কাজুবাদামের ক্ষতিকর দিক-কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
আপনি কি নিয়মিত কাজু বাদাম খেয়ে থাকেন কিংবা শারীরিক সুস্থতার জন্য কাজুবাদাম খাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন। তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আর্টিকেলটিতে আমরা সকালে খালি পেটে কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা, কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম, কাজুবাদামের ক্ষতিকর দিক, কাজুবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তাই আপনি যদি কাজুবাদাম খাওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন। এতে করে আপনি কাজুবাদাম খাওয়ার সকল উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম গুলো সঠিকভাবে মেনে খেতে পারবেন। অন্যথায় আপনার শারীরিক উপকারিতার বদলে ক্ষতি হতে পারে।
পোস্ট সূচিপত্রঃকাজুবাদামের ক্ষতিকর দিক-কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
ভূমিকা
সুস্বাদু কাজুবাদাম অনেকেই খেতে পছন্দ করেন আবার অনেকে খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না কাজুবাদাম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়া উচিত। শরীরে যাবতীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন নিয়ম মেনে কাজুবাদাম খাওয়া উচিত এতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও শরীরের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে কাজুবাদাম সাহায্য করে। একজন সুস্থ ব্যক্তির পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন ১৪ টা পর্যন্ত কাজুবাদাম খাওয়া যেতে পারে। কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন,খনিজ পদার্থ,ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিন। এছাড়াও এতে রয়েছে।
প্রোটিন: যা আমাদের নতুন কোষ গঠন এবং শক্তি যোগান দিতে সাহায্য করে।
ফাইবার: পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে হজমে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদরোগে ঝুঁকি কমায়।
ভিটামিন ই: ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উপকার করে।
আরো পড়ুনঃডিম কিভাবে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়
ক্যালসিয়াম: ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে হাড় ও দাঁতের মজবুতিতে কাজ করে।
ম্যাগনেসিয়াম: শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে।
ফসফরাস: শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফসফরাস কাজুবাদাম খেলে পাওয়া যায়।
পটাশিয়াম: নিয়মিত খালি পেটে কাজুবাদাম খেলে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়।
জিংক: দাঁতের ও হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে এবং শারীরিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়া উচিত।
সকালে খালি পেটে কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেই শারীরিক সুস্থতার জন্য সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ভেজানো কাজু বাদাম খেতে পছন্দ করে। কিন্তু সকালে খালি পেটে কাজুবাদাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনার এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কাজুবাদামের মধ্যে রয়েছে মনো আনসেচুরেটেড ফ্যাট ও পলিয়ানসেচুরেটেড ফ্যাট যা আমাদের হৃদপিন্ডের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়াও নিয়মিত খালি পেটে কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং এতে ক্যালরির মাত্রা খুব কম থাকায় ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়াতে বাধার সৃষ্টি করে।
হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতি করে: নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে এটি শরীরে ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের ঘাটতি পূরণ করে। এই উপাদানগুলো আমাদের হাড়ের মজবুতির জন্য প্রয়োজনীয় এবং চিকিৎসকদের মধ্যে যারা নিয়মিত কাজুবাদাম খেয়ে থাকেন তাদের অস্ট্রিওপোরোসিস রোগের সম্ভাবনা কমে আসে।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: কাজুবাদাম এর মধ্যে রয়েছে কপার যা আমাদের চুলের ও ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়াও যারা নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে কাজুবাদাম খেয়ে থাকেন তাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে এবং চুলের গোড়া মজবুত হতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও স্নায়ুতন্ত্রের উন্নতি করে: কাজু বাদামের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি-৬ মানসিক চাপ কমিয়ে স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায় কাজ করে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: কাজুবাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং খাদ্য থেকে পুষ্টি রক্তের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
রক্তের সমস্যা দূর করে: কাজুবাদামে রয়েছে কপার যা আমাদের রক্তের যাবতীয় রোগ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও যদি রক্তে কপারের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার মতো রোগগুলো দেখা যায়। তাই রক্তের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত রাতের বেলা দুধে ভেজানো কাজুবাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে দিন দিন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা খুব দ্রুত ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে পড়ে রোগে আক্রান্ত হয়।
কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন কাজুবাদাম সকালে ভিজিয়ে খেতে পারেন তাহলে এর মধ্যে থাকা ভিটামিন ও মিনারেলস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আপনি চাইলে রাতে ঘুমানোর আগের দুধে কাজুবাদাম গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে: যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তারা চাইলে নিয়মিত সকালবেলা খালি পেটে ভেজানো কাজুবাদাম খেতে পারেন অথবা রাতে দুধের সাথে খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে এর মধ্যে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে: কাজুবাদামের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লুটেন ও জ্যায়াক্সাথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের চোখকে ক্ষতিকর আলোকরশ্মির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং চোখে ছানি পড়ার সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।
কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাজুবাদাম আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক ধরনের উপকার করে থাকে কিন্তু কাজু বাদামের সকল উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ মতো নিয়মিত খেলেই আপনি কাজু বাদামের সকল উপকারিতা গুলো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা কাজু বাদাম খাওয়ার কিছু নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
সকালে খালি পেটে খাওয়া উপকারী: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে এক মুঠো কাজু বাদাম খেলে শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে খাওয়ার ফলে এটি সরাসরি আপনার শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষম রাখে।
রাতে ভিজিয়ে খাওয়া: আপনি যদি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভেজানো কাঠবাদাম খেতে পারেন তাহলে এর পুষ্টি ও উপকারিতা অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও রাতে ভেজানো কাঠ বাদাম খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
পরিমাণ বজায় রাখা: কাজুবাদাম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যতটা উপকারী ঠিক তেমনি অতিরিক্ত খারাপ হলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি দেখা দিতে পারে। তাই একজন সুস্থ ব্যক্তির দৈনিক ২০ থেকে ৩০ গ্রাম বা এক মুঠের বেশি কাজুবাদাম খাওয়া উচিত না।
সালাদ বা অন্যান্য খাবারের সাথে: খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করতে এবং খাবারের গুনাগুন বাড়িয়ে তুলতে পুষ্টিকর খাবারের সাথে কাজুবাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।
সন্ধ্যায় নাস্তার বিকল্প হিসাবে: অনেকেই সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা করে থাকেন এ সময় যদি আপনি এক মুঠো কাজু বাদাম খেয়ে নেন তাহলে আপনার শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে।
গর্ভাবস্থায় কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় কাজুবাদাম খেলে গর্ভবতী মা ও শিশুর শারীরিক অনেক ধরনের পুষ্টি চাহিদায় পূরণ হয়। কিন্তু তার জন্য আপনাকে অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে। আর্টিকেলটির এই অংশে গর্ভাবস্থায় কাজু বাদাম খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য্য সহকারে পড়ুন।
পরিমিত মাত্রায় খাওয়া: গর্ভাবস্থায় যে কোন খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিয়ম মেনে এবং পরিমান মত খেতে হবে। না হলে গর্ভবতী মা ও শিশুর বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের 20 থেকে 30 গ্রাম কাজুবাদাম খাওয়ার নিরাপদ এবং শিশু ও মায়ের জন্য উপকারী।
প্রাকৃতিক ও অপপ্রক্রিয়াজাত কাজুবাদাম: বাজারে মসলাযুক্ত কাজুবাদাম কিংবা অতিরিক্ত তেল লবণ ও চর্বিযুক্ত কাজুবাদাম প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যথা সম্ভব চেষ্টা করতে হবে প্রাকৃতিক ও অপপ্রক্রিয়াজকৃত কাজুবাদাম খাওয়ার।
সংবেদনশীলতা ও এলার্জি যাচাই: কাজুবাদাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন গর্ভবতী নারীর বাদামে অ্যালার্জি আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। যদি কাজুবাদামের এলার্জি থাকে তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কাজুবাদাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া: কাজুবাদাম আপনি অন্যান্য যেকোনো ধরনের পুষ্টিকর খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন যেমন সালাদ,মধু,দই,ওটমিল এমনকি আপনি চাইলে দুধের সাথে মিশিয়ে কাজুবাদাম খেতে পারেন এতে এর গুণগতমান বৃদ্ধি পায় এবং অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।
সঠিকভাবে সংরক্ষণ: গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর কাজুবাদাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সঠিকভাবে সংরক্ষণ কৃত কাজু বাদাম খাওয়া উচিত। কাজী কলাম সংরক্ষণের জন্য প্রথমে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে এরপর ঠান্ডা ও শুকনোস্থানে কাচের বইমে ভরে রাখতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ: গর্ভাবস্থায় খাবার ব্যাপারে সবসময় বেশি সচেতন হওয়া উচিত। বিশেষ করে যে কোন নতুন খাবার খাদ্য তালিকা যুক্ত করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে নিতে হবে। বিশেষ করে যেগুলোতে এলার্জি কিংবা পেটের সমস্যা বেশি হয় এই খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
