পালং শাকের সকল উপকারিতা ও অপকারিতা। বিস্তারিত জানুন
আপনি যদি নিয়মিত পালং শাক খেয়ে থাকেন কিংবা প্রতিদিন পালং শাক খাওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
আজকের এই আরটিকাটি পড়ার মাধ্যমে যে সকল বিষয়গুলো জানতে পারবেন তা হচ্ছে পালং শাকের উপকারিতা, পালং শাকের উপকারিতা, পালং শাকে কোন কোন ভিটামিন থাকে, পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা, পালং শাকে কি এলার্জি আছে এবং আরো জানতে পারবেন পালং শাকের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে। তাই সম্পূর্ণ বিষয়গুলো জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃপালং শাকের সকল উপকারিতা ও অপকারিতা
ভূমিকা
পালং শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে একটি। এদের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল যেগুলো আমাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করলে শরীরের সুস্থতা ও সবল রাখার জন্য কাজ করবে। এছাড়াও খাদ্য তালিকায় পালং শাক যুক্ত করলে বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পালং শাক খেতে যেমন মজা তেমনি চাকরির উপকারিতা রয়েছে অনেক। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে শরীরকে সুস্থ ও সরল রাখার জন্য নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে পালং শাক।
তাই আসছে শীতকালে পালং শাক খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনার পালং শাকের সকল উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সহ এর মধ্যে থাকা ভিটামিন এবং ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। পালং শাকের সকল উপকারিতা অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পালং শাকের উপকারিতা
পালং শাকের হয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের সুস্থ এবং শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করে। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা পালং শাকের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে: পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের রক্তচাপের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পালং শাক খেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এর উপকারিতা রয়েছে।
দেহের ওজন কমাতে: যারা ওজন কমাতে চান তাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন পালংশাক। পালং শাকের মধ্যে পুষ্টি চাহিদা বেশি এবং ক্যালরি কম থাকার কারণে অতিরিক্ত ওজনে ভুক্তভোগীদের খাদ্য তালিকায় পালং শাক যুক্ত করা যায়। চিকিৎসকদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকের মধ্যে মাত্র ৭ কিলো ক্যালরি রয়েছে যা শরীরের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: পালং শাকেট হয়েছে প্রচুর পরিমাণ আঁশ ও ফাইবার। যা পাকস্থলীর কার্যকারিতা বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে। তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে পছন্দের খাবারগুলো খেতে পারছেন না কিংবা খেতে ভয় পাচ্ছেন তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পালং শাক যুক্ত করুন।
চোখ ভালো রাখতে: পালং শাকের মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রার বিটাক্যারোটিন যা আমাদের চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমিয়ে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও পালং শাকের মধ্যে রয়েছে ফাইটো কেমিক্যাল যা আমাদের দৃষ্টির ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে: পালং শাকের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের বাইরের স্তরের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার ফলে অবাঞ্চিত ব্রণ ও বলিরেখা দাগ পড়া দূর হয়। যারা নিয়মিত পালং শাক খেয়ে থাকেন তাদের বার্ধক্যের ছাপ কমাতে এবং ত্বক নরম ও স্থিতিস্থাপক রাখতে পালং শাকের দারুন উপকারিতা রয়েছে।
পালং শাকের অপকারিতা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা পালং শাক খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু আপনি কি জানেন অতিরিক্ত পরিমাণ পালং শাক খাওয়ার ফলে এর কিছু অপকারিতাও প্রকাশ পাই। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা পালং শাকের বিভিন্ন ধরনের অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে: পালং শাকে উচ্চ মাত্রাই পুষ্টি ও ভিটামিন থাকলেও পালং শাকে রয়েছে অক্সালিক এসিড। এই অক্সালিক এসিড যদি কোন ব্যক্তির শরীরে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয় তাহলে অন্যান্য সকল প্রকার পুষ্টি ও ভিটামিন গুলো শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।
