চিবিয়ে মেথি খাওয়ার সকল উপকারিতা
আপনি কি স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য চিবিয়ে মেথি খাওয়ার কথা ভাবছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে এই আর্টিকেলটিতে আপনি মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। এছাড়াও জানতে পারবেন মেথি খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে।
এছাড়াও যদি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে মেথি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা এবং মেয়েটি খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কেও সঠিক ধারণা পাবেন। তাই উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও পড়তে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃচিবিয়ে মেথি খাওয়ার সকল উপকারিতা
ভূমিকা
মেথি এক ধরনের ছোট দানা যাতে স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য রয়েছে সকল ধরনের পুষ্টি। প্রাচীনকাল থেকেই চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য মেথি ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ এবং ক্যালসিয়াম।
মেথি একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান যা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায় এছাড়াও দক্ষিণ ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার মধ্যেও মেথি পাওয়া যায়। এশিয়ার মধ্যে অনেক দেশেই মেথি রান্নার ক্ষেত্রে ও নানা ঘরোয়া প্রতিকার করার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও মেথি পোকা তাড়ানোর কাজেও বেশ কার্যকরী।
বিশেষ করে ভারতের মতো দেশগুলোতে এবং আমাদের দেশেও এসব কাজে মেথির ব্যবহার করা হয়। মেথি তিক্ত স্বাদ যুক্ত হলেও মেথিতে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পাশাপাশি তারুণ্য ধরে রাখতেও সাহায্য করে। কিন্তু অনেকেই এর তিক্ত স্বাদের কারণে খেতে পছন্দ করেন না।
মেথির স্বাদ যেমনই হোক না কেন মেথি চিবিয়ে খাওয়ার ফলে এর দারুন উপকারিতা পাওয়া যায়। আপনিও যদি মেথি খাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই এর উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধার না থাকা উচিত। যা আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা সম্পূর্ণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
যেকোনো ফল সবজি কিংবা মশলা খাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের এর উপকারিতা বা অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরী। আপনিও যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিংবা খাবারের মশলা হিসেবে মেথি খাওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই মেথি খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আপনার সঠিক ধারণা থাকা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মেথি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
হজমের সমস্যা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
মেথির মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো পাকস্থলীতে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি করে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। যার কারণে পেটে ব্যথা,কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা তলপেটে ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় চিবিয়ে মেথি খাওয়ার ফলে।
এছাড়াও মেথি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল এলডিএল এর মাত্রা কমাতে এবং শরীরের জন্য উপকারী ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল এর মাত্রা বৃদ্ধিতে এর দারুন উপকারিতা পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ করে
মেথির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পেটের অতিরিক্ত চর্বি ও ফলাভাব কমানোর ক্ষেত্রে মিথি চিবিয়ে খাওয়ার ফলে দারুন উপকারিতা পাওয়া যায়।
নিয়মিত মেথি চিবিয়ে খাওয়ার ফলে শরীরের সকল কোষগুলোতে সঠিক পরিমাণ খাদ্য পুষ্টি পৌছাতে সাহায্য করে যার কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বা ইউনিয়ন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
এমন কিছু প্রাকৃতিক ভেষজ খাবার রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিক পদার্থগুলোকে এক করে শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে। এ খাবার গুলোর মধ্যে মেথি,সাপোলিন এবং মুসিজ অন্যতম।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে যারা নিয়মিত মেথি চিবিয়ে খায় মেথির মধ্যে থাকা ফাইবার নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ক্যান্সারের কোষগুলোকে শরীরে বাসা বাঁধতে বাধার সৃষ্টি করে। এরমধ্যে কোলন ক্যান্সার অন্যতম। টাইপ করুন ক্যান্সার থেকে পরিত্রান পেতে চাইলে নিয়মিত মেথি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
খাদ্য রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে
মেথির মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান রয়েছে যেগুলো খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করতে এবং ক্ষুধা বাড়িয়ে তুলে। যার ফলে খাদ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং সঠিক পরিমাণ পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
এছাড়াও মেথি চিবিয়ে খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এবং বদহজমের সমস্যাগুলো দূর করতে মেথি চিবিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও আনসার দ্বারা সৃষ্টি কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদ হজমের সমস্যা দূর করতে মেথি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে পাশাপাশি মেথির বীজ চর্বি আহরণ দমন করে থাকে যার কারণে আমাদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি এবং ক্যালরি জমা হতে পারে না।মেথি লিপিড ও গ্লুকোজের বিপাককে উন্নত করে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এর উপকারিতা প্রদান করে।
যেকোনো খাবার খাওয়ার ফলে যেমন এর উপকারিতা প্রকাশ পায় তেমনি অতিরিক্ত কিংবা বড়মাত্রায় খাওয়ার ফলে সে উপকারিতা গুলোই আপনার অপকারিতায় রূপান্তরিত হয়। মেথিও ঠিক সেরকমই।
আপনি যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ মেথি খেয়ে থাকেন তাহলে এতে আপনি অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন কিন্তু যদি আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে থাকেন তাহলে এর অপকারী দিকগুলো দেখা দিবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মেটে খাওয়ার অপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
পাচনতন্ত্রের সমস্যা
অতিরিক্ত পরিমাণ মেথি খাওয়ার ফলে এর অপকারিতা প্রকাশ পায়। অপকারিতা গুলোর মধ্যে পাচনতন্ত্রের সমস্যা অন্যতম। অতিরিক্ত পরিমাণ মেথি খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আর সঠিকভাবে খাদ্য হজম না হলে সেখান থেকে ডায়রিয়া,গ্যাস্ট্রিক কিনবা পেট ফেঁপে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এলার্জির সমস্যা
যে সকল মানুষের অ্যালার্জি রয়েছে কিংবা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাগুলো রয়েছে তারা চিবিয়ে মেথি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। চিবিয়ে অতিরিক্ত মেথি খাওয়ার ফলে এলার্জির লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় যেমন চুলকানি,ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট কিংবা গলা ব্যথার মত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
তাই যদি আপনার এলার্জি সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই মেথি খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন তা না হলে এর অপকারিতা ভয়াবহ হতে পারে।
রক্তশূন্যতা
অতিরিক্ত মেথি চিবিয়ে খাওয়ার ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করেন তারা কখনোই মেথি চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদান
যে সকল মায়েরা গর্ভধারণ করেছেন তারা অবশ্যই মেয়েটি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মেথি খাওয়ার ফলে অকাল প্রস্রাব বা প্রিম্যাচিউর লেবার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও যে সকল মাইরা বাচ্চাদের স্তন্যপান করান তারা অবশ্যই চিবিয়ে মেথি খাওয়ার থেকে দূরে থাকবেন।
শর্করার মাত্রা কমানো
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ মেথি খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা আমাদের ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ মেথি খেয়ে ফেলেন কিংবা ডায়াবেটিস কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই মেথি খাওয়া থেকে দূরে থাকুন তা না হলে এটি তার অপকারিতা প্রকাশ করবে।
যা আপনার জন্য বিপদজনক হতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণ কমে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
মেথি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
মিথি খাওয়ার ফলে সকল উপকারিতা গুলো যদি আপনি পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে মেথি খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে হবে। এছাড়াও আপনাকে জানতে হবে প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ মেথি খাওয়া যেতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মেতে খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
১/দ্রুত ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার মেথি চিবিয়ে খেলে পেট ভরা মনে হয় যার কারণে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমে আসে এবং দ্রুত ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
২/সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পেতে লেবু,মধু ও এক চামচ মেথি একসঙ্গে খেলে দ্রুত সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও যাদের গলা ব্যথা কিংবা গলার সংক্রমণ রয়েছে তারা যদি মেথির সিদ্ধ করে সেই পানি পান করে কিংবা গড়গড়া করে তাহলে এই নিয়মটি অনুসরন করে মেথি ব্যবহার করার ফলে দ্রুত গলা ব্যাথা কিংবা গলা সংক্রমণ দূর হয়।
