ডিস হয় কিংবা কোন লক্ষণগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার জন্ডিস হয়েছে এগুলো সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত ধারণা থাকা উচিত। আপনাদের জন্ডিস সম্পর্কিত সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত করার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি।
আজকের এ আর্টিকেলটি আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে জন্ডিস হওয়ার কারণ কি ?শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়? বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
এছাড়াও আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন জন্ডিসের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে এবং জন্ডিস এ আক্রান্ত রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে।
জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ
উইকিপিডিয়া তথ্য অনুসারে জন্ডিস নিজে আসলে কোন রোগ নয়। এটি লিভারের বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করে মাত্র। তাই চিকিৎসকরা লিভারের রোগ হওয়ার জন্য অন্যতম একটি কারণ হিসেবে জন্ডিসকে ধারণা করেন। আপনার যদি জানতে চান জন্ডিস ভাইরাসজনিত রোগ কিনা? তাহলে উইকিপিডিয়া তথ্য সূত্র অনুসারে জন্ডিস একটি ভাইরাসজনিত রোগ।
এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস যেমন হেপাটাইটিস এ,বি,সি,ডি ও ই গুলোর কারণে লিভারে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি হয় যাকে ভাইরাল হেপাটাইটিস বলা হয়। উইকিপিডিয়া তথ্য অনুসারে বিশ্বের যেকোনো দেশেই জন্ডিস হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে হেপাটাইটিস ভাইরাস গুলোকে দায়ী করা হয়।
তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অতিরিক্ত মদ্যপান জন্ডিসের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও অটো ইউনিয়ন লিভার ডিজিজ এবং বংশগত কারণেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিভার রোগেও জন্ডিস হতে পারে। আবার অনেক সময় কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এবং থ্যালাসেমিয়া ও হিমোগ্লোবিনের কারণেও লিভার ভাইরাসজনিত রোগ জন্ডিস আক্রান্ত হতে পারে।
শুধু তাই নয় অনেক সময় ক্যান্সারের কারণেও জন্ডিস হতে দেখা দেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত রক্ত ভেঙে যাওয়া,পিত্তথলিতে পাথর কিংবা টিউমার এবং লিভারের অন্যান্য রোগের কারণেও জন্ডিস হতে পারে। তাই জন্ডিসদের শুধু লিভারের রোগের কারণে হয় এমনটি ভাবা উচিত হবে না।
এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর আবেদ হাসান বলেন যদি রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায় তাহলে জন্ডিস হতে পারে। তার মতে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রক্তের মূল উপাদান লোহিত রক্ত কণিকার দ্রুত অত্যাধিক পরিমাণ ভেঙে যাওয়া।
ভাইরাসে এ আক্রান্ত লিভারের প্রদাহের কারণে বিলিরুবিনের বিপাক কিংবা মেটাবলিজম বাধাগ্রস্ত হওয়া এছাড়াও পিত্তরসের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া জন্ডিসের লক্ষণ গুলো প্রকাশ হওয়ার অন্যতম কারণ। ডক্টর আবেদ হোসেনের মতে, জন্ডিসের কারণগুলোকে কয়েকভাবে ভাগ করা যায়। যেমন-
- ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত
- থ্যালাসেমিয়া বা হিমোগ্লোবিনের ভেঙে যাওয়া
- হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া রোগের কারণে
- বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়
- লিভার সিরোসিস রোগের কারণে
- লিভার/প্যানক্রিয়াস /পিত্তনালীর ক্যান্সার এর কারণে
- বংশগত কারণে
আশা করি আপনারা বুঝতে পেরে গেছেন জন্ডিস ভাইরাসজনিত রোগ কিনা এবং জন্ডিস হওয়ার আরো কারণ গুলো কি কি।
জন্ডিস এর লক্ষণ কি
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আপনারা জানলেন জন্ডিস ভাইরাসজনিত রোগ কিনা এবং জন্ডিস হওয়ার কারণ কি কি? আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা জানবো জন্ডিসের লক্ষণগুলো কি কি? আপনার শরীরে কোন কোন লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝতে পারবেন আপনি জন্ডিস রোগে আক্রান্ত।
১/জন্ডিস হওয়ার প্রধান লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রথমেই যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে চোখ,প্রস্রাব ও শরীরে হলুদ বর্ণ ধারণ করা।
২/অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের অরুচি এবং বমি বমি ভাব আসার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
৩/অনেক সময় জন্ডিস হওয়ার কারণে বমি হয়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃদ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঘরোয়া উপায়
৪/শারীরিক দুর্বলতা কাজ করে।
৫/হালকা জ্বর কিংবা জ্বর জ্বর ভাব দেখা দিতে পারে।