আপনি যদি নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণ পালং শাক খেয়ে যান তাহলে পালং শাকের মধ্যে থাকা অক্সালিক এসিড শরীরের মধ্যে জিংক,ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বিষক্রিয়াতা: পালং শাক অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো শরীরের ভেতরে বিষক্রিয়াতার সৃষ্টি করতে পারে।
পেটের সমস্যা: পালং শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার যা পাকস্থলীতে যদি উচ্চমাত্রায় জমা হয় তাহলে পেটে গ্যাস, ফোলা ভাব এবং ক্র্যাম্পের মতো সমস্যাগুলো সৃষ্টি হতে পারে।
এলার্জি হতে পারে: পালং শাক এর মধ্যে রয়েছে হিস্টামিন যা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। এটি শরীরের বিশেষ কিছু কোষে পাওয়া যায় যদি হিস্টামিনের পরিমাণ শরীরে অতিরিক্ত হয়ে যায় তাহলে অ্যালার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
কিডনিতে পাথর: অতিরিক্ত পরিমাণ পালং শাক খাওয়ার ফলে শরীরে অক্সালিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার কারণে কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর স্টোন তৈরি হয়। যা ধীরে ধীরে কিডনিতে পাথরের সমস্যা তৈরি করে। তাই কিডনিতে পাথরের সমস্যার ভুক্তভোগী না হতে চাইলে প্রতিদিন অল্প পরিমাণ পালং শাক খাওয়ার চেষ্টা করুন অতিরিক্ত খেলে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারে।
পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে
শীতকালীন সবজি গুলোর মধ্যে পালং শাক শরীরের সকল ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য উপযোগী একটি সবজি। প্রতি 100 গ্রাম পালং শাকের মধ্যে প্রোটিন রয়েছে ২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩ গ্রাম,আয়রন ১২ মিলিগ্রাম,পটাশিয়াম রয়েছে ২০৮ মিলিগ্রাম,নিকোটিনিক এসিড রয়েছে .৫ মিলিগ্রাম, অক্সালিক এসিড রয়েছে ৬৫৩ মিলিগ্রাম,ক্যালসিয়াম রয়েছে ৭৩ মিলিগ্রাম,পটাশিয়াম রয়েছে 209 মিলিগ্রাম।
এছাড়াও পালং শাকের মধ্যে আঁশের পরিমাণ রয়েছে .৭ গ্রাম। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ ৯৩০০ আইইউ, রিবোফ্লোবিন রয়েছে .০৮ মিলিগ্রাম,ভিটামিন সি রয়েছে ২৭ মিলিগ্রাম এবং থায়ামিন রয়েছে .০৩ মিলিগ্রাম। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে পালং শাকের মধ্যে।
এ সকল ভিটামিন ও খনিজ উপাদানগুলো আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত পালং শাক খেলে ভিটামিন এর এবং খনিজের চাহিদা পূরণ হয়।
পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা পালং শাকের মধ্যে থাকা ভিটামিন গুলো সম্পর্কে জানলাম। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা পালং শাকের মধ্যে থাকা আরও কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। উপকারিতা
দেহের ক্লান্তি ভাব দূর করতে সাহায্য করে: পালং শাকের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রায় আয়রন যা দেহের ভেতরে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পালং শাকের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি ও ই কে ত্বরান্বিত করে আমাদের শরীরকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে। যার কারণে নিয়মিত পালং শা খেলে ক্লান্তি ভাব দূর হয় এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।
প্রদাহ জনিত সমস্যা রোধ করে: পালং শাকের মধ্যে থাকা নিউ জেন্তিন নামক উপাদান শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ ও কমাতে সাহায্য করে বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যাথা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে: পালং শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফলিক এসিনেজা। যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উন্নতির কাজ করে থাকে। হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে এবং হৃদপিন্ডের কার্যক্রম উন্নত করতে সবচেয়ে সাশ্রয় ও সহজলভ্য পালং শাক আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং খনিজ উপাদান যা আমাদের রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে যার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে আসে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: পালং শাকের মধ্যে রয়েছে ১০ টিও বেশি ফ্ল্যাভোনয়েড নামক রোগ প্রতিরোধক উপাদান। এছাড়াও পালং শাকের মধ্যে থাকা পলি নিউট্রিয়ান্স শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি দিতে নিয়মিত পালং শাক খাওয়া উচিত।