৩/যারা অতিরিক্ত চুল পড়া সমস্যায় ভুগছেন তারা এই নিয়মটি অনুসরণ করলে দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হবে। নিয়মটি হলো রাত্রিবেলা মেথিকে সিদ্ধ করে সারারাত রাখার পর সেই সিদ্ধ মেথির সঙ্গে নারিকেলের তেল মিশিয়ে মাথায় লাগালে দ্রুত চুল পড়া কমে আসে।
৪/পেটের জ্বালাপোড়া কমাতে মেথি ব্যবহারের এ নিয়মটি অনুসরণ করা যায়। অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এবং পেটে জ্বালাপোড়া ও বধহজমে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মেথি ঝরানো পানি খাওয়া যায়। এর জন্য রাতের বেলা পরিমাণমতো মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকালে খালি পেটে খেলে দ্রুত পেটে জ্বালাপোড়া সমস্যা দূর হয়।
৫/গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি অথবা মেয়েটি চিবিয়ে খেলে দ্রুত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে আসবে।তাৎক্ষণিক গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে গরম পানিতে মেথি সিদ্ধ করে সেই পানি পান করা যায়।
এছাড়াও মেথি শুকিয়ে গুঁড়ো করার পর যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে এক গ্লাস পানির সঙ্গে পরিমাণ মতো মেথি গুঁড়ো মিশিয়ে সে পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। মেথি তিক্ত স্বাদ হওয়ার কারণে আপনি চাইলে স্বাদ বাড়ানোর জন্য মেথির সাথে লেবু কিংবা মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন এতে দ্রুত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে।
এই নিয়োগটি অনুসরণ করে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে দুইবার মেথি খেতে পারেন তাহলে আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর হবে এবং অন্যান্য সকল উপকারিতা গুলো পাওয়া যাবে। এছাড়া মিথি পাঁচফোড়ন মসলাতেও ব্যবহার করা হয়।
আপনি চাইলে সেই মসলা তরকারি রান্না করার সময় ব্যবহার করতে পারেন এতে তরকারি ছাদ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি এই নিয়মটি ব্যবহার করার ফলে তরকারির পুষ্টিগুণ আরো বৃদ্ধি পাবে। যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন কিংবা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তারা চাইলে প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ পরিমাণ মেথি গুঁড়ো গরম পানি অথবা নরমাল পানির সাথে মিশে ৩ মাস পর্যন্ত পান করতে পারলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এবং শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএল এর মাত্রা কমে ভালো কোলেস্টেরল এইচ ডি এল এর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। তবে আপনাকে প্রতিদিন সকালে ও রাতে মেথি খেতে হবে এতে দারুন উপকার পাওয়া যায়।
৬/চিকিৎসকদের মতে একজন সুস্থ ব্যক্তির দৈনিক ১ থেকে ২ চামচের বেশি মেথি বীজ খাওয়া উচিত না। যদি আপনি প্রতিদিন ১ থেকে ২ চামচের বেশি মাত্রায় মেথি খেয়ে ফেলেন তাহলে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় কিংবা মেথির নানা অপকারিতা গুলো প্রকাশ পেতে পারে।
যারা মেথির তিক্ত সাধ হওয়ার কারণে খেতে পারেন না তারা চাইলে দুধের সাথে এক চামচ পরিমাণ মেথি গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন। যদি আপনার ডায়াবেটিস না থাকে তাহলে চিনি অথবা মধু ব্যবহার করতে পারেন আর যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে মিষ্টি এড়িয়ে চলুন। এই নিয়মটি অনুসরণ করলে আশা করি আপনার শারীরিক সকল প্রকার সমস্যা দূর হবে।
প্রিয় বন্ধুরা এতক্ষণ আমরা মেথি খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা মেয়েটি খাওয়ার আরো কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো।
স্তন্যপানে দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি করে: এই প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানটিতে রয়েছে ফাইটোইস্ট্রোজেন যা স্তন্য প্রদানকারী মায়েদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে এটি গ্যালাক্টাগোগ হিসেবে কাজ করে যার কারণে স্তন্যদানকারী মায়ের শরীরে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
পুরুষের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে: নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে পুরুষদের হার্নিয়া কিংবা স্বপ্নদোষ হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। এছাড়াও চিকিৎসায় প্রমাণিত যে সকল পুরুষ নিয়মিত মেথি ভেজানো জল অথবা মেথি চিবিয়ে খেয়ে থাকেন তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়।