৬/অনেক সময় জন্ডিস হলে পেটে ব্যথা দেখা দেয়।
৭/অনেক সময় জন্ডিস হওয়ার কারণে রক্ত ভূমি হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৮/বিশেষ করে শরীরে চুলকানি,গায়ের রং ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া এবং সাদাটে পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
৯/অনেক সময় অতিরিক্ত জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আলকাতরার মতো কালো পায়খানা দেখা দিতে পারে।
১০/জন্ডিসে আক্রান্ত হলে পেট ও পায়ে পানি জমে ফুলে যেতে পারে।
১১/অনেক সময় পেটে চাকা বা ল্যাম্প অনুভূত হতে দেখা যায়।
১২/জন্ডিসের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে গেলে হালকা জ্বরের পরিবর্তে কাঁপুনি দিয়ে মারাত্মক জ্বর আসতে পারে।
১৩/হঠাৎ করে ই অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
১৪/শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
এ সকল লক্ষণ গুলো যদি আপনার শরীরে লক্ষ্য করেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। আর যদি ঘরোয়া ভাবে জন্ডিস প্রতিরোধ করতে চান তাহলে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা।
- বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা।
- ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ।
- নিয়মিত হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি টিকা গ্রহণ।
- নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া।
- অসুরক্ষিত শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলা।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- ডায়াবেটিস ও ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা গ্রহণ।
- ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা।
- ক্রনিক লিভার ডিজিজ এ আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
- নিয়মিত গোসল করা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
- স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণ চালিয়ে যাওয়া।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া।
- একবারে বেশি খাওয়ার পরিবর্তে ঘনঘন খাবার গ্রহণ করুন।
জন্ডিস প্রতিরোধ করতে এ সকল নিয়মগুলো আপনি অনুসরণ করতে পারেন।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
বিলিরুবিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। যার মাত্রা রক্তে বেড়ে যাওয়ার কারণে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। চিকিৎসকদের মতে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে।রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার দ্রুত এবং অতিরিক্ত পরিমাণ ভেঙে যাওয়া।ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত লিভারের প্রদাহ তে বিলিরুবিনের বিপাক কিংবা মেটাবলিজম বাধাগ্রস্ত হওয়া।
পাকস্থলীর পিত্তরসের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়াকে বিলিরুবিন অতিরিক্ত পরিমাণে রক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় এবং যেহেতু লিভার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে জন্ডিসের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কত সময় পর এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে পারে।
আরো পড়ুনঃশরীরের কোন ভিটামিন চুল গজাতে সাহায্য করে
আপনার মনেও যদি এই প্রশ্নগুলো এসে থাকে তাহলে আর্টিকেলটির এ অংশ সম্পূর্ণ পড়ুন তাহলে আপনার এ সকল প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন। প্রথম প্রশ্ন বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে একজন মানুষের রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব থাকে ১.২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর নিচে যা ২৫ মাইক্রোমোল/লিটার এর সমান।
কিন্তু যদি এই ঘনত্ব ৩ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা ৫০ মাইক্রোমোল/লিটার এর বেশি হয় তাহলে জন্ডিসের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।। দ্বিতীয় প্রশ্ন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কতদিন পর জন্ডিসের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।চিকিৎসকদের মতে যদি আপনার লিভার হেপাটাইটিস এ ও সি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় তাহলে সেক্ষেত্রে জন্ডিস এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে ১-৩ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
আর যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা লিভার আক্রান্ত হয় তাহলে জন্ডিস এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে ১-৫ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আশা করছি আপনারা আপনাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর গুলো পেয়েছেন।
বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায়
বিলিরুবিন নির্দিষ্ট কোন স্থানে সঞ্চিত হতে পারে না। এটি সাধারণত আমাদের রক্তের লাল রক্ত কণিকা বা লহিতো রক্ত কণিকার ভাঙ্গনের ফলে তৈরি হয়। যকৃত আমাদের আমাদের লোহিত রক্ত কণিকার ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং পিত্তের মাধ্যমে শরীর থেকে বাইরে বের করে দেয়। চিকিৎসকদের মতে এই বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা একজন সুস্থ ব্যক্তির রক্তে ১.২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার।
যদি রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে জন্ডিসের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা ভাঙ্গনের পর বিলিরুবিন প্রক্রিয়াজাত হয়ে ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছায়। অবশেষে পায়ুপথের মাধ্যমে তা শরীর থেকে বের হয়ে যায়। সাধারণত শরীরে বিলিরুবিনের পরিমাণ জানার জন্য চিকিৎসকরা S Bilirubin পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এর মাধ্যমে খুব সহজে আপনি জানতে পারবেন আপনার রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ কত।এখন প্রশ্ন হচ্ছে শরীরে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে কমানোর উপায় কি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক শরীরে বিলিরুবিনের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে কিভাবে কমানো যায় তার উপায় সম্পর্কে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম: যকৃতের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে এবং ক্যালরি অতিরিক্ত খরচ হওয়ার কারণে শরীরে বিল রুবিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম এবং বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে।
সঠিক খাদ্যাভাস: তেল,চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পরিবর্তে সহজপাচ্য এবং স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করা যেগুলোতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে এতে পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ: রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা এবং তরল জাতীয় খাবার যেমন সুখ ও জুস বেশি গ্রহণ করা উচিত।
পানি পান করা: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে বিলিরুবিনের মাত্রা কমে আসে এবং পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যাতে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি পান না করা হয় এতে অন্যান্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ধূমপান ও মধ্যপান বর্জন করা: রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ধূমপান ও মদ্যপান। তাই রক্তের বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর জন্য এ সকল বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাটি করা: যদিও চিকিৎসকরা বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলে কিন্তু যদি আপনার শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে তাহলে বিলিরুবিনের পরিমাণ অনেকটা কমে আসে এর জন্য আপনি চাইলে হালকা ব্যায়াম কিংবা কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এতে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমে আসবে।
অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দূর করা: অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে রক্তশূন্যতা কিংবা অ্যানিমিয়া কে দায়ী করেন। যদি S Bilirubin পরীক্ষা করার পর আপনার রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তশূন্যতা কিংবা অ্যানিমিয়া দূর করতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো গ্রহণ করতে পারেন।
পিত্তথলি ও পিত্তনালীর সমস্যা দূর করা: যদি আপনার পিত্তথলিতে কিংবা পিত্তনালীতে পাথর কিংবা টিউমার হয়ে থাকে তাহলে আপনার লিভারে পিত্তরসের প্রবাহ বাধা সৃষ্টি হয় যার কারণে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তাই পিত্তন আলী ও পিত্তথলির সমস্যা থাকলে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে তা সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস যেহেতু একটি ভাইরাসজনিত রোগ এবং বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে জন্ডিস এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় এমন কিছু পরিবর্তন আনতে হবে যাতে আপনার রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমে আসে। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা জানবো জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকায় কোন খাবারগুলো যুক্ত করা উচিত।