সুষম খাদ্য তালিকা: শুধুমাত্র কাজুবাদাম খেলেই গর্ভাবস্থায় সকল ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে না। অন্যান্য সুষম খাদ্য যেমন ফল,শাকসবজি,মাছ,ডিম,দুধ,মাংস এর পাশাপাশি আপনি কাঠ বাদাম খেলে আপনার সকল ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি মা ও শিশুর সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শিশুর শারীরিক গঠন সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কাজুবাদাম যুক্ত করতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা: গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর শারীরিক সুস্থতার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকা আবশ্যক তা না হলে আপনি যতই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন না কেন খাদ্য থেকে পুষ্টি আপনার শরীরে প্রবেশ করবে না।
গর্ভাবস্থায়ী মা ও শিশুর সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য সকল পুষ্টিকর খাদ্যের সাথে সহায়ক হিসেবে কাজুবাদাম যুক্ত করতে পারেন। এতে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবেন।
কাজুবাদামের ক্ষতিকর দিক
পর্যাপ্ত পরিমাণ কাজুবাদাম যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী তেমনি অনিয়ম এবং অতিরিক্ত কাজুবাদাম খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। আর্টিকেলটির এই অংশে অতিরিক্ত কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে কি কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে বা ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ওজন বৃদ্ধি করে: যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের ডায়েট চার্ট ফলো করছেন তারা কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণ কাজুবাদাম খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কাজুবাদামে ক্যালরির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে বৃদ্ধি পাবে এবং অতিরিক্ত চর্বি জমিয়ে স্থুলতা বৃদ্ধি করবে।
ডায়াবেটিসের সমস্যা: অতিরিক্ত কাজুবাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি হয় যার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই যারা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান কিংবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণ কাজুবাদাম খাবেন না।
থাইরয়েডের সমস্যা: যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তারা কাজুবাদাম এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে তারপর কাজু বাদাম খেতে পারেন। অন্যথায় আপনার থাইরয়েডের সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
কিডনিতে পাথর: কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম যা অতিরিক্ত পরিমাণ শরীরে জমা হলে কিডনিতে পাথরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের ইতোমধ্যে কিডনির সমস্যায় ভুগছে তারা যথা সম্ভব চেষ্টা করুন কাজুবাদাম এড়িয়ে চলার।
ডিহাইড্রেশনের সমস্যা: কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের খাদ্য হজম প্রক্রিয়া সাহায্য করে কিন্তু যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণ কাজুবাদাম খেয়ে ফেলেন তাহলে খাদ্য হজম করার সময় আপনার শরীরে জলের পরিমাণ কমিয়ে দেবে। কেননা ফাইবার শরীরে অতিরিক্ত জমা হলে শরীরের জল শোষণ করে যার কারণে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
ফুসফুসের সমস্যা: কাজুবাদামের মধ্যে রয়েছে আয়রন যা শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কোষের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে। আর যদি কোষে আয়রন জমা হয় তাহলে হাঁপানি কিংবা এজমার মত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে এবং নিঃশ্বাস এর সমস্যা হয়।
এলার্জি সমস্যা: কাজুবাদাম এলার্জির অন্যতম একটি মাধ্যম ধরা হয়। তাই যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা কাজুবাদাম এড়িয়ে চলুন অন্যথায় আপনি মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন।
মাইগ্রেনের সমস্যা: যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে কিংবা মাইগ্রেনের কারণে মাথা যন্ত্রণা করে তারা কখনোই মাথা যন্ত্রণার সময় কাজুবাদাম খাবেন না। এতে আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং মাথাব্যথা প্রচন্ড হতে পারে।
পেটের সমস্যা: অতিরিক্ত পরিমাণ কাজুবাদাম খাওয়ার ফলে এর মধ্যে থাকা ফাইবার পাকস্থলীতে অতিরিক্ত হয়ে যায়। যার কারণে হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে এবং শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি অম্বল জাতীয় সমস্যার মুখোমুখিও হতে পারে।
মেনোপজ: যাদের মেনোপজ হয়েছে তারা কখনোই এ সময় কাজুবাদাম খাবেন না। এতে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই অবশ্যই মেনোপজের সময় কাজুবাদাম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
উচ্চ অক্সালেট: কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রায় অক্সালেট উপাদান। যা আমাদের শরীরে অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে কিডনিতে পাথরের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও কিডনির বিভিন্ন ধরনের সমস্যাকে উদ্দীপ্ত করতে অক্সালেট সাহায্য করে তাই যারা ইতোমধ্যে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তারা কখনোই অতিরিক্ত কাজুবাদাম খাবেন না।
কাজুবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন,মিনারেল ও খনিজ। যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু এই ভিটামিন মিনারেল খনিজ গুলো যদি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে এগুলো স্বাস্থ্য অপকারিতা নিয়ে আসে। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা কাজুবাদামের কিছু উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো।
কাজু বাদামের উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে টাইপ টু ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এল ডি এল এর মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল এইচ ডি এল এর মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: কাজুবাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাট,পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের রক্তচাপের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থেকে মুক্তি দেয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: কাজু বাদামের মধ্যে থাকা গ্যালিক এসিড,এন্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রোটিন শরীরে ক্যান্সারের কোষগুলোকে বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
প্রতিস্থাপন শক্তি বৃদ্ধি করে: কাজুবাদামের মধ্যে থাকা আনসার ফ্যাট ও প্রোটিন আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে সাড়িয়ে তুললে সাহায্য করে।
পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধ করে: কাজুবাদামের মধ্যে থাকা ফাইবার পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই যারা পিত্তথলির পাথরের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে কাজুবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
কাজুবাদাম খাওয়ার অপকারিতা
এর আগের অংশে আমরা কাজু বাদামের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কাজু বাদাম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যতটা উপকারী তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
তাই অবশ্যই কাজুবাদাম খাওয়ার পূর্বে উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করবেন প্রয়োজনের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। অন্যথায় অতিরিক্ত পরিমাণ কাজুবাদাম আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাজু বাদাম খাওয়ার চেষ্টা ও অভ্যাস করুন।
গর্ভাবস্থায় কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
আমরা নিশ্চয়ই জানবো গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি চাহিদা আগের তুলনায় অনেকটা বৃদ্ধি পায়। তাই এ সময় যদি গর্ভবতী মা সঠিক পরিমাণ পুষ্টি না পায় তাহলে মা ও শিশুর শারীরিক বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই অতিরিক্ত পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সুষম খাদ্যের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় কাজুবাদাম যুক্ত করতে পারেন। আর্টিক্যালটির এই অংশে আমরা গর্ভবস্থায় কাজু বাদাম খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানব।
স্বাস্থ্যকর চর্বি: কাজুবাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ মনোসেচুরেটেড ও পলিয়ানসেচুরেটেড ফ্যাট যা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
প্রোটিনের ভালো উৎস: গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর টিস্যুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ক্ষতিগ্রস্ত দৃশ্যগুলোকে মেরামত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিনের ভালো উচ্চ ধরা হয় কাজুবাদামকে।
শক্তি বৃদ্ধি করে: গর্ভাবস্থায় শারীরিক শক্তি চাহিদা পূরণ করতে এবং ক্যালরির চাহিদা জোগাতে নিয়মিত কাজুবাদাম খেতে পারেন।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে: কাজুবাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই যা শরীরে প্রবেশের পর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুকে সংক্রমণ ও অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: কাজু বাদামের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস ও কপার হারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং গর্ভস্থ শিশুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে: গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারী সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রক্তস্বল্পতা। এ সময় আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে এবং রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করতে নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়া উচিত।
হজমের স্বাস্থ্য: কাজুবাদামের মধ্যে থাকা ফাইবার গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: যে সকল গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা পরিমাণ মতো কাজুবাদাম খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা বা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
মুড বুস্টার: কাজুবাদামের রয়েছে ট্রিপটোফেন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড জার্সি রুটিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী নিউরোট্রান্সমিটার এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্যঃকাজুবাদামের ক্ষতিকর দিক-কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
আশা করছি আপনারা কাজুবাদাম খাওয়ার সকল উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সহ প্রতিদিন কতটুকু খারাপ প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিভ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুবান্ধবদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url