মাসিক চক্র নিয়মিত রাখে: মেয়েদের ঋতুস্রাবের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি মেথির মধ্যে থাকা ডায়োসজেনিন উপাদান মাসিকের অন্যান্য সকল সমস্যার সমাধান করতেও কাজ করে। এই ডায়োসজেনিন ইস্ট্রোজেন এর মতই কাজ করে থাকে যার ফলে স্ট্রেস,মাথা ঘোরা কিংবা ঘুমের অভাব গুলো দূর হয় পাশাপাশি নারীদের মেনোপজ হওয়ার পর যে সকল সমস্যাগুলো দেখা দেয় সেগুলো দূর করতেও মেথির উপকারিতা রয়েছে।
হার্টের সুরক্ষা: মেথিতে রয়েছে ২৫ শতাংশ গ্যালাক্টোম্যানান যা ফাইবারের মতোই কাজ করে এবং শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতেও মেথির ব্যবহার করা যায়।
মুখের কালো দাগ দূর করতে: নিয়মিত মেথি চিবিয়ে খাওয়ার ফলে ত্বকের অথবা মুখের উপর অবাঞ্ছিত কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও যারা নিয়মিত মেথি চিবিয়ে খেয়ে থাকেন অথবা মেথি ভেজানো পানি খেয়ে থাকেন তাদের ত্বক সুন্দর রাখতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে এটি সাহায্য করে।
মেথি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়: মেথির মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো অতিরিক্ত চুল ঝরে যাওয়া কিংবা চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া দূর করতে সাহায্য করে। তাই চুল পড়া রোধ করতে এবং চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে মেথি ভেজানো পানি খেতে পারেন অথবা চুলে লাগালেও বেশ উপকারিতা পাওয়া যায়।
রক্তস্বল্পতা দূর করে: মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা আমাদের রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার মত সমস্যা গুলো দূর করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের প্রাকৃতিক ইনসুলিন উৎপাদন করতে সাহায্য করে এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক কার্যকরী। তাই যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত মেথি খাওয়ার চেষ্টা করুন এতে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ক্ষতিকারক টক্সিক পদার্থ দূর করে: মেথির মধ্যে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে এক জায়গায় এনে ঘাম এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেটের জ্বালাপোড়া ও বদ হজমের সমস্যা দূর করতেও মেথি ভেজানো পানি খাওয়া যায়।
কিডনির সুরক্ষায়: যারা নিয়মিত মেথি চিবিয়ে খান অথবা মেথি ভেজানো পানি খেয়ে থাকেন মেথি কিডনির যাবতীয় সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও মেথি ইউরিন পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনে।
বিপাকীয় হার বাড়াই: মেথির মধ্যে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং খাদ্যগুলোকে সঠিক মাত্রায় হজম করে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি সরবরাহে সাহায্য করে। মেথির মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের বিপাক হার বাড়াতে সাহায্য করে।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে: মেথির মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান ও গুনাগুন আমাদের রক্তের মধ্যে থাকা ইউরিক অ্যাসিড এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এনে রক্ত থেকে ক্ষতিকারক দূষিত পদার্থ গুলো বের করে দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ক্ষতি গুলোর হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে।
হাঁপানি সমস্যা: যাদের শ্বাস কষ্ট কিংবা হাঁপানের সমস্যা রয়েছে অথবা বুকে কফ জমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় তারা চাইলে নিয়মিত মেথি খেতে পারেন এতে দীর্ঘদিনের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হবে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে করে:মেথির মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল এর মাত্রা কমাতে এবং নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে শরীরের জন্য ভালো কোলেস্টেরল এইচ ডি এল এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
কৃমি দূর করে: যারা পেটে কৃমি সমস্যায় ভুগছেন বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয় তারা চাইলে কৃমির সমস্যা দূর করতে মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা মেথি ভে যেন পানি পান করতে পারেন। এতে দ্রুত কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বার্ধক্যের ছাপ কমায়: মেথির মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের তারুণ্য ধরে রাখতে এবং মুখে বার্ধককে ছাপ কমাতে সাহায্য করে। এর জন্য প্রতিদিন রাতে পরিমাণ মতো মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকালে অল্প পরিমাণ মুখে ব্যবহার করুন এবং বাকিটুকু খেয়ে নিলে ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ এবং বার্ধকের ছাপ কমে আসবে।
প্রদাহ ও ব্যথা নিরাময় করতে: মেথির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি এজিং উপাদান যেগুলো আমাদের প্রদাহ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং আর্থ্রাইটিস্ট এর মত রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও মেথির মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে।