স্যুপ: চিকিৎসকরা জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকায় সুখ যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেহেতু এ সময় তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার বেশি প্রয়োজন পড়ে তাই আপনি আপনার খাবার তালিকায় সুখ যুক্ত করতে পারেন।
আপনি চাইলে পাতলা মাছের ঝোল কিংবা চিকেন স্টু খেতে পারেন। এছাড়াও সবজি দিয়ে সুপ তৈরি করে খেলে এটি জন্ডিস প্রতিরোধে এবং বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করুন কেননা এসব খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
ফল ও সবজির জুস: জন্ডিসের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে আপনি খাদ্য তালিকায় ফল এবং সবজির রস যুক্ত করতে পারেন। তরল এই খাবারগুলো আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং জন্ডিসের জটিলতা দূর করতে সাহায্য করবে। এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি,কে ও বি যেগুলো আপনার লিভারের জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিক পদার্থগুলোকে বের করতে সাহায্য করবে।
জল: রক্তের বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে এবং জন্ডিসের জটিলতা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়া উচিত। চিকিৎসকরা জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জল রাখতে বলেন। যদি আপনার সাধারণ জল খেতে ইচ্ছা না হয় তাহলে ডাবের জল খেতে পারেন অথবা বিভিন্ন ফল কিংবা সবজির জুস বানিয়ে খাওয়া যায়।
প্রোটিন: জন্ডিস হলে আমাদের শরীরের অনেক কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই এগুলো ছাড়িয়ে তুলতে আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন দরকার যা নতুন কোর্স গঠনে সাহায্য করবে পাশাপাশি জন্ডিসের সময় শারীরিক দুর্বলতা দূর করতেও সাহায্য করবে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলো খেলে আপনি শরীরে এনার্জি পাবেন এর জন্য আপনার খাবার তালিকায় ডাল,পনির ও মুরগির মাংস যুক্ত করতে পারেন।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: আমরা হয়তো অনেকেই জানি ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং লিভারের মধ্যে জমে থাকা ক্ষতিকারক দূষিত পদার্থগুলো বের করতে সাহায্য করে। তাই জন্ডিসের আক্রান্ত হলে আপনাকে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর জন্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন আমন্ড,বেরি,শসা যোগ করতে হবে।
বাদাম ও শুটি জাতীয় খাবার:বাদামের মধ্যে থাকা ভিটামিন ই এবং ফানোলিক অ্যাসিড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এবং প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং জন্ডিসের জটিলতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় বাদাম ও শুটি জাতীয় খাবার যুক্ত করতে পারেন।
শস্য দানা: জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এ সময় ফাইবার ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,মিনারেল ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত যেগুলো লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এবং দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করবে। এর জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় মটরশুটি,ডাল ও শিম জাতীয় খাবার যুক্ত করুন।
চা: চায়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের প্রদাহ কমাতে,হজমে সমস্যা দূর করতে এবং জন্ডিসের জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। তাই জন্ডিসে আক্রান্ত হলে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য নিয়মিত চা খেতে পারেন।
আখের রস: লিভারের সমস্যা দূর করতে এবং জন্ডিস দ্রুত সারিয়ে তুলতে আখের রস ভালো কাজ করে। তাই চিকিৎসকরা জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর খাবার তালিকায় দিনে কয়েকবার করে আখের রস পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ঘোল: দ্রুত জন্ডিস সারিয়ে তুলতে এবং জন্ডিসের জটিলতা দূর করতে নিয়মিত এক গ্লাস ঘোলের সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া উচিত। এতে দ্রুত জন্ডিসের সমস্যা পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়।
পেঁয়াজ: জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে পেঁয়াজ দারুন কার্যকারী। এর জন্য পেঁয়াজকে কুচি কুচি করে কেটে এর সঙ্গে লেবুর রস মাখিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে কিছু সময় পার হলে এই পেঁয়াজ ও লেবুর রসের সঙ্গে সাদমত লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে দিনে দুইবার জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীকে খাওয়াতে পারলে দ্রুত জন্ডিস দূর হয়।
লেবুর রস: জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে লিভারের সুরক্ষার জন্য লেবুর রস খাওয়া যায়। দ্রুত জন্ডিস থেকে ছুটি পেতে দিনে ৩ থেকে ৪ বার লেবু জল মেশানো পানি পান করা উচিত।