এছাড়াও পালং শাকের মধ্যে থাকা ক্যারোটিন ও ক্লোরোফিল উপাদান ক্যান্সারে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: পালং শাকের রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার যা খাদ্যকে হজম করতে সাহায্য করে এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পালন শাক খাওয়া উচিত।
অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দূর করে: পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। যা আমাদের রক্তের মূল উপাদান লোহিত রক্তকণিকা কে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। যার কারণে এনিমিয়া ও রক্তস্বল্পতার মত সমস্যাগুলো দূর হয়।
গর্ভাবস্থায় পালং শাকের উপকারিতা: পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড এবং ভিটামিন বি ৬ যা গর্ভস্থ সন্তানের মস্তিষ্কের গঠন সঠিকভাবে তৈরি করতে সাহায্য করে।
ক্ষত সারিয়ে তোলে: পালং শাকের মধ্যে থাকা ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
কিডনিতে পাথরের সমস্যা দূর করে: যারা কিডনি সুস্থ রাখতে চান এবং শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিক পদার্থগুলো দূর করতে চান তারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পালং শাক যুক্ত করতে পারেন। এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং শরীরের মধ্যে জমে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে বাইরে বের করতে সাহায্য করবে।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা পালং শাক খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু আপনি কি জানেন অতিরিক্ত পরিমাণ পালন শাক খাওয়ার ফলে আপনার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতি বা অপকারিতা হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক পালং শাক খাওয়ার ফলে কি কি অপকারিতা বা ক্ষতি হতে পারে।
জয়েন্ট এর ব্যথা: পালং শাকে অক্সালিক এসিডের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে পিউরিন নামক এক ধরনের যৌগ। এই দুটি যৌগ যদি আপনার শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে জয়েন্টের ব্যথার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও ভোলা ভাব ও প্রদাহের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ এবং নিয়ম মেনে পালং শাক খাওয়া উচিত।
রক্ত পাতলা করে: পালং শাকির হয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন কে যা কিছু ওষুধের সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এন্টিকোয়াগুল্যান্ট ওষুধের সঙ্গে অতিরিক্ত পরিমাণ পালং শাক খাওয়ার ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও রক্ত জমাট বাঁধার অন্যান্য উপাদান গুলো কেউ প্রভাবিত করতে পারে।
রক্তের ব্যাধি: পালং শাকের মধ্যে রয়েছে নাইট্রেট যা শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে রক্তের বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আর্থ্রাইটিস কিংবা জয়েন্টে ব্যথার জন্য অন্যতম হিসেবে ধরা হয় নাইট্রেট উপাদান। তাই অতিরিক্ত পরিমাণ পালং শাক খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
টক্সিক তৈরি করে: পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অক্সালিক অ্যাসিড। এই উপাদানটি যদি শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ জমা হয় তাহলে শরীরে ক্ষতিকারক টক্সিক পদার্থ গুলোর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এই উপাদানটি শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজ শোষণে বাধা সৃষ্টি করে যার কারণে আমাদের ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে: পালং শাক অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে থাইরক্সিন হরমোন এর ক্ষরণ কমে যায় যার ফলে থাইরয়েডের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই থাইরয়েড এর মত কঠিন রোগ থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়া আজ থেকে বন্ধ করুন।
পালং শাকে কি এলার্জি আছে
এলার্জির সমস্যাগুলো তো আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু এলার্জির সমস্যা অনুভব করতে পারিনা। কিন্তু যে বা যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের খুব সচেতনভাবে চলাফেরা করতে হয়। অনেকের খাবারে এলার্জি থাকে আবার অনেকের ধুলোবালি থেকে এলার্জি হতে পারে। এলার্জির বিভিন্ন কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পালং শাক।
কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পালং শাক খাওয়ার ফলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। পালং শাকের মধ্যে এমন কিছু প্রোটিন রয়েছে যা পড়ার থেকে পাওয়া প্রোটিনের মত এবং এই পরাগ অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা পরাগ যখন গলা ও ফুসফুসের সংস্পর্শে আসে তখন অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া গুলো দেখা দেয়।