হরমনের ভারসাম্য: মেথির মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো নারী ও পুরুষের হর মনের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিশেষ করে নারীদের মাসিক চক্রের যাবতীয় সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
জ্বর ও খুসখুসে কাশি দূর করে: জ্বর হলে মেথির সঙ্গে লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও মেথির মধ্যে থাকা মুসিলেজ নামক উপাদান গলার খুসখুসে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও মেথিতে রয়েছে সাইটোইস্ট্রোজেন যা নারীর দেহে প্রোকালটিন নামক হরমনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
খুশকি দূর করে: যাদের মাথার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক কিংবা মৃত কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাদের মাথায় অতিরিক্ত পরিমাণ খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। প্রতিদিন রাতের বেলা মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই মেথি ভেজানো যেন পানি পান করে এবং মেথি বেটে এর সঙ্গে অল্প পরিমাণ দই ব্যবহার করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিলে দ্রুত মাথার খুশকি এবং মৃত কোষগুলো দূর হয়।
সহজ সন্তান প্রসব: জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণ এর যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে মেথি। কিন্তু অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণ মেথি খাওয়া যাবেনা এতে গর্ভপাত বা প্রিম্যাচুয়ার ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই অবশ্যই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক মেথি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
মেথি খাওয়ার অপকারিতা
প্রিয় পাঠক এ তখন আমরা মেথি খাওয়ার সকল উপকারিতা ও মেথি খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানলাম। আর্টিকেলটির এই অংশ আমরা জানবো মেথি চিবিয়ে খাওয়ার ফলে কি কি ধরনের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকগুলো প্রকাশ পায় সেই সম্পর্কে।
১/অতিরিক্ত পরিমাণ মেথি খাওয়ার ফলে মেথি টেরাটোজেনিক সম্ভাবনার কারণে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করে। তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকরা মেথি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে বলেন।
২/মেথি গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে যেমন জরায়ুর প্রসারণ ও প্রস্রাবের সময় ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণ মেথি খাওয়ার ফলে এটি গর্ভাশয়ের সংকোচনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে যার কারণে প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি বা অকাল প্রস্রাব হতে পারে।
৩/অতিরিক্ত পরিমাণ মেথি খাওয়ার ফলে পেটে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার কারণে খাদ্য হজম প্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটে এবং পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা,পেটে ব্যথা অথবা ডায়রিয়া হতে পারে।
৪/মেথির গন্ধ অনেকেই পছন্দ করে না। কিন্তু স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য অনেকেই মেথি খেয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে মেথির অস্বস্তিকর গন্ধ আপনার শরীর থেকে বের হতে পারে।
৫/অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যাই মেথি খাওয়ার ফলে বমি হওয়া কিংবা বমি বমি ভাব অনুভব হতে পারে। কেননা মেথির স্বাদ ও গন্ধ সংবেদনশীল হওয়ার কারণে অনেকের ক্ষেত্রে এটা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৬/যাদের হাঁপানি কিংবা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ মেথি খাওয়ার পরিবর্তে অতিরিক্ত মেথি খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে করে আপনার হাঁপানি টান আসতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট বেশি হতে পারে।
৭/অতিরিক্ত পরিমাণ মেথি খাওয়ার ফলে অথবা মেথি জল পান করার ফলে পেটে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তাই যদি অতিরিক্ত মেথি খাওয়ার পর আপনার পেট ব্যথা কিংবা অতিরিক্ত ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত মেথি জল খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
৮/শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মেথি জল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। কেননা এতে উপকারিতার বদলে অপকারিতা বেশি প্রকাশ পায় বিশেষ করে মেথি জল যদি শিশুরা খেয়ে থাকে তাহলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্যঃচিবিয়ে মেথি খাওয়ার সকল উপকারিতা
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে মেথির যাবতীয় উপকারিতা অপকারিতা গুলো সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।
আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url