মুলো পাতা: প্রাচীন কাল থেকেই জন্ডিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মূলো পাতার রস ভালো কাজ করে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর খাবার তালিকায় যদি মূলোপাতার রস বেটে খাওয়ানো যায় তাহলে লিভার পরিষ্কার থাকে এবং খিদে বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দ্রুত জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
টমেটোর রস: টমেটোর রস জন্ডিস দূর করতে সাহায্য করে। টমেটো আপনি সালাদ করে খেতে পারেন এছাড়াও টমেটোর সাথে স্বাদমতো লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া যায়।
অড়হড় পাতা:অড়হড় পাতার রস জন্ডিস সাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীকে যদি প্রতিদিন ৬০ মিলিলিটার অড়হড় পাতার রস খাওয়ানো যায় তাহলে দ্রুত জন্ডিস দূর হয় এর সাথে লেবুর রস মেশালে এর কার্যকারিতা আরো বৃদ্ধি পায়।
করলা পাতা: জন্ডিসের সমস্যা দূর করতে করোলা পাতার রস প্রতিদিন ৭-১০ করলা পাতার রস ফুঁটিয়ে এর সঙ্গে ১০-১৫ টি ধনেপাতা সিদ্ধ করে দুটি মিশ্রণের জল একসঙ্গে করে দিনে তিনবার পান করতে হবে। এতে দ্রুত জন্ডিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পেঁপে পাতা: পেঁপে পাতার পেস্টের সঙ্গে এক চামচ পরিমাণ মধু মিশে যদি জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীকে এক থেকে দুই সপ্তাহ নিয়মিত খাওয়ানো যায় তাহলে দ্রুত জন্ডিসের জটিলতা দূর হয়।
তুলসী পাতা: জন্ডিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং জন্ডিসের চিকিৎসায় তুলসী পাতার রস ও মূলো পাতার রস একসঙ্গে যুক্ত করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ প্রতিদিন পান করার ফলে দ্রুত জন্ডিস সেরে ওঠে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে এটি লিভার কে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যাল গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং জন্ডিসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর খাবার তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলা, লেবু ,কিউই ও বেরি ফল যুক্ত করতে পারেন।
হলুদ: হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদান হওয়ায় এটি লিভারের স্বাস্থ্য উপকারিতায় কাজ করে এবং জন্ডিসের মতো সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন রান্নার তরকারি তে হলুদ যোগ করুন এতে জন্ডিসের সমস্যা দূর হবে এবং লিভার সুস্থ রাখতে ও সাহায্য করবে।
এতক্ষণ আপনারা জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানলেন। কিন্তু কোন খাবারগুলো জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কেও বিস্তারিত ধারণা থাকা দরকার।
১/জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে গরম খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
২/অতিরিক্ত চলাফেরা কিংবা দৌড়ঝাপ করার পরিবর্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।
৩/জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য লঙ্কা ও মসলাদার খাবার কিংবা তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাওয়া কম করতে হবে।
৪/সহজে হজম হয় এমন খাবার গুলো গ্রহণ করতে হবে।
৫/ক্যাফিন জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
৬/অ্যালকোহল ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
৭/প্যাকেট জাত ও টিন জাত খাবার খাওয়া যাবে না।
৮/ট্রান্সফ্যাট ও লাল মাংস খাবার তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
৯/অতিরিক্ত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না।
১০/চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
১১/অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
১২/জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে জাঙ্ক ফুড বিষের মতো কাজ করতে পারে। তাই জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলা উচিত।
১৩/জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য কলা খাওয়া যাবেনা এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
১৪/দুগ্ধ জাত খাবার খাওয়া চলবে না।
লেখকের মন্তব্যঃজন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ-জন্ডিস এর লক্ষণ কি
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।আশা করি আপনারা জন্ডিস হওয়ার বিভিন্ন কারণ,জন্ডিসের লক্ষণ বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়, বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায় এবং জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকায় কি কি খাবার যুক্ত করতে হবে এবং কোন কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।
আর্টিকেলি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুবান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url