বিশেষ করে চোখ চুলকানি শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে অ্যানাফিল্যাক্সিস এর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এলার্জিতে আক্রান্ত সকল ব্যক্তিদের সব সময় এর জন্য এলার্জি প্রতিরোধক ইঞ্জেকশন কিংবা ট্যাবলেট রাখা উচিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পালং শাকে কি এলার্জি রয়েছে। জি হ্যাঁ পালং শাক খাওয়ার ফলে শরীরে এলার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো প্রকাশ পেতে পারে।
পালং শাকে রয়েছে হিস্টামিন নামক উপাদান যা শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় জমা হলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে দেখা যায়। যদিও এটি সবার ক্ষেত্রে হয় না যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা হতে পারে। কিন্তু পালং শাক থেকে এলার্জির প্রতিক্রিয়া প্রবল হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। তবুও সতর্ক হওয়া জরুরী।
তাই যাদের পালং শাক খাওয়ার ফলে এলার্জির লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তারা যথাসম্ভব পালং শাক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি হয় না এমন সকল খাবারগুলো খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এবং এলার্জির সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।
পালং শাকের জুসের উপকারিতা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা পালং শাক খাওয়া বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানলাম। এছাড়াও আমরা পালং শাক খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা হয় কিনা সে বিষয়ে সম্পর্কেও জেনেছি। আর্টিকেলটির এই অংশে আমরা পালং শাকের জুস খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
সর্দি-কাশি দূর করে: প্রতিদিন পালং শাক খাওয়ার সময় যদি এর সাথে অল্প পরিমাণ মধু ও কালো গোল মরিচ এর গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে সর্দি-কাশির মতো সমস্যাগুলো হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়: যারা দীর্ঘদিন ধরে পেটে গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পালং শাকের মধ্যে সিলারি মিশিয়ে পান করতে পারলে পেটের গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর হবে।
কৃমি দূর করতে: যারা পেটে কৃমি সমস্যায় ভুগছেন এবং কৃমির কারণে অস্বস্তি বোধ হয় তারা নিয়মিত সকালবেলা খালিপেটে পালং শাকের জুস খেতে পারলে পেটের কৃমি পেটে মারা যায়।
হাড় মজবুত করে: পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার যা আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে এবং পালং শাকের মধ্যে থাকে ক্যালসিয়াম হার মজবুত করতে কাজ করে।
যৌবন ধরে রাখে: পালং শাকের জুসের হয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন যা আমাদের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।
ক্রনিক রোগের ফাঁদ কমায়: পরিপাক প্রক্রিয়া চলার সময় শরীরে কিছু ক্ষতিকারক উপাদান বা ফ্রি রেডিকেল এর উৎপত্তি হতে দেখা যায়। যেগুলো পরবর্তীতে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। শরীরের এই ক্ষতিকারক উপাদান বা ফ্রি রেডিকেলগুলো থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত পালং শাকের জুস খেতে পারেন।
পালং শাকের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এই ফ্রিরেডিকেল গুলোকে শরীর থেকে বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী রোগের খপ্পর থেকে বাঁচতে নিয়মিত খালি পেটে পালং শাকের জুস পান করুন।
আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে: পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অতিরিক্ত ক্লান্তি অলসতা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত পালং শাক খাওয়া উচিত এর মধ্যে থাকা আয়রন এগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্যঃপালং শাকের সকল উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার কোন উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত বা মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন।
এরকম স্বাস্থ্য উপকারিতার আরও বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। সকলে ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল ব্লগ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url